বিধানসভায় কাঞ্চনের ‘চিকিৎসা-বিল’ বিতর্ক উসকে দিল বাম জমানার স্মৃতি! তালিকায় CPIM-কংগ্রেস মন্ত্রী-বিধায়করা

0
3

বিধানসভায় বিল বিতর্ক! সে তো কতই হয়। কিন্তু এ বিল সে বিল নয়। এটা বিধায়কের বিল জমা দেওয়া প্রসঙ্গ। তার তা নিয়েই তুমুল চর্চা। ফিরিয়ে আনল ২৮ বছর আগের বাম জমানার স্মৃতি। তালিকায় সিপিএম-কংগ্রেস (CPIM-Congress) কেউই বাকি নেই। কংগ্রেস বিধায়কের ভুয়ো বিল জমা দেওয়ার অভিযোগও প্রমাণ হয়।
আরও খবর: ইউনুস সরকারের সচিবালয়ে আগুন নাশকতা? সত্য জানতে তদন্ত কমিটি গঠন

সদ্য বাবা হয়েছেন উত্তরপাড়ার তৃণমূল (TMC) বিধায়ক তথা অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক (Kanchan Mallik)। সূত্রের খবর, তিনি না কি স্ত্রীয়ের প্রসবকালীন মেডিক্যাল বিল জমা দিয়েছেন বিধানসভায়, যার অঙ্ক ৬ লক্ষ টাকা। কারণ, বিধায়করা চিকিৎসার খরচ পান সরকার থেকে। এক্ষেত্রে কোনও উর্ধ্বসীমা নেই। আর এই বিল নিয়েই জোর চর্চা শুরু হয়েছে। বিধানসভার (Assembly) স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (Biman Banerjee) কাঞ্চনের বিলের প্রসঙ্গে বলেন, “স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিল ছাড়পত্র দেওয়ার আগে আমি নিজে সব দেখি। এ ক্ষেত্রেও আমি নিজেই সব নথি খুঁটিয়ে দেখব। তার পর যদি কোনও প্রশ্ন দেখা দেয় তা হলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠিয়ে কথা বলব।“ যদিও পরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিল জমার কথা অস্বীকার করে কাঞ্চন জানান, তিনি বিল জমা দেননি। তবে, এই নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। ফিরে এসেছে ২৮ বছর আগের কংগ্রেস বিধায়ক শ্যামাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Shyamadas Banerjee) চিকিৎসা বিল জমা দেওয়ার স্মৃতি। সেক্ষেত্রে ভুয়ো বিল জমা দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। নয়ের দশকে আসানসোল শিল্পাঞ্চলের যুবনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন শ্যামাদাস। সেই কারণেই তাঁকে টিকিট দেন তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। কিন্তু জিতে বিধানসভায় গিয়েই ভোলবদল হয় শ্যামাদাসের। ধীরে ধীরে বদলে যায় জীবনশৈলী। ঘন ঘন মেডিক্যাল বিল জমা দিতে শুরু করেন। বাড়তে থাকে তার পরিমাণ। তুমুল হৈচৈ শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত এই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেন তৎকালীন স্পিকার হাসিম আবদুল হালিম। ধরা পড়ে বিপুল কেলেঙ্কারি। ভুয়ো ডাক্তার, ভুয়ো ঠিকানা, ভুয়ো ওষুধের দোকান- সামনে আসে এই সব তথ্য। জানা যায়, শ্যামাদাস যে ডাক্তারের বিল জমা দিয়েছেন, তার চেম্বারের যে ঠিকানা বিলে দেওয়া হয়েছে তা আসানসোলের একটি কাপড়ের দোকানের। আর আসানসোল শিল্পাঞ্চলে ওই ওষুধের দোকানের কোনও অস্তিত্বই নেই। স্পিকার হালিম কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতাদের বিষয়টি জানান। কংগ্রেসের তরফ থেকে বলা হয়, স্পিকার নিজের ক্ষমতাবলে শ্যামাদাসের (Shyamadas Banerjee) বিধায়কপদ খারিজ করলে করুন। তবে অনুরোধ করা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে যেন কোনও আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। বিরোধীদলের অনুরোধ মেনে বিধায়কপদ খারিজ করেই ছেড়ে দেন হালিম। সেই ঘটনার পর রাজনীতি থেকে হারিয়ে যান শ্যামাদাস।

তবে, শুধু কংগ্রেস নয়, তালিকায় রয়েছেন বাম আমলের আরেক দাপুটে নেতা তথা বিধায়ক মানব মুখোপাধ্যায়। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন তিনি। বিধানসভার কাছে চশমার জন্য ৩০ হাজার টাকা দাবি জানিয়েছিলেন। তা নিয়ে বিতর্ক চরমে ওঠে। গরিবের পার্টি বলে প্রচার করা সিপিএমের বিধায়কের চশমার বিল ৩০ হাজার টাকা হয় কী করে- তা নিয়েও সমালোচনা হয়। চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত বরাদ্দ অর্থ নেননি মানব। তৃণমূল জমানাতেও এর আগে নারী-শিশু ও সমাজকল্যাণ উন্নয়ন মন্ত্রী থাকাকালীন সাবিত্রী মিত্র চশমার জন্য এক লক্ষ টাকার বিল জমা দেন। কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত টাকা নেননি সাবিত্রীও। এখন কাঞ্চনের বিলের কী পরিণতি হয় সেটাই দেখার।