নাট্যকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। সেই দাবিকে স্বীকৃতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁর এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu), অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী (Sudipta Chakraborty) ও রুক্মিণী মৈত্র (Rukmini Moitra)। সোমবার সন্দেশখালির সভা থেকে স্টার থিয়েটারের নাম বদলের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই সঙ্গেই ১৪১ বছর আগে নটী বিনোদিনীর সঙ্গে হওয়া ‘বঞ্চনা’ অবসান হল। স্বীকৃতি পেল স্টার থিয়েটার নির্মাণে বাংলা রঙ্গমঞ্চের উজ্জ্বল নক্ষত্রের অবদান।
১৮৮৩ সালে প্রথম থিয়েটার তৈরি হয় স্টার উত্তর কলকাতার ৬৮ নম্বর বিডন স্ট্রিটে। স্টার থিয়েটার তৈরির জন্য তাঁর অভিনয়ের শিক্ষাগুরু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব গিরিশচন্দ্র ঘোষের অনুরোধে বিনোদিনী তাঁর গুণমুগ্ধ গুর্মুখ রায়ের থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে দিয়েছিলেন। কথা ছিল রঙ্গমঞ্চের নাম হবে বিনোদিনীর নামে। কিন্তু এতে আপত্তি তোলে কলকাতার তৎকালীন বাবু সমাজ। তাঁরা বিনোদিনীর অভিনয় দেখতে যেতেন, কিন্তু নটীর নামে মঞ্চ হোক সেটা চাননি। এরপর রাস্তা সংস্কারের সময়ে বিডন স্ট্রিটের ‘স্টার’ ভেঙে দেয় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। হাতিবাগানের বিধান সরণিতে হয় নয়া স্টার থিয়েটার। হাতিবাগানের এই স্টার থিয়েটার তৈরিতে সরাসরি টাকা দেননি বিনোদিনী। কোনও দিন সেই মঞ্চে অভিনয়ও করেননি। কিন্তু দ্বিতীয় স্টার থিয়েটার গড়ার জন্য বিনোদিনীর জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করেছিলেন অমৃতলাল বসু, ধর্মদাস সুররা। তবে কেউ ভাবেননি নটী বিনোদিনীর নামে মঞ্চের নামকরণের কথা। এতদিনে সেই প্রতারণার বিহিত হল। মুখ্যমন্ত্রী মমতার উদ্যোগে স্টার থিয়েটারের নাম হচ্ছে ‘বিনোদিনী মঞ্চ’।
এই ঘোষণায় আপ্লুত রাজ্যের মন্ত্রী তথা নাট্য ব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসু। তাঁর কথায়, “নটী বিনোদিনীকে যোগ্য সম্মান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)। এর সঙ্গে দেড়শো বছরের ইতিহাসকে সম্মান জানালেন তিনি।” নিজের ফেসবুক পেজে ব্রাত্য লেখেন, “আমার লেখা ২০২১ সালে প্রকাশিত “অদামৃতকথা” উপন্যাসে সেই ইতিহাস বিশদে আছে। আজ প্রায় দেড়শো বছর পরে বিনোদিনীর প্রতি ঘটা চরম সেই অন্যায়ের আজ প্রতিবিধান করলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। বাংলা মঞ্চায়ন ইতিহাসের একটি বৃত্ত আজ সম্পূর্ণ হল। বিনোদিনী শান্তি পেলেন আজ। হয়তো শ্রী শ্রীরামকৃষ্ণও। মূল স্টার থিয়েটার(৬৮ নম্বর বিডন স্ট্রিট ) কোথায় ছিল, সেই ইতিহাস খোঁজা আজ নিরর্থক। কারণ স্টার নামটাই জন্ম নিয়েছিল বিনোদিনীর তারকা অভিনেত্রীর মস্তিষ্কে। বিনোদিনীকে প্রণাম। মমতা বন্দোপাধ্যায়কেও।”
সম্প্রতি ‘বিনোদিনী অপেরা’ করে মঞ্চে সাড়া ফেলেছেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। সেই নাটকের শেষে ফোর্থ ওয়াল ভেঙে সরাসরি দর্শকদের কাছে নটী বিনোদিনীর নামে মঞ্চ করার দাবি জানান সুদীপ্তা। এই ঘোষণার পরে তিনি খুব আনন্দিত। ‘বিশ্ববাংলা সংবাদ’-কে জানালেন, “এতদিন এই কথা কেউ ভাবেনি। মুখ্যমন্ত্রী ভাবলেন। আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি, সব শো-এর শেষে বলেছি বিনোদিনীর নামে একটি মঞ্চ হোক।” সেই দাবির স্বীকৃতি তাঁদের ‘বিনোদিনী অপেরা’-র জয় বলে মনে করছেন সুদীপ্তা। এই সিদ্ধান্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি। তবে, একই সঙ্গে অভিনেত্রীর সংযোজন, “একথাও আমাদের নাটক শেষে বলি, স্টারে কিন্তু এখন সিমেমা দেখায়, নাটক আর হয় না। তাই আমার দাবি রইল, স্টার থিয়েটারে নাটক মঞ্চস্থ হওয়া শুরু হোক। তবেই এই নামকরণ সার্বিক সার্থকতা পাবে।”
রামকমল মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘বিনোদিনী’-তে নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন রুক্মিনী মৈত্র। নারীদের সম্মান জানানোর সঙ্গেই ১৪১ বছরের লড়াইকে স্বীকৃতি দেওয়া মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
–
–
–
–
–
–