২০২৪-এ টলিউডের নজরকাড়া ১০ ছবি

0
3

বাংলা ছবির জন্য ২০২৪-এর শেষের দিকটা ভালোই কাটল। একের পরে এক বাংলা সিনেমা নিয়ে বেশি হৈ চৈ পড়ে টলিপাড়ায়। বলিউডি ফিল্মের (Film) ধাঁচে চলে প্রোমোশন। তবে, হলে দর্শক টানতে পারল কটা ছবি? সমালোচকদের মন গলল কোনও ফিল্মে? নজরকাড়া ১০ ছবি (Top Tollywood Film) ফিরে দেখল ‘বিশ্ববাংলা সংবাদ’।

বহুরূপী
২০২৪-এ মুক্তি প্রাপ্ত ছবিগুলির মধ্যে নিঃসন্দেহে বহু চর্চিত ও জনপ্রিয় নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি ’বহুরূপী’। এই ছবির ইউএসপি নিঃসন্দেহে অভিনেতা শিবপ্রসাদকে পাওয়া এবং কৌশানী। টলিউডের গ্ল্যামগার্লকে গ্রামে ছিঁচকে পকেটমারের চরিত্রে দেখে হতবাক দর্শক থেকে সমালোচকরা। সঙ্গে ‘হেরে যাওয়া পুলিশ’ আবির। বাস্তবের ঘটনা নির্ভর অ্যাকশন ছবির সঙ্গে নজর কেড়েছে এই ছবির গান। শুধু ‘ডাকাতিয়া বাঁশি’ই নয়, তার কথা ‘বেশি তাকাস না বিয়ে দেবো কেন্দে মরে যাবি’ দর্শকদের মুখে মুখে ঘুরছে।

খাদান
বেশ কয়েক বছর ধরে তথাকথিত অ্যাকশন ছবি ছেড়ে পরিবার কেন্দ্রিক ছবি করছেন দেব। কিন্তু এবছর শেষে তিনি আবার ফিরলেন মশলা ছবিতে। আর পর্দায় দেবের অ্যাকশান দেখতে হলমুখী দর্শক। রাত দুটো থেকে টিকিটের লাইন। ’খাদান’ দেখে মাল্টিপ্লেক্সেও নেচেছেন, পয়সা ছুড়েছেন দর্শক! ছবি দেবের ডবল রোল। সঙ্গে রয়েছেন যিশু সেনগুপ্ত। বহুরূপীর ইউএসপি যদি শিবু-কৌশানী হন, তাহলে এই ছবি ইউএসপি দেব-যিশুর জুটি। কয়লাখনির কালো দিক নিয়ে তৈরি এই অ্যাকশন থ্রিলার। “যা যা বলে দে – তোর বাপ এসেছে”- গানেই চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন দেব।

টেক্কা
বহুরূপী-র গায়ে গায়েই রিলিজ হয় সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি ’টেক্কা’। থ্রিলার ধর্মী এই ছবি নিয়ে রিলিজের আগেই পোস্টার ঘিরে বিতর্ক হয়। তবে, পুজোর মরসুমে সৃজিত-দেবের যুগলবন্দিতে মন্দ ব্যবসা করেনি টেক্কা। শেষ সিনের টুইস্ট নিয়ে বেশ আগ্রহী দর্শকরা। তবে, বহুরূপী-কে টেক্কা দিতে পেরেছে কি না তা নিয়ে আড়াআড়ি বিভাজন আছে।

অযোগ্য
মুক্তির আগে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ’অযোগ্য’ ছবি নিয়ে দর্শকদের তুমুল কৌতহল ছিল। কারণ প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটি ৫০তম ছবি এটি। মাঝে দীর্ঘ বিরতির পর ফের পর্দায় জুটি বেঁধেছেন টলিউডের হট অ্যান্ড হিট বুম্বা-ঋতু। এখনও তাঁদের কেমিস্ট্রিতে যে মরচে পড়েনি তা স্পষ্ট। তবে, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবির যে টানটান গল্প থাকে, এই ছবিতে তার ঘটতি ছিল। সেই কারণে শিলাজিৎ, লিলি চক্রবর্তী, অম্বরীশ ভট্টাচার্যের সাবলীল অভিনয়ও ’অযোগ্য’-কে “একটু নুন কম“ ছবি করেই রেখেছে।

হুব্বা
‘হুব্বা’- বাস্তবের সমাজ বিরোধী। তোলাবাজি, অসামাজিক কাজ, অশান্তিই তার কাজ। বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা ব্রাত্য বসুর ছবির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ, সেটি একেবারেই বাংলার নিজস্ব গল্প। বলিউডের ডন-মার্কা প্রভাব নেই। পদ্মাপাড়ের অভিনেতা মোস্তাফা করিমের অভিনয় হুব্বা শ্যামলের জীবনকে পর্দায় বাস্তব করে তুলেছে।

