পুরুষবর্জিত আজব গ্রাম রয়েছে এদেশে! একাকিনী নারীদেরই বাস সেখানে

0
1

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। নারী-পুরুষের সমন্বয়েই তৈরি পরিবার। গড়ে ওঠে জনপদ। কিন্তু বিশ্বে এমনও গ্রাম রয়েছে, যেখানে কোনও পুরুষ বাস করেন না। শুধু নারীরাই বিরাজ করেন সেই গ্রামে। জানেন, কোথায় রয়েছে সেই আজব গ্রাম। যে গ্রাম পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বাইরে বেরিয়ে এসে নারীশক্তির অনন্য দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছে।

পুরুষবর্জিত সেই গ্রামের ঠিকানা কেনিয়ায়। উমোজ নামে কেনিয়ার গ্রামে শুধু বাস করেন মহিলারাই। কিন্তু কী করে সেটা সম্ভব? একটা গ্রামে পুরুষের ঠাঁই নেই, মহিলারাই সর্বেসর্বা। আসলে হাজার হাজার নির্যাতিতার ঠাঁই এই গ্রামে। সমাজে নির্যাতনের শিকার হয়ে পুরুষবর্জিত গ্রামে তাঁরা বাসা বেঁধেছেন। তাঁদের নিজের মতো করে গড়েছেন সংসার। সামাজিক অত্যাচার ও শোষণের নির্মমতাকে পিছনে ফেলে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন বোনেন তাঁরা। সে জন্যই পুরুষের সংসর্গের বাইরে এসে মহিলারাই তৈরি করে ফেলেছেন আস্ত একটা গ্রাম। নিজস্ব পরিচয় তৈরি করে নতুন করে বাঁচার জন্য ঘর বাঁধেন তাঁরা। স্বপ্ন দেখেন নতুন পৃথিবীর।

কী রয়েছে আজব এই ঘটনার নেপথ্যে, যে কারণে সমাজের মূলস্রোত থেকে সরে এসে আস্ত একটা গ্রাম বানিয়ে নিতে হয়েছে তাঁদের। প্রায় ৩০-৩৫ বছর আগের ঘটনা। সাম্বুর সম্প্রদায়ের কয়েকজন মহিলা গোড়াপত্তন করেন কেনিয়ার উমোজ গ্রামের। সমাজ থেকে বিচ্যুৎ, পরিবার থেকে বিতাড়িত মহিলারা প্রান্তিক এই জায়গায় গড়ে তোলেন অভয়াশ্রম। তারপর ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নির্যাতিতা, নিপীড়িতারা যোগ দেন এই তাঁদের বৃহত্তর পরিবারে। গড়ে ওঠে গ্রাম। তৈরি হয় সমাজ। এই গ্রামে এসে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শুরু হয়ে নিপীড়িতাদের বেঁচে থাকার লড়াই। উমোজ গ্রামের সহ প্রতিষ্ঠাতা জেন নোমুকেনের কথায়, এখন দিন বদলেছে, একজন মহিলার জীবনের সিদ্ধান্ত একান্তই তাঁর নিজের। তিনি কী করবেন, কার সঙ্গে জীবন কাটাবেন, কীভাবে জীবন কাটাবেন, সেই সিদ্ধান্তের অধিকারী তিনি নিজেই। এজন্য তাঁকে স্বাবলম্বী হতে হবে, প্রতিষ্ঠা করতে হবে নিজস্ব জগৎ। তিনি বলেন, নারীদের আধিপত্য পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মানতে পারছিল না। এই অবস্থায় যেসব নারীরা মনে সাহস নিয়ে নিজেদের একটা জগৎ গড়ার তাগিদ অনুভব করেছেন। আর তারপরই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

এ গ্রামে নেই ভয়। প্রাণখোলা আনন্দে বাসিন্দারা নিজেদের ভাগ্য নিজেই গড়েন. কেউ কাউকে চাপ সৃষ্টি করেন না। নেই অত্যাচারের ভয়, সন্তানদের নিয়ে বেশ দিন কাটাচ্ছেন মহিলারা। উমোজ গ্রামে বাস সন্তান-সহ ৪০০ মহিলার। স্বাচ্ছন্দ্যেই চলে যায় জীবন। গ্রামের কড়া নিয়ম, ছেলে সন্তানরা ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত থাকতে পারেন মায়ের সঙ্গে। তারপরই তাঁকে এ গ্রাম ছাড়তে হয়। কোনও পুরুষ এ গ্রামে রাত্রিযাপন করতে পারেন না। তবে পুরুষেরা ঘুরে দেখার সুযোগ পান দিনের আলোয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন, এ গ্রামের জীবনযাত্রা দেখতে। মহিলারা কৃষিকাজ ছাড়াও গহনা তৈরি করেন, পোশাক তৈরি করে বিক্রি করেন। সবাই স্বনির্ভর। উমোজা গ্রামের মহিলারা বিভিন্ন সম্প্রদায় থেকে এলেও সবাই এখানে একটি পরিবার। গ্রামে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে, রয়েছে শিশুদের জন্য স্কুল। সমাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বতন্ত্র উমোজা গ্রামের মহিলারা।

আরও পড়ুন- এক মাসে সাড়ে ১২ হাজার কোটি সহায়তা, ডিসেম্বরেই রেকর্ড গড়ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার