বিধাননগর মেলার উদ্বোধন। কিন্তু ছিলেন না বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত। উদ্বোধন এড়ালেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। কারণ? উত্তরে বিস্ফোরক জবাব চেয়ারম্যান সব্যসাচীর। তাঁর সাফ কথা, পুরনিগমের করার কথা যে বিধাননগর মেলা উৎসব, সেটি দেওয়া হয়েছে বেসরকারি সংস্থার হাতে। এতে আইনি জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা। আর কোনও আইনি জটিলতায় জড়াতে চান না বলেই এই সিদ্ধান্ত। মেলা বেসরকারি হাতে যাক চাননি ফিরহাদও। সেই কারণই সম্ভবত উদ্বোধন অনুষ্ঠান এড়ালেন তিনি। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষ্ণা চক্রবর্তী, বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, জয়প্রকাশ মজুমদার, অদিতি মুন্সি থেকে আরও অনেকে।
কিন্তু প্রশ্ন যখন এই বিধাননগর মেলা উৎসবের দায়িত্ব একটি সংস্থাকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল বিধাননগর পুরনিগম, তখন সব্যসাচী কেন কিছু বলেননি?
প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই ক্ষুব্ধ পুর চেয়ারম্যানের জবাব বোর্ড মিটিং হলে তো কিছু বলব। গত তিন-চারমাস হল কোনও বোর্ড মিটিং হয়নি বলে অভিযোগ সব্যসাচীর। এর পরেই তিনি জানান, বিধাননগর আজকের নয়। বাম আমল থেকে হয়ে আসছে। তখন একটি বেসরকারি সংস্থা এটি করত। সেই সময় বিধাননগর পুরসভায় বিরোধী ছিল তৃণমল। সব্যসাচী জানান, সেই সময় মেলা ঘিরে টাকা তছরুপে অভিযোগে সরব হতেন তাঁরা। ২০১০-এ ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। সব্যসাচী ভাইস চেয়ারম্যান। তখনও রাজ্যে পালাবদল হয়নি। তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য মেলা করার অনুমতি দেয়নি বিধাননগর পুরসভাকে- অভিযোগ তৃণমূল নেতার। এর পরের বছর রাজ্যে ক্ষমতা বদল হয়। সরকার গড়ে তৃণমূল। সেই সময় আবার বিধাননগর মেলা করার আবেদন যায়। সেই সময় ফিরহাদ হাকিম জানান, ইতিমধ্যেই বিধাননগর মেলা কমিটির নামে মেলা হত। সেই বিষয়ে অনুমতি দিতে কিছু আইনি জটিলতা হবে। এক্ষেত্রে নাম পরিবর্তনের পরামর্শ দেন তিনি। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেলার নাম দেন বিধাননগর মেলা উৎসব। সেই থেকেই বিধাননগর পুরসভা এই মেলা করছে।
এরপর ২০১৫ বিধাননগর পুরসভা বদল হয়ে পুরনিগম হয়। বিধাননগর মেলা উৎসব প্রতিবছর করে পুরনিগম। এবার হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল। কিন্তু এই বছর হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল। আর চেয়ারম্যান সব্যসাচীর অভিযোগ, সেটা হয়েছে বোর্ড মিটিং না করে। বিস্ফোরক অভিযোগ করে তিনি বলেন, যে বইমেলা প্রাঙ্গণে এই মেলা হয়, সেটি নগরোন্নয়ন দফতরের। পুরনিগমকে মেলা করার জন্য তারা মাত্র একটাকার বিনিময় জমিটা দেয়। কিন্তু কোনও বেসরকারি সংস্থা সেই মেলা করতে গেলে তার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা দিতে হত।
তাহলে কী বেআইনি লেনদেনের অভিযোগ করছেন সব্যসাচী? বিধাননগর পুরনিগমের চেয়ারম্যান সাফ জানান, কোনও তথ্য-প্রমাণ ছাড়া এই অভিযোগ তিনি করতে পারেন না। তবে, একই সঙ্গে তিনি জুড়ে দেন, পুরনিগম মেলা করলে তার আয়-ব্যয়ের হিসেব থাকে, সরকারি নিয়ম মেনে অডিট হয়- এক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কী করবে তার উপর তো কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।
সব্যসাচী দত্তের কথায়, টেন্ডার করে দিলেও বোর্ড মিটিং করে সিদ্ধান্ত হয়নি। কোনও অ্যাজেন্ডা নেওয়া হয়নি।
কয়েকদিন আগে বিধাননগর পুরনিগমে বৈঠক করতে যান ফিরহাদ হাকিম। সেখানে তিনি মেলার আউট সোর্সিং করতে নিষেধ করেন। কারণ তিনিও বলেন, নগরোন্নয়ন দফতরের প্রায় বিনামূল্যে জমিটি দেয় বিধানসভা পুরনিগমকে। সেটা এইভাবে বেসরকারি হাতে দেওয়া যায় না। কারণ, বেসরকারি সংস্থা মেলা করতে চাইলে তার ভাড়ার রেট আলাদা হয়।
সেই কথা উল্লেখ করে সব্যসাচী বলেন, ফিরহাদ হাকিম নিজেই বলেছিলেন মেলা করতে পারে না বেসরকারি সংস্থা। আমি বারণ করেছি। তাও মেলা হল। এর পরেই সব্যসাচী প্রশ্ন তোলেন, ফিরহার তো প্রতি বছর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উদ্বোধন করতেন, আজ তিনি নেই কেন!
নভেম্বরে বিধাননগর মেলা করার জন্য স্টল বুকিং, বণ্টন ও অস্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি করতে টেন্ডার ডাকে। একটি সংস্থা ১ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকায় বরাত পেয়েছে বলে সূত্রের খবর। সব্যসাচী জানান, যাঁরা আগে বিধাননগর মেলা করতেন, যদিও তাঁরা এখন অতি বৃদ্ধ কিন্তু তাঁরা যদি এখন আদালতে এই নিয়ে মামলা করেন? পুরনিগমের চেয়ারম্যানের কথায়, “একেই মহামান্য আদালত বারবার হোর্ডিং, বেআইনি নির্মাণ নিয়ে ভর্ৎসনা করে। আর নতুন করে কোনও আইনি জটিলতায় আমি জড়াতে চাই না।“ সেই কারণেই বিধাননগর মেলা উৎসবে নেই খোদ নিগমের চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন- প্রোমোটার মারধরের ঘটনায় কাউন্সিলরের বাড়িতে নোটিশ পুলিশের
_
_
_