নিজের শর্তে সঙ্গী বাছুন, অসবর্ণ বিয়ের ‘ছুঁৎমার্গ’ ওড়াল ‘চয়ন বার্ষিক সভা’ 

0
3

বিয়ে মানে সাত জন্মের বন্ধন। সামাজিক বিশ্বাস অন্তত তেমনটাই। সেখানে নিজের মনের মানুষের সঙ্গে যদি মিল না হয় তাহলে সারা জীবন দুঃখ আর কষ্টের অন্ধকার সময়ের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে হয় দম্পতিকে। কখনও আবার অসবর্ণ বিয়ের কারণে অনার কিলিং-এর মতো মারাত্মক ঘটনাও ঘটে যায়। অথচ যদি একটু সময় পাওয়া যেত যেখানে নিজের পছন্দের সঙ্গী বেছে নেওয়ার সুযোগ মিলতো, তাহলে হয়তো গোটা ছবিটাই অন্যরকম হতে পারতো। কথাগুলো বলা সহজ। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ভারতীয় সংস্কৃতিতে আজও বিয়ের জন্য নিজের সঙ্গীকে বেছে নেওয়ার অধিকার বোধহয় মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত সমাজে এখনও মেলেনি। তাইতো সমকামী প্রেম বা অসবর্ণ বিয়ে আজও ‘অপরাধ’। তবে সময় এসেছে ভাবনার পরিবর্তনের। ডিসেম্বরের প্রায় শেষ লগ্নের রবিবাসরীয় দুপুরে কলকাতার রোটারি সদনে আয়োজিত ‘চয়ন বার্ষিক সভা ২০২৪’ (The Chayan Annual Meet 2024) যেন সেই কথাই বলে গেল।

এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলা সহায়তা কেন্দ্রের সিওও সাদিয়া আজিম, পরিচালক এবং রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা সুদেষ্ণা রায়-সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বিশিষ্টরা। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ এই সভায় অংশ নিয়েছিলেন। প্রেমের টানে যেখানে জাতপাত বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি দুই মনের, অথচ পারিবারিক মান-মর্যাদা রক্ষার নামে কখনও অনার কিলিং হয়েছে, কখনও আবার সম্পর্ককে ভেঙে দিয়ে প্রকাশ্যে ভালবাসাকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে একজন তথাকথিত উচ্চবর্ণের কোনও মানুষ তাঁর থেকে নিম্ন বংশের কাউকে বিয়ে করে যে ভাল থাকতে পারেন তার ভুরিভুরি উদাহরণ আছে। সমভাবনা সম্পন্ন দুই সমকামী মানুষ কেন নিজেদের মতো করে একত্র বাস বা একসঙ্গে জীবন গড়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না? সমাজের এই জাতপাতের বিভেদ, নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থে বানানো মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের ‘ভুল’ নিয়মের বিরোধিতা করে ‘অসবর্ণ বিয়ে’তে সুখী থাকা মানুষের উপস্থিতি এদিন বুঝিয়ে দিল, ভাল থাকতে গেলে দুটো পরিণত মস্তিষ্কের ভাল মনের প্রয়োজন হয়। সামাজিক নিয়মের বেড়াজালে কখনই সম্পর্কের টান অস্বীকার করা যায় না। ২০২৪ এর শেষ লগ্নে এসেও কেন এইটুকু স্বাবালক হতে পারল না সমাজ? এদিন আইনগতভাবে বেশ কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এতকাল ধরে চলে আসা সমাজ ব্যবস্থার ভাবনার বদল আনা নিয়েও আলোচনা হয়। অন্যায় হলে দ্রুত তার নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের ব্যবস্থা করা, মহিলাদের অধিকার সুরক্ষিত করতে বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরিচালিত বিশেষ টিম তৈরি, সামাজিক এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার কথাও এই দিনের আলোচনায় উঠে আসে।