“সিপিএমের (CPIM) জমানায় মৃত্যুর হাত থেকে অনেকবার বেঁচে এসেছি। এমএ-র সময় একবছর লুকিয়ে লুকিয়ে ক্লাস করেছি। এলএলবিও লুকিয়ে ক্লাস করেছি। সেই সময় আমার পরিচয় কেউ জানত না।“ বুধবার ধনধান্য স্টেডিয়ামে স্টুডেন্ট উইকের (Student’s Week) সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ছোটদের নিজের ছাত্রজীবনের কাহিনি শোনান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। জানান, তাঁর নাম, জন্ম তারিখ কোনওটাই পছন্দ নয়। মমতার কথায়, “আমি এখনও জন্মাইনি, যেদিন মৃত্যু হবে সেদিন আমি জন্মাব।”
এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্কুলের শিক্ষিকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের নাম আজও মনে আছে তাঁর। মমতার কথায়, “এই দিনগুলি কখনও ভুলি না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি খুব কম। সেই সময় রাজনীতি করতাম। সিপিএমের সময়ে মৃত্যুর হাত থেকে অনেকবার বেঁচে এসেছি। এমএ-এর সময়একবছর লুকিয়ে লুকিয়ে ক্লাস করেছি। এলএলবিও লুকিয়ে ক্লাস করেছি। সেই সময় আমার পরিচয় কেউ জানত না। ভয়ে ভয়ে যেতাম, কারণ আমার সারা শরীর- পা থেকে মাথা পর্যন্ত এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে সিপিএমের হাতে পিটুনি খাইনি। আমি একটা জীবন্ত লাশের মতো।“
এর পরেই নিজের নাম ও জন্ম তারিখ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সরকারিভাবে ১৯৫৫ সালের ৫ জানুয়ারি তাঁর জন্ম। এই বিষয়ে এদিন মমতা বলেন, “ঘটনাটা জানানোর পর থেকে আসলটা জানার অনেক চেষ্টাও করেছি। আমার ‘একান্তে’ বইতে আমি এগুলো লিখেওছি। যতটা লেখা সম্ভব।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর দাদা। তাঁকে সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন মমতা। বলেন, “জন্মদিনের দিনটা আমার মোটেই পছন্দকর নয়। ওটা সার্টিফিকেটের বয়স। ওটা বাবা-মা করে দিয়ে গেছে। আমি জানতামও না। যখন কলেজে পড়ি তখন দাদা আমাকে একদিন বলল- তুই কি জানিস বাবা কী করে তোর বয়স দিয়েছে? সার্টিফিকেটে তোর আর আমার বয়সে ৬ মাসের ডিফারেন্স!” এর পরেই মমতা প্রশ্ন করেন, “কীভাবে এটা হয়েছে জানেন?” মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং জানান, “দাদা বলল-বাবা স্কুলে গেল, বাবার একটা বন্ধু ছিল, তাকে বলল, তুমি একটা বয়স বসিয়ে দাও। তার তো কোনও দোষ নেই! বাবা বলেছে, সে বসিয়ে দিয়েছে। আগেকার দিনে এটা একটা প্রবেলম ছিল, বাড়িতে যারা জন্মেছি, হোম ডেলিভারি, আসল বয়সটা লুকিয়ে থাকে, সার্টিফিকেটের বয়সটা মানুষ ধরে নেয়।”
আরও খবর: বাংলার গর্ব: সন্তোষ-জয়ী ফুটবলারদের চাকরি দিয়ে কথা রাখলেন মমতা
এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী জানান এই জন্মদিন তাঁর পছন্দ নয়। তাঁর কথায়, “সবাই আমার জন্মদিন জন্মদিন করে, কিন্তু আমার এই জন্মদিন ভাল লাগে না। কারণ, আমরা তো সবাই হোম ডেলিভারি। নামও নিজে দিইনি, পদবিও নিজে দিইনি, বয়সও নিজে দিইনি!”
মমতা (Mamata Banerjee) বলেন, ছোট্টবেলার ঘটনা, ছোটদের সামনেই বলা উচিত। সেই কারণে এদিন নিজের দাদাকে সাক্ষী রেখেই ছোটবেলার কথা বলেন নস্টালজিক মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “বাবা যখন মারা যায় তখন আমি খুবই ছোট। অনেক কষ্ট করে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। ছোট থেকেই সংসারের হাল ধরেছিলাম।” তাঁর কথায়, “আমি মনে করি, যেদিন পৃথিবী থেকে বিদায় নেব সেদিন আমার আসল জন্ম হবে!”
–
–
–
–
–