‘জ্যাকসনের শেষ দিন’, উৎপল সিনহার কলম

0
4
উৎপল সিনহা

জীবনেরে কে রাখিতে পারে

আকাশের প্রতি তারা

ডাকিছে তাহারে …

শোনা যায় , দেড়শো বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন তিনি । অথচ মারা গেলেন মাত্র ৫০ বছর বয়সে । একাধিকবার প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে নিজের চেহারাটাই সম্পূর্ণ বদলে ফেলেছিলেন। গান তো ছিলই , সঙ্গে নাচ ।

সবটাই অভিনব । অদ্ভুত সব বিষয় । আশ্চর্য সব আইডিয়া । চমকের পর চমক । তার ব্যতিক্রম হয় নি মৃত্যুতেও । আধুনিক প্রযুক্তি ও টেকনোলজি কাজে লাগিয়ে আলো আঁধারির মায়ায় নিপুণ বাজিগরের দক্ষতায় যে সমস্ত অসামান্য কোরিওগ্রাফি বারবার তিনি উপস্থাপনা করে গেছেন বিশ্বজুড়ে , তা আজও আপামর সংস্কৃতিপ্রেমীদের বিস্ময় । মহাশিল্পী মাইকেল জ্যাকসন এখনও বেঁচে আছেন তাঁর একনিষ্ঠ অসংখ্য ভক্তদের হৃদয়ে । তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কৌতুহলের শেষ ছিল না ।তাঁর মৃত্যুও রয়ে গেছে রহস্যে ঢাকা । এত জনপ্রিয় , এত উঁচুমাপের একজন স্রষ্টার জীবনের শেষটা রয়ে গেল অন্ধকারাচ্ছন্ন ।

সারা পৃথিবী জুড়ে তাঁর ভক্তরা এখনও বিশ্বাস করেন তিনি মারা যান নি । তাঁদের বিশ্বাস , খ্যাতি ও স্টারডমের বিড়ম্বনায় , জীবনের চূড়ান্ত একঘেয়েমিতে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি অন্য কোনো নির্জন দেশে চলে গেছেন অথবা কোথাও আত্মগোপন করে শান্তিতে জীবন কাটাচ্ছেন ।

তুমুল খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা তাঁকে নিঃসঙ্গ করে দিয়েছিল। তবে তাঁর এই যাওয়া সাময়িক । ইচ্ছে হলেই তিনি একদিন আবার স্বমহিমায় ফিরে দেখা দেবেন ভক্তদের । কতদিন আর একা একা চোখের আড়াল কাটাবেন প্রিয় শিল্পী ?

সালটা ২০০৯ , তারিখ ২৫ জুন । সুদূর আমেরিকা থেকে একটা দুঃসংবাদ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময় । মাইকেল জ্যাকসন আর নেই । পপ সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিশ্বর মাইকেলের মৃত্যুর খবরে থমকে যায় সাংস্কৃতিক বিশ্ব।

দীর্ঘমেয়াদে পেইনকিলার ওষুধের কারণেই কি এই অকাল মৃত্যু ? প্রথমে জানানো হয় , হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি । তারপর বলা হয় , ডেমারোল নামের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যথানাশক ইঞ্জেকশন নেওয়ার ফলেই তাঁর মৃত্যু হয় । বিশ্বজুড়ে প্রশ্ন ওঠে , তাহলে কি আত্মহত্যা করেছেন জ্যাকসন ? তাঁর মৃত্যুর জন্য তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক করনাড মুরকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।

অনিচ্ছাকৃত হলেও ডাক্তারের গাফিলতিই পপস্টারের মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে রায় দেয় আদালত । হত্যা নাকি আত্মহত্যা ? নাকি স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করে মৃত্যুকে ডেকে আনা ? এ বিতর্ক আজও রয়ে গেছে। তাঁর মৃত্যুর ১৫ বছর পরেও । নাচগানের বাইরে তাঁর যৌনজীবন নিয়েও নানা গুঞ্জন ছিল বিশ্বজুড়ে ।

নানা যৌন হয়রানির কারণে বারবার খবরের শিরোনামে এসেছেন জ্যাকসন । মৃত্যুতেও গুঞ্জন থেকে রেহাই পেলেন না । অবিস্মরণীয় এই শিল্পীর জীবনযাপন এবং মৃত্যু নিয়ে নানা মুনির নানা মত । তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের মতে , মাইকেল মাদকাসক্ত ছিলেন । তাঁর আচরণ ঘন ঘন পাল্টে যেতো। তাঁর মৃত্যুভয় ছিল সাংঘাতিক । সবসময় ভাবতেন যে কোনো সময় তিনি খুন হয়ে যেতে পারেন । কাউকেই খুব একটা বিশ্বাস করতেন না । এমনকি তাঁর বিশ্বস্ত দেহরক্ষীরাও তাঁকে হত্যা করতে পারে যে কোনো দিন , যে কোনো সময় , এমনও ভাবতেন তিনি এবং আতঙ্কে থাকতেন । এই দুশ্চিন্তায় প্রায়ই সারারাত ঘুমোতে পারতেন না । অথচ বাঁচতে চেয়েছিলেন ১৫০ বছর !

কিছু একটা ঘটতে চলেছে এবং সেটা ঘটবে খুব শিগগিরই । আর সেটা ভয়ঙ্কর কিছু । এমন কথা প্রায়ই বলতেন জ্যাকসন । সবসময় একটা ঘোরের মধ্যে থাকতেন । একটা অজানা ভয় , একটা তীব্র আতঙ্ক তাঁকে তাড়া করে বেড়াতো প্রতিনিয়ত । খ্যাতি , সম্মান ও জনপ্রিয়তা তিনি অনেকের চেয়ে অনেক বেশি অর্জন করেছিলেন তাঁর পঞ্চাশ বছরের বর্ণময় ও বিতর্কিত জীবনে । অথচ শেষটা হলো অস্বাভাবিক ।

জ্যাকসনকে স্ট্যাপলস সেন্টারে একটি অভিজাত তারকাখচিত স্মৃতিসৌধে শোয়ানো হয় । যিনি জীবনের শেষদিনগুলিতে বলতেন , ‘ আমি খুব ক্লান্ত , আমার খুব ঘুম পায় , আমি অনেকক্ষন ঘুমোতে চাই ‘ , তিনি শেষ পর্যন্ত ঘুমিয়েই পড়লেন , চলেও গেলেন চির বিশ্রামে , তবে বড়ো অকালে । তাঁর শরীরে নাকি পাওয়া যায় অ্যানেস্থেটিক প্রপোফোল , যা প্রাণঘাতী । শেষ মুহূর্তে তাঁর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় । তিনি শ্বাস নিতে পারছিলেন না । ‘ গোটা দুনিয়া শান্তিতে ঘুমোয় কিন্তু আমার কেন ঘুম আসে না ‘ , এই অভিযোগ তুলে তিনি নাকি তাঁর বিশ্বস্ত ডাক্তারদের চাপ দিতেন তাঁকে কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ দেওয়ার জন্য । সেই আপাত শান্তির ওষুধগুলোই যে তাঁকে চিরঘুমের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তা সম্ভবত অনুমান করতে পারেন নি বিশ্ববরেণ্য মাইকেল জ্যাকসন ।

আরও পড়ুন- দুই নৌকায় পা নীতি কানাডার, অর্শকে জামিন দিয়ে খালিস্তানি বিক্ষোভ বন্ধে পদক্ষেপ