কাজে এলো না দ্রোহের কার্নিভাল, রাত দখল, উৎসবে ফিরছি না- কোনও কৌশলই। উপনির্বাচনে ৬ কেন্দ্রেই জয়ী তৃণমূল (TMC)। বিজেপি (BJP) রয়েছে দ্বিতীয়তে। আর বাম-কংগ্রেস? কোথায় তৃতীয়, কোথাও চতুর্থ। এবারের ভোটে অবশ্য জোট হয়নি তাদের। আর একক ভাবে লড়েও হালে পানি পায়নি আলিমুদ্দিন স্ট্রিট বা বিধানভবন। নোটার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। সর্বত্রই জামানত জব্দ হয়েছে বাম ও কংগ্রেসের। এর থেকে স্পষ্ট রাজ্যের কিছু মানুষ শাসক বা প্রধান বিরোধীদলকে প্রত্যাখ্যান করলেও বাম-কংগ্রেসে (Left-Congress) আস্থা রাখতে পারেননি।
পতাকা সরিয়ে জনসাধারণের ভিড়ে মিশে আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদ-আন্দোলনে শামিল হয়েছিল বামেরা। কংগ্রেস অবশ্য ইস্যুটা তেমন ধরতে পারেনি। আন্দোলনের সামিল হতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বকে। তবে, আর জি করে তরুণীর নৃশংস ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় মানুষের আবেগকে হাতিয়ার করে স্যোশাল মিডিয়ায় জন সমর্থন তৈরির চেষ্টা করেন ফেসবুকীয় কমরেডরা। কিন্তু তাতেও আস্থা ফিরল না। কাটল না শূন্যের খরা। ভোটের ময়দানে রাজনৈতিক দল নয়, নোটার সঙ্গে লড়তে হল তাদের।
মাদারিহাটে বাম শরিকদল আরএসপি প্রথম ৪ রাউন্ড ‘নোটা’র থেকে পিছিয়ে ছিল। একই হাল ছিল কংগ্রেসেরও। এর পরে নোটার সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে খেলতে এগোলেও যে কোনও সময় হাত শিবির পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। মাদারিহাটে নোটায় পড়েছে ২৮৫৬ ভোট। আরএসপি এবং কংগ্রেস যথাক্রমে পেয়েছে ৩৪১২ এবং ৩০২৩ ভোট।
এক সময় ফরওয়ার্ড ব্লকের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল কোচবিহার। সেই জেলার সিতাইয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের থেকে বেশি ভোট পেয়েছে কংগ্রেস। তবে, শেষ পর্যন্ত নোটার এগিয়ে শেষ করে বামেরা। সিতাইয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক পেয়েছে ৩৩১৯ ভোট। নোটায় পড়েছে ১৩১৭ ভোট।
মেদিনীপুরেও ষষ্ঠ ও সপ্তম রাউন্ডে ‘নোটা’র চেয়ে পিছিয়ে পড়ে কংগ্রেস। পরের রাউন্ডগুলিতেও ‘নোটা’র লড়েছে হাত। কংগ্রেস পেয়েছে ৩৯৫৯ ভোট। সেখানে নোটায় পড়েছে ২৬২৪ ভোট।
হাড়োয়ায় ১২ ও ১৩ রাউন্ডে কংগ্রসকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিল ‘নোটা’। শেষ পর্যন্ত নোটা থেকে দেড় হাজারের সামান্য বেশি ভোট পেয়ে মুখরক্ষা করেছে কংগ্রেস।
নৈহাটিতে কংগ্রেস পেয়েছে ৩৮৮৩টি ভোট। ‘নোটা’য় মোট ভোট পড়েছে ১৭২৮টি। এই প্রথম সেখানে বামেদের হয়ে প্রার্থী দিয়েছিল সিপিআইএমএল (লিবারেশন)। কংগ্রেসের তুলনায় তাদের ফল ভালো। সাড়ে সাত হাজারের বেশি ভোট পেয়েছে।
তালডাংরায় কংগ্রেস প্রার্থীও একের পর রাউন্ডে নোটার সঙ্গে লড়েছে। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম রাউন্ড শেষে টানা ‘নোটা’র থেকে পিছিয়ে ছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী। শেষ পর্যন্ত ‘নোটা’ থেকে কয়েকশো ভোট বেশি পেয়ে তালডাংরায় মুখরক্ষা হয়েছে হাত শিবিরের।
এই ফলের পরে মুখ বাঁচাতে বাম-কংগ্রেস (Left-Congress) নেতৃত্ব ধর্মীয় মেরুকরণের অজুহাত দিচ্ছেন। কিন্তু ভালো ফলের আশাতেই তো এই উপনির্বাচনে ঘোষিত-অঘোষিত কোনও জোট করেননি তাঁরা। কংগ্রেসের জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থেকে শেষে প্রার্থী ঘোষণা করে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। দায়িত্ব নিয়ে বামেদের তেমন পাত্তা দেননি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। একা লড়ে হাত শক্ত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নোটার সঙ্গে লড়াই করে মুখরক্ষা করত হল তাঁদের। এবার ২০২৬-এর ফর্মুলা কী হবে সেই নিয়ে চিন্তায় দুই শিবিরই। কারণ, বাংলার মানুষ শাসক বা প্রধান বিরোধীদলের প্রার্থী পছন্দ না করলেও বাম-কংগ্রেসকে (Left-Congress) প্রত্যাখ্যান করেছেন।