গাড়িতে লাল-নীল আলো, হুটার! অশালীন আচারণের সঙ্গে আইনও ভেঙেছেন বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ!

0
2

রাজ্যের মন্ত্রীর সঙ্গে চূড়ান্ত অভব্যতাই নয়, আইনও ভেঙেছেন বিজেপি (BJP) সাংসদ তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Abhijit Ganguli)। শুক্রবার রাতে লাল-নীল বাতি লাগানো গাড়ি নিয়ে দ্বিতীয় হুগলি সেতু দিয়ে তীব্র গতিতে ছুটে চলেছিল অভিজিতের গাড়ি। একই পথে যাওয়ার সময় তার প্রতিবাদ করেন রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriya)। অভিযোগ, অকথ্য ভাষায় বাবুলকে আক্রমণ করেন অভিজিৎ। শুধু তাই নয়, সামনে আসছে বিজেপি সাংসদের আইনভাঙার কথাও। তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee) জানান, গাড়িতে লাল-নীল বিকন আলো লাগাতে পারেন না কোনও সাংসদ। কটাক্ষ করে তৃণমূলের (TMC) রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) বলেন, উনি যে ‘প্রাক্তন’ বিচারপতি হয়ে গিয়েছেন, সেটা ভুলে গিয়েছেন অভিজিৎ গঙ্গাপাধ্যায়।

কী হয়েছিল শুক্রবার রাতে?
রাত ৯টা নাগাদ প্রচণ্ড গতিতে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর উপর দিয়ে যাচ্ছিল তমলুকের বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গাড়িতে ছিল বিকন লাইট। হুটারও বাজানো হচ্ছিল। একই সময়ে নিজেই গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। সাংসদের গাড়ির বেলাগাম গতি নিয়ে আপত্তি করেন বাবুল। অভিযোগ, অভিজিতের গাড়িতে একটি স্কুটারের ধাক্কা লাগার উপক্রম হয়। এই গতি নিয়ে বাবুলের আপত্তি শুনেই তাঁকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেন বিজেপি সাংসদ। বাবুলের গাড়িকে (Car) ওভারটেক করে রীতিমতো একপাশে চেপে দিতে চান বলেও অভিযোগ। ব্রিজের উপরেই সেই গাড়ি থামান বাবুল। নীলবাতি লাগানো সেই গাড়ি থামিয়ে মন্ত্রী দেখেন, পিছনের আসনে বসে রয়েছেন বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ। অভিযোগ, সেই সময় আচমকা পিছন থেকে ছাপার অযোগ্য ভাষায় বাবুলকে আক্রমণ করেন প্রাক্তন বিচারপতি। বাবুল তাঁকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেন, বিপজ্জনক গতিতে চলছিল গাড়িটি। ট্রাফিকের যে স্পিড লিমিট রয়েছে, তা মানছেন না সাংসদ। শুধু তাই নয়, নিয়ম না মেনে নীল রঙের আলো ব‌্যবহার করছেন, যা আইন বিরুদ্ধ। এই শুনে আরও খেপে যান বিজেপি সাংসদ। বাবুলের পরিবার তুলে অকথ্য ভাষা ব‌্যবহার করেন বলেও অভিযোগ। দুই নেতার বচসায় স্থানীয় মানুষজন ও অন্যান্য গাড়ির যাত্রীদের ভিড় জমে যায়। সাংসদকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বলেন বাবুল। অভিজিতের ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হন স্থানীয় মানুষও।

এই বিষয় নিয়ে শনিবার, সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)  জানান, আইন ভেঙেছেন বিজেপি সাংসদ। গাড়িতে এই ধরনের লাল-নীল বিকন আলো লাগাতে পারেন না কোনও সাংসদ। এমনকী, সাংসদের গাড়িতে লাল আলোও লাগানো যায় না। এই বিষয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ হয়েছে। তাছাড়া সাংসদের গাড়িতে হুটারও বাজানোর আইন নেই। রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতেই হুটার থাকার নিয়ম রয়েছে। এর পরেই কল্যাণ বলেন, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কী ধরনের অশ্রাব্য, অশালীন ভাষা ব্যবহার করতে পারেন, সেই বিষয়ে তাঁর সম্যক ধারনা আছে। একাধিকবার সংসদে সেই নমুনা তিনি দেখেছেন।

যখন বিচারপতি ছিলেন, তখন এজলাসে বসেও রাজনৈতিক নেতার মতো মন্তব্য করতেন অভিজিৎ-এই অভিযোগ ছিল শাসকদলের। তাঁর কুকথায় অতিষ্ঠ ও অসন্তুষ্ট হন বর্ষীয়ান আইজীবীরা। প্রাক্তন হওয়ার পরেও সেই অভ্যাস ছাড়তে পারেননি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়- মত রাজনৈতিক মহলের। এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ জানান, হুগলি সেতুর ঘটনার ভিডিও তিনিও দেখেছেন। সেটা দেখে তাঁর মনে হয়নি বাবুল সুপ্রিয় কোনও অন্যায় করেছেন। উল্টে বিজেপি সাংসদ যে ভাষায় কথা বলেছেন তা কোনও মতেই গ্রহণ যোগ্য নয়। এই পরেই কুণালের মোক্ষম খোঁচা- অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মনে রাখা উচিৎ তিনি এখন প্রাক্তন বিচারপতি। সুতরাং, তিনি খারাপ কথা বললে, সবাই হজম করবে না। এই ‘প্রাক্তন’ শব্দটার উপর তাঁর জোর দেওয়া উচিৎ বলে মত তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের।

এদিন শুক্রবার অভিজিৎ-বাবুল বচসার জেরে প্রায় ১৫-২০ মিনিট দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে যান চলাচল আংশিক ব্যাহত হয়। এই অভিযোগে, শনিবার রাজ্যের মন্ত্রী ও বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে ইমেল মারফৎ পুলিশ এবং হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটে অভিযোগ দায়ের করলেন সমাজকর্মী প্রতাপ বসু। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ সঠিক পদক্ষেপ করেনি। প্রভাবশালী হওয়ায় দু-জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আইনের চোখে সবাই সমান। পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না করলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন ওই সমাজকর্মী।