দলীয় শৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে কেউ নয়: বাম-বিজেপি অরাজকতা স্মরণ করিয়ে তফাৎ দেখালেন অভিষেক

0
2

রাজনৈতিক দল বড় হলে সেখানে ভিন্ন মত তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু দলের মধ্যে যা ইচ্ছে তাই করে বেড়ালে তৃণমূল যে কাউকে রেয়াত করবে না তা ফের একবার স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। এমনকি দলের একজন বুথস্তরের কর্মীকে যে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয় সেই শৃঙ্খলাই (discipline) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককেও তৃণমূলে মেনে চলতে হয়, স্মরণ করিয়ে দিলেন তিনি। আর সেখানেই তৃণমূলের সঙ্গে অন্য রাজনৈতিক দলগুলির পার্থক্য বলে দাবি তাঁর। সেই সঙ্গে যাঁরা মানুষের জন্য কাজ করার নামে নিজেদের আখের গোছাবেন, তাঁদের জন্য ভবিষ্যতেও যে তৃণমূলের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে, আরও একবার সেই বার্তা দিয়ে দেন।

দলের পদাধিকারীদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও শৃঙ্খলার প্রশ্নে অন্য যে কোনও রাজনৈতিক দলের থেকে কতটা এগিয়ে তৃণমূল তা বলতে গিয়ে অভিষেক বলেন, একটা রাজনৈতিক দল বড় হলে মতভেদের ব্যাপারগুলো থাকে। একটা বাড়িতে ছয়জন থাকলে চারজনের মধ্যে ঝামেলা থাকে। আর এটা একটা দল যার লক্ষের উপর পদাধিকারী (portfolio holder)। তার মানে এই না আমি যা ইচ্ছা করে বেড়াবো। যদি কেউ দলকে দুর্বল করতে চায় তার বিরুদ্ধে বিগত দিনেও দলীয় শৃঙ্খলা কমিটি (disciplinary committee) ব্যবস্থা নিয়েছে, আগামী দিনেও নেবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বলেছেন কাউকে রেয়াত করবে না।

এই প্রসঙ্গেই অন্যদলগুলির সঙ্গে তুলনা টেনে অভিষেক বলেন, লখিমপুর খেরিতে (Lakhimpur Kheri) আন্দোলনরত কৃষকদের উপর গাড়ি চালিয়ে গিয়েছিল অজয় তেনি মিশ্রর ছেলে। বিজেপি ব্যবস্থা নিয়েছে? সিপিএমের (CPIM) আমলে ধানতলা বানতলা। কোনও পদক্ষেপ নিয়েছে? প্রশ্ন করে কে? একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে পুলিশ প্রশাসন, দলের নেতৃত্ব কী ব্যবস্থা নিচ্ছে সেটাই শেষ কথা বলে। তৃণমূলের একজন বুথ স্তরের কর্মীকে যে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়, আমাকেও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সেই শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। এটা তৃণমূলেই সম্ভব।

এই প্রসঙ্গেই তিনি মালদহে দুলাল সরকার হত্যার ঘটনা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মালদার দুলাল সরকারের ঘটনা গ্রেফতার তৃণমূলের পদাধিকারী। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী। সেখানে গ্রেফতার হয়েছে তৃণমূলের পদাধিকারী। কোনওদিন দেখাতে পারবেন ৩৪ বছর সিপিএমের আমলে কোনও সিপিএমের (CPIM) নেতা গ্রেফতার হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে (Uttarpradesh) ২০১৭ সাল থেকে বিজেপির ক্ষমতায় বিজেপির কোনও নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। সেই সঙ্গে অভিষেক উল্লেখ করেন আরাবুল ইসলাম, শম্ভুনাথ কাউ, শান্তনু সেনের কথাও। অভিষেক জানান, আরাবুল ইসলাম (Arabul Islam) বিগত দিনেও সাসপেন্ড হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। একের পর এক আরাবুল ইসলাম, শম্ভুনাথ কাউ গ্রেফতারি। আবার দল থেকে সাসপেন্ড হওয়া শান্তনু সেন চিকিৎসক হিসাবে কী করবেন সেই প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, শান্তনু সেন (Santanu Sen) নিজে একজন চিকিৎসক। রাজনৈতিক দল হিসাবে তৃণমূল তাঁকে সাসপেন্ড করলে তিনি অন্য পাঁচটা কাজ করতে পারেন। দলনেত্রীর সিদ্ধান্ত শিরোধার্য। কিন্তু শান্তনু সেন কোন ক্যাম্পের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, পাড়ায় কার চিকিৎসা করবেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।

তবে দলে থেকে কোনও রকম বেনিয়ম যে বরদাস্ত করা হবে না তা আরও একবার স্পষ্ট করে দিয়ে অভিষেকের (Abhishek Banerjee) দাবি, মনে রাখতে হবে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। কিছু লোক আছে ধরাকে সরা জ্ঞান করে। আমার থেকে বড় কেউকেটা কেউ নেই, যারা ভাবে তাদের জন্য আগামী দিন তৃণমূলের দরজা বন্ধ থাকবে। যারা ভাবছে এলাকা দখল করে মৌরুশি পাট্টায় থাকব তাদের কিন্তু কপালে বিপদ আছে।

তৃণমূলের শৃঙ্খলা (TMC disciplinary committee) এমনভাবে তৈরি যেখানে প্রতিহিংসা পরায়ণতারও জায়গা নেই বলে স্পষ্ট করে দেন অভিষেক। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বয়কট, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও এই রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন। তিনি এই রাজনীতিতে বিশ্বাসী হলে তাহলে আজ যে সংবাদ মাধ্যমে যারা তৃণমূলের বিরোধিতা করেছে, তারা আজ সরকারি বিজ্ঞাপণ পাচ্ছে। তারা তো পেত না। আমরা বয়কটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। বয়কটের (boycott) রাজনীতি তৃণমূল করে না। এই রাজ্য সরকার সবার। আমরা বয়কটের রাজনীতি করব কেন? আর জি করের ঘটনার পরে উপনির্বাচন হয়েছে, মানুষ তো প্রমাণ করে দিয়েছে – কে ঠিক কে ভুল।