নেত্রী ও শহিদের আত্মত্যাগকে সম্মান করুন শ্রদ্ধা জানান

0
3

ফিরহাদ হাকিম

জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চার দশকের লড়াই ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস আজ এখানে পৌঁছেছে। আমরা যখন মমতাদির কংগ্রেস এবং পরে তৃণমূল কংগ্রেস করতে শুরু করি, তখন ভাবতেই পারিনি রাজ্যে সিপিএমের (CPIM) অপশাসনের অবসান হবে। আমরা বিধায়ক-মন্ত্রী-সাংসদ হব, এটা স্বপ্নে ছিল না। তখন দিন-রাত এক করে দিদির নেতৃত্বে সিপিএমের অত্যাচার এবং অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে গিয়েছি। দল করতে গিয়ে সেই সময় বহু সহকর্মীর প্রাণ গিয়েছে। মূলত তৃণমূল কংগ্রেস আজ যেখানে পৌঁছেছে, তার নেপথ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) লড়াই-সংগ্রাম এবং প্রবল আত্মত্যাগের পাশাপাশি অজস্র দলীয় কর্মীর আত্মত্যাগ এবং রক্তক্ষয়ী পরিশ্রমের অবদান রয়েছে। সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষিদের জন্য টানা ২৬ দিনের অনশন নেত্রী তথা তৃণমূলকে গোটা বিশ্বে জমি বাঁচানোর লড়াইয়ে নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। আজ দল ২৭ বছর পেরিয়ে এল, কিন্তু এর পিছনে দিদির সঙ্গে অজস্র শহিদের আত্মত্যাগই মূল শক্তি হয়ে আছে।

সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম থেকে শুরু করে নেতাই তথা জঙ্গলমহল ঘিরে তৃণমূল নেত্রীর যে লড়াই তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ঠিকই কিন্তু আমরা চোখের সামনে দেখেছি, সিপিএম কীভাবে দিদিকে খুন করে দিতে চেয়েছে। বারেবারে তাঁর উপর প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে। হাজরা মোড়ে লালু আলম থেকে শুরু করে সিঙ্গুরে (Singur) বিডিও অফিসে রাতের অন্ধকারে পুলিশ বন্দুকের বাঁট দিয়ে গুঁতিয়ে তৃণমূল নেত্রীকে প্রাণে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। সেদিন ঈশ্বর সহায় ছিলেন বলে বেঁচে ফিরেছেন তিনি। মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত দিদির শরীরের এমন কোনও অংশ নেই, যেখানে সিপিএমের অত্যাচার-আঘাত লাগেনি। এই সেদিনও ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে দিদির পায়ে আঘাত করে চেষ্টা হয়েছিল আরও একবার তাঁকে দমিয়ে দেওয়ার। কিন্তু তৃণমূল বিরোধী অপশক্তি পারেনি বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একবিন্দু থামিয়ে দিতে। উল্টে তিনি আরও জেদ নিয়ে পায়ে প্লাস্টার অবস্থায় বাংলার মানুষের জন্য কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে গিয়েছেন। মানুষ তাই আগের চেয়েও ২০২১ সালে অনেক বেশি ভোটের ব্যবধানে জননেত্রীকে রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় বসিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, মাস চারেক আগে আরজি কর-কাণ্ডের মতো একটা জঘন্যতম ঘটনা নিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী প্রথম ঘণ্টা থেকেই নিন্দার পাশাপাশি ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছিলেন। অথচ বাম ও অতিবাম গেরুয়া শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস তথা জননেত্রীকে ব্যক্তি কুৎসায় আক্রমণ করেছে। বাইরে থেকে অপশক্তি গভীর চক্রান্ত করে বারেবারে চেষ্টা করেছে মা-মাটি-মানুষ সরকারের অন্যতম সেরা পরিকাঠামো এবং পরিষেবা স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে ধ্বংস করে দিতে কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী একক নেতৃত্বে লক্ষ লক্ষ কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে সেই চক্রান্ত ভেস্তে দিয়েছেন। জয় হয়েছে মা-মাটি-মানুষের। আর তাই লোকসভা নির্বাচনে ২৯টি আসনের পর আরজি কর- কাণ্ডকে ইস্যু করে উপনির্বাচনে ৬টি আসনেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা। ডাক্তারদের আন্দোলনকে যে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ধৈর্য সহকারে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন এবং ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে হাজার হাজার অসহায় গরিব রোগীর পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, তা গোটা ভারতে বিরল। এটা শুধুমাত্র তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষেই সম্ভব বলে স্বীকার করেছে রাজনৈতিক মহল।

দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আজ বহু দলীয় কর্মী এবং নেতা নানা কর্মসূচি পালন করছেন কিন্তু কেউ কি গত তিন দশকে যে সমস্ত কর্মীর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে তাঁদের কথা মনে রাখছেন? সমস্ত তৃণমূল কর্মীর কাছে আমার একটাই অনুরোধ, দল ক্ষমতায় আছে বলে আমরা অনেকেই আজ নিজেদের জাহির করছি। কিন্তু ভুললে চলবে না, বহু কর্মীর প্রাণ এবং রক্তের বিনিময়ের পাশাপাশি নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে মা-মাটি-মানুষ সরকার আজ এখানে পৌঁছেছে। নেত্রীর ঘোষিত ৯২টি সামাজিক প্রকল্প আজ গোটা দেশের বিভিন্ন রাজ্য সরকার অনুকরণ করছে। দলের নির্দেশ মেনে আপনারাও বাড়ি বাড়ি সকলে পৌঁছন, মুখ্যমন্ত্রীর সামাজিক প্রকল্প এবং সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরুন। পাশাপাশি একবারের জন্য হলেও ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি দল প্রতিষ্ঠার পর যেসব কর্মীর সংগ্রাম-লড়াই এবং আত্মত্যাগের জন্য দল এখানে পৌঁছেছে তাঁদের শ্রদ্ধা জানান, সম্মান করুন।