
‘ মন্দ বলে লোকে , বলুক না
হিংসে করে জ্বলে , জ্বলুক না’
মন্দ লোকে বলে , ডাকওয়ার্থ – লুইস পদ্ধতি নাকি অনেকটা গণতান্ত্রিক-কেন্দ্রিকতা-র মতো । গণতন্ত্র বোঝা যায় , কেন্দ্রিকতাও বোঝা যায় , কিন্তু দুটো মিলে যা হয় তা নাকি স্বয়ং ভগবানও বুঝতে পারেন না !
একবার এক বিখ্যাত ক্রিকেটারের কাছে এই ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি নিয়ে জানতে চান বেশ কয়েকজন সাংবাদিক । জবাবে সেই ক্রিকেটার বলেন , ডাকওয়ার্থ তাঁর জানা , লুইসও জানা , কিন্তু এই দুইয়ে মিলে ঠিক কী হয় তাঁর জানা নেই । তবে হ্যাঁ , তাঁর পরিচিত আরেক খ্যাতনামা ক্রিকেটার নাকি খুব ভালো বলতে পারবেন এই ব্যাপারটা । এই কথা শুনে সাংবাদিকেরা সঙ্গে সঙ্গে ছোটেন সেই খ্যাতনামার বাড়িতে । গিয়ে দেখেন বিরাট একটা তালা ঝুলছে সেই বাড়ির দরজায় । তাঁর বাড়িতে সাংবাদিকদের আসার খবর সম্ভবত তিনি অনুমান করেছিলেন । তো , এই হইলো গিয়া ডাকওয়ার্থ লুইস নিয়ম ! কেউ জানে না এটা খায় না মাথায় দেয় । দুর্জনেরা যা বলে বলুক । কিন্তু ব্যাপারটা তো একটু কালটিভেট করতে হয় । এটা ঠিক কতটা জটিল তা নিয়ে একটু তদন্ত করা তো যেতেই পারে ক্রিকেটপ্রেমীদের কথা ভেবে ।
১৯৯২ সালে ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের সময় পরিসংখ্যানবিদ ফ্রাঙ্ক ডাকওয়ার্থ এবং টনি লুইস মিলে একটি পদ্ধতি তৈরি করেন , যা বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচগুলির মিমাংসায় সহায়ক হবে । মূল কথা হলো , ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতি ( ডি এল এস মেথড ) একটি গাণিতিক ফর্মুলা , যা আবহাওয়ার কারণে বিঘ্নিত সীমিত ওভারের ক্রিকেট ম্যাচে দ্বিতীয় ব্যাট করা দলের জন্য লক্ষ্য ( স্কোর ) নির্ধারণ করে দেয় । পরবর্তীতে অস্ট্রেলীয় অধ্যাপক স্টিভেন স্টার্ন এই পদ্ধতির আরও সংস্কার করেন । তাই ২০১৪ সালে এই পদ্ধতির নব নামকরণ হয় ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন মেথড বা পদ্ধতি ।
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বৃষ্টিবিঘ্নিত সেমিফাইনালে একেবারে জেতা ম্যাচটি হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা । গোটা বিশ্ব হতবাক হয়ে যায় একটি সিদ্ধান্তে এবং প্রচুর সমালোচনা হয় । ধিক্কার জানানো হয় এই ডি এল এস মেথডকে । শুরু হয় বিতর্ক । ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এক পর্যায়ে মাত্র ১ বলে ২১ রান করার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় । অথচ ১ বলের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৬ রান তোলা যায় । নির্দিষ্ট সময়ে খেলা শেষ হওয়ার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ১৩ বলে ২২ রানের । কিন্তু কিছুক্ষণের বৃষ্টির ফলে তাদের ১ বলে ২১ রান করার অসম্ভব একটা লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় , যা ক্রিকেটবিশ্বে স্থায়ী এক বিতর্কের সূত্রপাত ঘটায় । এখান থেকেই নতুন ভাবনা আসে এবং বিতর্কের অবসানের লক্ষ্যে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতির উদ্ভাবন হয় ।
২০০৮ সালে ভারত বনাম ইংল্যান্ড একদিনের ক্রিকেট ম্যাচে প্রথম ইনিংসে বৃষ্টির ফলে দু’দফা খেলা বন্ধ থাকে। এই খেলায় ভারত ২২ ওভারে ৪ উইকেটে ১৬৬ রান করে । পরে ডিএলএস মেথডে ইংল্যান্ডকে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় ২২ ওভারে ১৯৮ রান । ২০১১ সালে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে প্রথম ইনিংসে দু’বার হানা দেয় বৃষ্টি । ফলে ৫০ ওভারের ম্যাচটিকে নিয়ে আসা হয় ৪৬ ওভারে । দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৫০ রান করে । পরে আবহাওয়ার কারণে বিঘ্নিত হয় ম্যাচ এবং ডিএলএস মেথড অনুসরণ করা হয় । ভারতকে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় ২৬৮ রানের । ভারত এই ম্যাচে ২৩৪ রানে অলআউট হয়ে যায় এবং ৩৪ রানে ম্যাচটি হেরে যায় ।
এখন টি-২০ ম্যাচেও এই ডিএলএস মেথডের আশ্রয় নেওয়া হয় আবহাওয়ার কারণে ম্যাচ বিঘ্নিত হলে ।
এই পদ্ধতি আসার আগে বৃষ্টি অথবা আবহাওয়ার কারণে বিঘ্নিত ম্যাচগুলির ন্যায্য মিমাংসার জন্য ক্রিকেট সংগঠকেরা দুটি সাধারণ পন্থা অনুসরণ করতেন । সেগুলো হলো , এক , গড় রানরেট পদ্ধতি এবং দুই , সর্বাধিক উৎপাদনশীল ওভার পদ্ধতি । এ দুই পদ্ধতির কোনোটাই ত্রুটিমুক্ত ছিল না । ম্যাচের যথাযথ ভারসাম্য রক্ষা তথা ন্যায্য মিমাংসার ক্ষেত্রে এই দুটি পদ্ধতি নিয়ে সকলেই সন্দিহান থাকতেন । তাই নিয়ে আসা হয় ডিএলএস মেথড । তবু বিতর্ক রয়েই গেছে । অনেকেই ভাবছেন , ডিএলএস বাস্তবসম্মত কোনো পদ্ধতি নয় , এই পদ্ধতি যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ এবং এতে ন্যায়বিচার ব্যাহত হচ্ছে।
সংক্ষেপে এই নিয়মটা হলো এইরকম :
Team B par Score = Team A Score × ( Team B resources / Team A resources )
আরও পড়ুন- ব্যস্ত রাস্তায় সরজেমিনে নজর! মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পথে পরিবহন মন্ত্রী
_
_
_
_