পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্রসৈকত এলাকায় আবুল নাসেরের রহস্যমৃত্যুর তদন্তে নয়া মোড়। তদন্তে জানা গিয়েছে, জমি ব্যবসার সুবাদে ওই নেতার বান্ধবীর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল আবুলের ব্যবসায়ী বন্ধুর। শুধুমাত্র তাই নয়, ধৃত ওই যুবকের ব্যবসায় বড়সড় বিনিয়োগ করেছিলেন আবুলের রহস্যমৃত্যুতে ধৃত বান্ধবী। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি একটি জমি কেনার পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। সেখান থেকেই কি আবুলকে খুনের চক্রান্ত ? খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ জন্য ধৃত দু’জনকে রবিবারই তোলা হয়েছে আদালতে।তাদের কাঁথি আদালতে তোলা হলে ধৃত দু’জনকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
প্রসঙ্গত, শনিবার সকালে মন্দারমণির একটি হোটেলের ঘর থেকে উদ্ধার হয় ৩৪ বছরের আবুল নাসারের দেহ। তার সঙ্গে ওই ঘরেই ছিলেন বান্ধবী। জানা গিয়েছে, তিনি শৌচাগার থেকে বেরিয়ে আবুলের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান এবং ভয় পেয়ে প্রেমিককে ডাকেন। তার পর হোটেলের কর্মীদের ডাকা হয়েছিল।পুলিশ দেহ উদ্ধার করে এবং গ্রেফতার করে আবুলের বান্ধবী এবং বন্ধুকে। পুলিশি জেরায় দু’জনেই দাবি করেছেন যে আবুল আত্মহত্যা করেছেন।পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’জনের বয়ানে যথেষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে। যদিও আবুলের স্ত্রী, আমডাঙার একটি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুরাইয়া পারভিন দাবি করেছেন, তার স্বামীকে খুন করা হয়েছে। তিনি মূল অভিযুক্ত হিসাবে স্বামীর ব্যবসায়ী বন্ধুর দিকে আঙুল তুলেছেন। দাবি করেছেন, ধৃত যুবতীকে তার স্বামীর খুনে ‘টোপ’ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। খুনের অভিযোগে মামলাও রুজু করেছে পুলিশ। এখন ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছেন তদন্তকারীরা।
তবে খুন বা আত্মহত্যা, যাই হোক না কেন জানা গিয়েছে, জমি ব্যবসায়ীর সঙ্গে আবুলের বন্ধুত্ব দীর্ঘ দিনের। যদিও ধৃত যুবতীর সঙ্গে আবুলের আলাপ বছর দুয়েক আগে। তার সূত্রেই যুবতীর সঙ্গে পরিচয় হয় ব্যবসায়ীর এবং ক্রমশ ওই দু’জন ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়ান। আগেই ধৃত মহিলা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, তার একাধিক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীর সঙ্গে বান্ধবীর ঘনিষ্ঠতা ঠিক মানতে পারেননি আবুল। সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যুবতী।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার আবুল, আতাউর, ওই যুবতী ছাড়াও তাদের সঙ্গে আরও এক মহিলা উত্তর ২৪ পরগনা থেকে মন্দারমণি বেড়াতে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাড়ি ফিরে যান। শুক্রবার রাতে হোটেলের একই ঘরে ছিলেন আবুল, ব্যবসায়ী এবং তাদের বন্ধু। রাতে মদ্যপানের আসর বসে। তিনজনের মধ্যে কথা কাটাকাটিও হয়। কিন্তু পুলিশের প্রশ্ন, তার মধ্যে কী ঘটল যে সাতসকালে আত্মহত্যা করলেন আবুল?
তদন্তে উঠে এসেছে, ধৃত যুবতী আমডাঙারই এক নেতার ভাগ্নী। আবুলের সঙ্গে তার যেমন বন্ধুত্ব ছিল, তেমনই আবুলের বন্ধুর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ছিল। কিছু দিন আগে তার ব্যবসাতেও বিনিয়োগ করেন ওই যুবতী। কিন্তু সেই টাকার উৎস এখনও জানা যায়নি। অভিযোগ, সদ্য বায়না করা একটি লাভজনক জমি এবং জেসিবি হাতাতেই বান্ধবীকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করেন ব্যবসায়ী। তবে আবুলের যাতে কোনও সন্দেহ না হয়, সেই কারণে পরিচিত এক বার-ডান্সারকে নিজের বান্ধবী পরিচয় দিয়ে বৃহস্পতিবার মন্দারমণি বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন আতাউর। হোটেলের রেজিস্টার বলছে, আবুল এবং তার বন্ধু সঙ্গে থাকা দুই যুবতীকে নিজেদের স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়ে হোটেলের রুম বুক করেছিলেন।ধৃতদের জেরা করে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, খুনের পরিকল্পনা করেই ব্যবসায়ী তার সঙ্গে থাকা মহিলাকে অসুস্থতার অজুহাতে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। অতিরিক্ত মদ্যপান করিয়ে আবুলকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে কি না, এই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজছে পুলিশ। জবাব খুঁজছে পুলিশ।
–
–
–
–
–
–
–