জাল পাসপোর্ট চক্রে যে কেন্দ্রীয় সংস্থার যোগ রয়েছেই, এমনটা তদন্তের প্রথম থেকেই অনুমান করেছিল কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police)। এবার আরও স্পষ্ট হচ্ছে সেই যোগ। জাল আধার (fake Adhaar) পেতে যে সব জাল নথি প্রয়োজন, তার সবই সরবরাহ হয়েছে ভারতের মাটি থেকে, ভারতীয় কেন্দ্রীয় একাধিক সংস্থার মদতেই, উঠে আসছে তথ্য। সেই সঙ্গে উদ্ধার হচ্ছে বহু জাল পরিচয় পত্র। যার মধ্যে এবার দেখা গেল আনসারুল্লা বাহিনীর জঙ্গিও ভুয়ো আধার বানিয়ে ভারতের নাগরিক হয়ে বাস করছিল ভারতের মাটিতে। আর সেখান থেকেই চলছিল স্লিপার সেল (sleeper cell) বানানোর কাজ।
এপর্যন্ত জাল পাসপোর্ট চক্রে (fake passport racket) পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। তার মধ্যে দুজন রয়েছেন ডাকঘরের কর্মী। যাদের হাত দিয়ে জাল পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টে জাল ঠিকানা বসানোর কাজ চলত। তবে তদন্তকারীদের অনুমান, এই চক্রে শুধুমাত্র কয়েকটি নয়, কয়েক হাজার জাল পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে। যা দুএক জন বা কয়েকটি কম্পিউটার, প্রিন্টারের কাজ নয়। এর পিছনে রয়েছে সরকারি দফতরের যোগ না থাকলে এভাবে জাল নথি তৈরি হলে তা পুলিশ ভেরিফিকেশনের (verification) সময়ই ধরা পড়ার কথা।
আদালতে ভেরিফিকেশন (verification) নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরই পুলিশ তদন্তে অন্যদিক খুঁজে পায়। তাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের (MEA) পাসপোর্ট সেবা অফিসগুলির (passport seva office) যোগ স্পষ্ট হয়। কেন্দ্রীয় দফতর থেকে যদি ভুয়ো তথ্য আপলোড করার কারণে ভেরিফিকেশনের সময় ভুয়ো নথি ধরা পড়ে না। সেক্ষেত্রে একইভাবে ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরির যোগও পাওয়া যায়। আধার অফিসগুলিতে কীভাবে ভুয়ো আধার অনুমোদন হল, তা নিয়েও তদন্ত চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ।
বাংলাদেশে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নগুলির (European Union) ভিসা অফিস না থাকায় সেখানকার ভিসা (Visa) পেতে বাংলাদেশের মানুষকে কাঠখড় পোড়াতে হয় অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে ভারতীয় পাসপোর্ট থাকলে সেই চাপ অনেকটা কমে। তাই বাংলাদেশে ঘুরে ঘুরে এজেন্টের মতো কাদের বেআইনি পথে পাসপোর্ট প্রয়োজন খোঁজ করতেন সমরেশ। এরপর ভারতের বুকে বসে চলতে জাল নথি ও পাসপোর্ট তৈরির কাজ। তবে এই ফাঁকে যে জঙ্গি ও রাজনৈতিক অপরাধীরা ভারতের নাগরিক হওয়ার সুযোগ পেয়ে যাবেন, তা হয়তো কল্পনা করেননি ধৃত সমরেশ।
সম্প্রতি অসম পুলিশের এসটিএফের অভিযানে গোটা দেশ থেকে আট আনসারুল্লা জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ধরা পড়ে। তারপরই এদের ভারতে যোগ নিয়ে শুরু হয় তদন্ত। সেই তদন্তে উঠে আসে, শাদ রাডি নামে আনসারুল্লা জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় সদস্যের কাছে রয়েছে ভারতের আধার কার্ড। মুর্শিদাবাদের ঠিকানা দেওয়া আধার কার্ড উদ্ধার হওয়ার পরে উঠে আসে ভুয়ো আধার বানিয়েই সে পেয়েছিল ভুয়ো পাসপোর্টও। ফলে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের হয়ে খুব সহজেই নাশকতার পরিকল্পনা, ভারতে যাতায়াত সহজ হয়ে গিয়েছিল তার। তার সঙ্গে আরও কত জঙ্গি এভাবে ভারতের ভুয়ো পরিচয়পত্র পেয়েছেন, তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।
–
–
–
–
–
–