মানিকবাবুর মেঘ
সব পরিবারিক, অ্যাকশন, থ্রিলার ছবির মধ্যে একেবারে আলাদা ‘মানিকবাবুর মেঘ’। ২০২৪-এ দাঁড়িয়ে সাদাকালো ছবি তৈরি সাহস দেখানোটাই বড় কথা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছবির বিষয়- প্রকৃতি প্রেম। কংক্রিটের জঙ্গলে মেঘলা প্রেমের গল্প বলেছেন পরিচালক। চন্দন সেনের অভিনয় আর আকাশের মেঘকে ব্যবহারের মুন্সিয়ানাই এই ছবির ইউএসপি। অল্প সংলাপ। আর অনেকখানি পরিবেশ। এই ছবি দেখতে বসে দর্শক কথা বলতে পেরেছেন নিজের সঙ্গে।

এটা আমাদের গল্প
টলিউডের অত্যন্ত পরিচিতি ও দক্ষ অভিনেত্রী মানসী সিনহা এবার পরিচালনায়। ২০২৪-ই মুক্তি পেয়েছে তাঁর দুটি ছবি ‘এটা আমাদের গল্প’ ও ‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’। ‘এটা আমাদের গল্প’ ছবিটি ব্যতিক্রমী তার বিষয়ে। বয়সের  তোয়াক্কা না করে প্রেমের সাগরে ভেসে যান দুই প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া শ্রীতমা দেবী এবং প্রবীন শর্মা। রে রে করে ওঠা তথাকথিত সমাজের ধারক ও বাহকরা। ঠাট্টা মশকরা চলে। তার মধ্যেই এগিয়ে চলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় ও অপরাজিতা আঢ্য- পর্দার প্রেমিক যুগল। প্রথম ছবিতেই মুন্সিয়ানার ছাপ রেখেছেন মানসী। আর দর্শকদের প্রতিক্রিয়া- এটা তো আমাদেরও গল্প।

সন্তান
বছর শেষে নিজের ‘সন্তান‘ নিয়ে তুমুল উৎসাহী পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। যেখানে যাচ্ছেন, এমনকী তাঁকে যদি কেউ ফোনও করে- তিনি বলে চলেছেন সন্তান, সন্তান, সন্তান, সন্তান, সন্তান, সন্তান… ‘সন্তান‘ দেখুন। এই ছবি একেবারেই পারিবারিক আবেগের। ফ্যামিলি ড্রামার রসে সিক্ত ছবিতে ঋত্বিক-মিঠুন জুটি নজর কাড়ে। ছবি রয়েছেন রাজ ঘরনী শুভশ্রী। বিগত বেশ কিছু বছর ধরে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত। এই ছবিও তার ব্যতিক্রম নয়। বৃদ্ধ বাবা-মা আর নিজের জীবন নিয়ে থাকা সন্তানের টানাপোড়েন অনেক বাঙালি পরিবারেরই রোজনামচা- মত দর্শকদের।

অতি উত্তম
মৃত্যুর প্রায় ৪৪ বছর পরে মহানায়ক উত্তমকুমারকে ফের পর্দায় হাজির করলেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। না, মহানায়ক উত্তমকুমার অভিনীত ছবির ক্লিপিংস নয়, ‘অতি উত্তম‘-এ তাঁকে দিয়ে রীতিমতো অভিনয় করালেন সৃজিত! প্রযুক্তির ব্যবহার আর অসম্ভব গবেষণার জোরে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন পরিচালক। ছবি বিষয় ও পোস্টার ঘিরেই দর্শকদের কৌতুহল ছিল তুঙ্গে। সেই প্রত্যাশাপূরণ যে সবটা হয়েছে এমন বলা যায় না। তবে, সৃজিতের এই ছবি নিঃসন্দেহে একটা মাইলস্টোন হয়ে রইল।

পদাতিক
কিংবদন্তি পরিচালক মৃণাল সেনের শতবর্ষে তাঁকে নিয়ে ছবি ‘পদাতিক‘। বায়োপিক ধর্মী ছবিটির পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ছবি মুক্তির আগেই মৃণালের চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী লুক নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। মেকআপ আর্টিস্ট সোমনাথ কুন্ডুর হাতের ছোঁয়ায় মৃণাল-চঞ্চল মিলেমিশে এক হয়ে যায়। মৃণাল সেনের গল্পের মতোই এগোয় পদাতিক। ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত আর গণসঙ্গীতের ব্যবহার বিষয় করে নজর কাড়ে। মৃণাল সেনের ছবির তৈরির পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক আদর্শও এই ছবিতে ধরেছেন সৃজিত। চঞ্চল চৌধুরীর পাশাপাশি নজর কড়েছেন গীতা সেনের চরিত্রে মনামী।

এই সব ছবি ছাড়াও আলাদা করে নজর কেড়েছে ‘দাবাড়ু’, ‘যমালয়ে জীবন্ত ভানু‘, ‘বাবলি‘,‘অরণ্যর প্রাচীন প্রবাদ‘-সহ বেশ কিছু ছবি (Film)। যদিও বক্স অফিসের তেমন লক্ষ্মীলাভ হয়নি। তবে, এক বছরে এত বাংলা ছবির মুক্তি টলিউডে সুদিনের আশা জোগায়।