কয়েকদিন আগেই আদালতের নির্দেশ মেনে নিয়োগ মামলার তদন্ত সংক্রান্ত তথ্য চার্জশিট আকারে জমা দিয়েছে সিবিআই। সেই চার্জশিটে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে সিবিআই। তাদের দাবি, ‘অযোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকার উপর বিভিন্ন নির্দেশমূলক মন্তব্য নিজে লিখে দিতেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। সিবিআই জানিয়েছে, বিকাশ ভবনে তল্লাশি চালিয়ে ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের নামের তালিকা উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানেই পার্থের হাতের লেখা পাওয়া গিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। যদিও সেই হাতের লেখা সিবিআই বাজেয়াপ্ত করতে পারেনি। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে পার্থর ‘হাতে লেখা’ নির্দেশের ‘অনুলিখন’।
সিবিআই চার্জশিটে জানিয়েছে, স্বয়ং পার্থের কাছ থেকে ৩২১ জন প্রার্থীর সুপারিশ গিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে। পার্থের সুপারিশ করা নামের তালিকার ‘হার্ড কপি’ এবং সিডি গিয়েছিল বিকাশ ভবনে। পার্থের ওএসডি প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ওই তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছিল।সিবিআইয়ের দাবি, এক এক জন প্রার্থীর নামের ক্ষেত্রে এক এক রকম মন্তব্য লিখে দিতেন পার্থ। কোনও নামের উপরে লিখতেন ‘একে নিতেই হবে’, কোনও নামের উপরে লিখতেন ‘প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলে নিতে হবে’। প্রার্থীদের ক্ষেত্রে জেলার নামও উল্লেখ করে দিতেন পার্থ। কোথাও লিখতেন ‘পুরুলিয়া’, কোথাও ‘বাঁকুড়া’। কোনও কোনও প্রার্থীর নামের পাশে আবার ‘ভিভিআই’ লিখে দেওয়া হত!
সিবিআই উল্লেখ করেছে, বিকাশ ভবনে স্কুলশিক্ষা দফতরের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর এক মহিলা পার্থের হাতের লেখা থেকে সেই সব মন্তব্য অন্য একটি কাগজে নকল করতেন। সিডির সঙ্গে সেই অনুলিখন পাঠিয়ে দেওয়া হত নিয়োগ মামলায় অভিযুক্ত বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের কাছে। সে সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদে ছিলেন মানিক। সুপারিশের ওই ৩২১ জন চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে ১৩৪ জন ২০১৪ সালের টেটের মাধ্যমে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছে সিবিআই। তবে পার্থর হাতে লেখা মন্তব্যের কাগজ উদ্ধার করা যায়নি। অনুলিখনের পরেই তা আবার পার্থের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হত বলে দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। একাধিক সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই এই তথ্য জানতে পেরেছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের জুন মাসে প্রাথমিক মামলার তদন্তে বিকাশ ভবনে হানা দেয় সিবিআই। সেখানকার গুদাম থেকে উদ্ধার করা হয় চাকরিপ্রার্থীদের নামের একটি তালিকা। ১৯ পাতার চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, ওই তালিকায় ৩২৪ জন অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীর নাম ছিল। পরে তালিকা খতিয়ে দেখা যায়, আসলে সেখানে প্রার্থীসংখ্যা ৩২১। এদের প্রত্যেকের নাম প্রাথমিক স্কুলে চাকরির জন্য রাজনৈতিক প্রভাবশালী কোনও না কোনও ব্যক্তি সুপারিশ করেছিলেন। তালিকায় প্রার্থীদের নাম এবং রোল নম্বরের পাশাপাশি সেই প্রভাবশালী ব্যক্তির নামও উল্লেখ করা ছিল বলে দাবি সিবিআইয়ের। তাতেই লেখা থাকত পার্থর এই টুকরো টুকরো মন্তব্য। সিবিআইয়ের দাবি, পার্থ নিজের হাতেই ওই সব মন্তব্য লিখতেন।
নিয়োগ মামলায় ২০২২ সালে পার্থকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে প্রাথমিক মামলায় গত বছরের অক্টোবরে তাকে গ্রেফতার করে সিবিআই।জানা গিয়েছে, এই মামলায় সিবিআই যে চার্জশিট জমা দিয়েছে, তার ছত্রে ছত্রে রয়েছে পার্থ এবং মানিকের নাম। অভিযোগ, ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাঁদের চাকরি পাইয়ে দিতেন পার্থ-মানিকেরা।
–
–
–
–
–
–