বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী প্রথম সরব হয়েছিলেন কেন্দ্র সরকারের তৎপরতার জন্য দেশের তিনটি প্রতিবেশীর সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া বাংলায় বাংলাদেশের পরিস্থিতির প্রভাব যে সবচেয়ে বেশি পড়বে তা আশঙ্কা করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister of West Bengal)। এরপরেও দেশে একের পর এক বাংলাদেশ অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়ায় একাংশের বিরোধী দলের নেতা ও মিডিয়া বাংলা পুলিশকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টায় উঠে পড়ে লেগেছিল। আদতে জাল পাসপোর্ট দেওয়ায় দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও তার পাসপোর্ট দফতর এবং রাজ্য পুলিশের ভূমিকা ঠিক কী, তথ্য তুলে ধরে স্পষ্ট করে দিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার (DGP Rajeev Kumar)।
রবিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে প্রতিবেশী দেশের (Bangladesh) স্পর্শকাতর পরিস্থিতির উল্লেখ করে তিনি স্পষ্ট বলেন বিএসএফের (BSF) খামতি সত্ত্বেও বাংলার পুলিশের বিশেষজ্ঞ দল অনুপ্রবেশকারীদের গ্রেফতারিতে ভূমিকা নিয়েছে। আর রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকার স্থানীয় মানুষের তথ্যের ভিত্তিতেই সেটা সম্ভব হয়েছে বলেই তিনি দাবি করেন। ইতিমধ্যেই জাল পাসপোর্ট চক্রে (fake passport racket) কলকাতা পুলিশের জালে ধরা পড়েছে সাতজন। শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয় ত্রিপুরা থেকে মেঘালয় পর্যন্ত রাজ্যগুলি দিয়ে কোনও অনুপ্রবেশ হলে মূল ভূখণ্ডে সেই অনুপ্রবেশকারীরা প্রবেশ করতেও যে বাংলার মধ্যে দিয়েই যাবেন সে বিষয় সতর্ক রয়েছে রাজ্য পুলিশ, এ কথা স্পষ্ট করে দেন রাজীব কুমার।
তা সত্ত্বেও পাসপোর্ট দপ্তর তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের (MEA) নির্দেশিকার কারণেই পাসপোর্টের ভেরিফিকেশন (passport verification) সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্য পুলিশের যে অনেকটাই হাত-পা বাঁধা ছিল, তথ্য তুলে ধরে তা পেশ করেন তিনি। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য রাজ্য পুলিশের উপর যে নির্দেশিকা দেওয়া রয়েছে তা এরকম
১) পুলিশকে আবেদনকারীর পরিচয় যাচাই করতে হবে না
২) পুলিশকে আবেদনকারীর ঠিকানা যাচাই করতে হবে না
৩) পুলিশকে আবেদনকারীর সঙ্গে দেখা করা বা তাঁর সই সংগ্রহেরও প্রয়োজন নেই
৪) পাসপোর্ট পরিষেবা কেন্দ্র পরিচয়ের তথ্য যাচাই করে পাঠায়। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত কোনও তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজন না থাকলে তা পুলিশের যাচাই করার দরকার নেই
এই নির্দেশিকার কারণেই রাজ্য পুলিশ যে সঠিক ব্যক্তির পাসপোর্ট সঠিকভাবে ভেরিফিকেশন করতে পারে না তা স্পষ্ট করে দেন রাজীব কুমার (Rajeev Kumar)। শনিবার পাসপোর্ট দফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে একটি বৈঠকে নতুন নিয়মের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয় রাজ্য পুলিশেরই তরফে, জানান ডিজি রাজীব কুমার (DGP Rajeev Kumar)। তিনি জানান, নতুন নিয়ম নিয়ে পাসপোর্ট দফতরকে পরামর্শ বাংলার পুলিশই দিয়েছে। আর সেই ব্যবস্থাই নির্দেশিকা হিসাবে দেওয়া হয়েছে একেবারে স্থানীয় পুলিশ স্তরে। এক্ষেত্রে কী কী নতুন নকশা হওয়া দরকার তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে দেওয়া হয়।
রাজ্য পুলিশকে দেওয়া নতুন নির্দেশিকা নিয়ে তিনি জানান, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের (passport verification) ক্ষেত্রে এখন থেকে আর ডিআইবি-র (DIB) উপর নির্ভর করবে না পুলিশ। পুলিশ সুপার সব ভেরিফিকেশনের উপর শিলমোহর দেওয়ার দায়িত্বে থাকবেন। এই ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য সফটওয়্যার (software) থেকে পাসপোর্ট বিতরণের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রাজ্য পুলিশের তরফে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের খুব সামান্য নির্দেশিকা ছিল পুলিশের জন্য, হয়তো সেটা পাসপোর্ট দেওয়ার প্রক্রিয়ার ঝামেলা কমাতেই ছিল। তবে এবার থেকে সবটা শক্ত হাতে নজর রাখবে রাজ্য পুলিশই, স্পষ্ট করে দেন ডিজিপি রাজীব কুমার।
–
–
–
–
–
–