CBI-এর ‘ব্যর্থতায়’ রুষ্ট-হতাশ টলিপাড়া! এখন আস্থা রাজ্য পুলিশেই

0
3

৮ অগাস্ট অভিশপ্ত রাতের পরে কলকাতা বা রাজ্য পুলিশ নয়, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার উপর ভরসা করেছিলেন মৃতা মা-বাবা-সহ বাংলার বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশ। উচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্তভার সিবিআই-এর কাছে গেলেও ৯০ দিনে দুই অভিযুক্তর বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে পারেনি তারা। ফলে আর জি করে তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ-খুনে জামিন পেয়ে যান আরজি কর হাসপাতালের (R G Kar Medical College And Hospital) প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ (Sandip Ghosh) ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল (Abhijit Mandol)৷ আর এতেই রুষ্ট সেই সময় সিবিআই চাওয়ার টলিপাড়ার একাংশ। জয়নগর থেকে ফরাক্কা- একের পর ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় ৬০-৬২ দিনের মধ্যে দোষীদের ফাঁসির সাজা ঘোষণা হয়ে যাচ্ছে রাজ্য পুলিশের (State Police) তৎপরতা। ফলে এখন আর জি কর মামলাও রাজ্য পুলিশের কাছে দিতে চাইছেন অনেকেই।

আরও খবর: ইউপিএসসিতে জয়জয়কার বাংলার! প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে দুই বঙ্গসন্তান

৯ অগাস্টের পর থেকে রাত দখল, রাস্তা দখল সব কর্মসূচিতে প্রথমসারিতে দেখা যেত যাঁদের সেই দেবলীনা দত্ত, চৈতি ঘোষাল, মোক্ষারা এখন বলছেন সিবিআই-এর তদন্তে তাঁরা হতাশ। মুখ্যমন্ত্রী আর রাজ্য পুলিশেই তাঁদের আস্থা। কলকাতা পুলিশ যাকে ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে এখনও পর্যন্ত সিবিআই তাকেই ধর্ষণ-খুনে একমাত্র অভিযুক্ত বলে চার্জ গঠন করেছে। এর প্রেক্ষিতে অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল বলেন, রাজ্য পুলিশ (State Police) যতটুকু তদন্ত করেছিল সিবিআই তিন মাসে তার চেয়ে বেশি কিচ্ছু করতে পারেনি। সিবিআইয়ের কাজে তাঁরা হতাশ। এখন মুখ্যমন্ত্রীর উপরই ভরসা চৈতির। তিনি নির্যাতিতার পরিবারকে ন্যায় দিতে পারবেন বলে আশা টলিউড অভিনেত্রীর।

আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে প্রথম থেকেই প্রতিবাদে সামিল অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনেও তাঁকে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু এখন হতাশ তিনি। দেবলীনার কথায়, সিবিআই-এর সব আশা-ভরসাকে চুরমার করে দিয়েছে। ৯০ দিনে কোন চার্জশিট জমা না পড়ায় সন্দীপ ঘোষ জামিন পেয়ে গেলেন। এর পরেই সিবিআইয়ের কাছে অভিনেত্রীর প্রশ্ন, ”আপনারা কি করলেন? রাজ্য পুলিশের ওপর আমার আগেও ভরসা ছিল। আমি তখনও প্রশ্ন করেছিলাম যে রাজ্য পুলিশ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আগেই কেন সিবিআই এর কাছে তদন্তের ভার গেল। আর যখন গেল তখন সিবিআই কিছুই করতে পারল না। সর্বোচ্চ কেন্দ্রীয় সংস্থা কি করল? আমি প্রশ্ন করছি সিবিআই কে!”

রাত দখলে শ্যামবাজারে নেচেছিলেন অভিনেত্রী মোক্ষা। ৯০ দিনেও সিবিআই চার্জশিট দিতে না পারায় হতাশ তিনি। বলেন, অনেক আশা নিয়ে তাঁরা সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন বিচার পাবেন। কিন্তু সিবিআই তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে মোক্ষার এখন মনে হচ্ছে রাজ্য পুলিশের হাতে তদন্তভার থাকলে হয়ত এতদিন বিচার হয়ে যেত।

অভিনেত্রী মানসী সিনহা বলেছেন, সিবিআই নির্যাতিতার বাবা-মায়ের জায়গায় নিজেকে রেখে দেখুক আর কত দিনের অপেক্ষা। যার মেয়ে খুন হল কি কারণে খুন হল সেটা এতদিনে জানতে পারল না। তিন মাসের উপর কোনও চার্জশিট হলো না। কার ওপর আমরা সাধারণ মানুষ ভরসা রাখব!

এই পরিস্থিতি অভিনেতা বাদশা মৈত্রের অভিযোগ, সবাইকে অন্ধকারে রেখে চার দেওয়ালের মধ্যে তদন্তকে কুক্ষিগত করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

শুধু টলিপাড়ার মানুষজনই নন, সমাজের সবস্তর- বিশেষ করে জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশও এখন বলছেন, সিবিআই নয়, রাজ্য পুলিশ তদন্ত করলেই সুবিচার মিলত। কারণ, সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ, জয়নগর, ফরাক্কা- ধর্ষণ-খুনে দ্রুত তদন্ত শেষ করে অপরাধীদের সাজা করিয়েছে রাজ্য পুলিশ। কিন্তু CBI আর জি কর-কাণ্ডের তদন্ত আদৌ শেষ করতে পারবে কি না, কবে চার্জশিট দিতে পারবে – সে বিষয় সবাই অন্ধকারে। তদন্ত সিবিআইয়ের কাছে যাওয়ার পরেই, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সাফল্যের হার খুবই কম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল চুরির থেকে শুরু করে আর্থিক কেলেঙ্কারি কোনও তদন্তই শেষ করে উঠতে পারেনি। এখন আর জি করের ক্ষেত্রেও সেই আশঙ্কাই সত্যি হয় কি না সেটাই দেখার।