পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা গায়েবের ঘটনার জল গড়াচ্ছে বহু দূর। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের হাতে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে তাজ্জব ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও। আন্তঃরাজ্য যে জালের মাধ্যমে বাংলার ছেলেমেয়েদের টাকা সরিয়ে ফেলা হচ্ছিল তা নিয়ে জামতারা গ্যাংয়ের (Jamtara gang) মতো জালিয়াতদের যোগের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। পুলিশের তদন্তে কার্যত সেই তত্ত্ব প্রমাণিত হচ্ছে। তিন জেলা থেকে চারজনকে গ্রেফতারের পরে ফের মালদহ জেলা থেকে আরও চারজনকে গ্রেফতার করে পূর্ব বর্ধমান পুলিশ (East Bardhaman Police)।
মালদহের ১৯৩ পড়ুয়ার ট্যাবের (tab) টাকা গায়েব হয়ে যাওয়ায় পুলিশি তদন্তে ব্যাঙ্কগুলিকে তদন্ত করতে বলা হয়। সেই তথ্য ঘেঁটে বের করতে গিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ দেখতে পান অ্যাকাউন্টগুলি হ্যাক (hack) করা হয়েছিল। মালদহের ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের (bank manager) দাবি, রাজ্যের পাঠানো টাকা পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই সেই অ্যাকাউন্ট বদলে টাকা চলে যায় অন্য অ্যাকাউন্ট। এই কাজে খোলা হয়েছিল ভুয়ো অ্যাকাউন্টও (fake account)। এরপরই ১৮০ টি অ্যাকাউন্টকে ফ্রিজ (freeze) করা হয়। কিন্তু যে ১৩টি অ্যাকাউন্ট বদলে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে সেগুলি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বাকি ১৮০ টি অ্যাকাউন্টের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। যে আইডি থেকে টাকা তোলা হয়েছে সেগুলির সূত্র ধরে চলছে অনুসন্ধান। তবে যে ১৩টি অ্যাকাউন্ট বদলে ফেলা হয়েছে সেগুলি অপারেট হয়েছিল বাইরের রাজ্য থেকে, এমনটাই দাবি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের।
পূর্ব বর্ধমান পুলিশ যে তদন্ত চালাচ্ছিল সেখানেও মালদহের যোগ পাওয়া গিয়েছে। প্রথমেই মালদহ থেকে হাসেন আলি নামে এক সাইবার ক্যাফে মালিককে গ্রেফতার করেছিল পূর্ব বর্ধমান পুলিশ (East Bardhaman Police)। ফের মালদহ থেকে চারজনকে গ্রেফতার করা হল এই ঘটনায়। হাসেনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে মালদহে অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে পিন্টু শেখ, জামাল শেখ, শ্রবণ সরকার এবং রকি শেখ নামে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মালদহের ভগবানপুর কেবিএস স্কুলে চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার শিক্ষক (computer teacher) রকি শেখের বিরুদ্ধে একাধিক স্কুলের অ্যাকাউন্টের লগইন ক্রেডেনশিয়াল (log in credential) সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে, যা অর্থ তছরুপিতে সহায়তা করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গিয়েছে।
অন্যদিকে তদন্ত চলার মধ্যেই নতুন করে ট্যাবের টাকা গায়েব হয়ে যাওয়ার আরও উদাহরণ সামনে আসতে শুরু করে। হাওড়া (Howrah) পুলিশ কমিশনারেটের অন্তর্গত মালিপাঁচঘড়া, গোলাবাড়ি, ডোমজুড়, সাঁকরাইল থানার একাধিক স্কুলের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ এসেছে। ১৩ জন পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা শিক্ষা দফতর থেকে তাদের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হলেও সেই টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি। হাওড়া পুলিশ কমিশনার (CP, Howrah) প্রবীণ ত্রিপাঠী জানান সাইবার ক্রাইম শাখা তদন্ত চালাচ্ছে। অন্যদিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার (South 24 Parganas) গঙ্গাসাগরে মহেন্দ্রগঞ্জ হাই স্কুলে ৩১ জন ছাত্রছাত্রী ট্যাবের টাকাও গায়েব হয়ে গিয়েছি বলে জানা গিয়েছে। এনিয়ে সাগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে।