‘মঙ্গলের জন্য’, উৎপল সিনহার কলম

0
1
উৎপল সিনহা

মেয়েটি যাবে মঙ্গল গ্রহে । ফিরবে না আর কোনদিন । সে নাকি বলিপ্রদত্ত মানব জাতির স্বার্থে । ভাবলেই অদ্ভুত এক শিহরণ জাগে । মানবসভ্যতার জন্য এতো বড়ো ত্যাগ ? নিজের জীবন উৎসর্গ ? এমন ঘটনাই নাকি ঘটতে চলেছে অদূর ভবিষ্যতে !

কে এই মেয়ে ? কেন তার নিজের জীবনের প্রতি একটুও মায়া নেই ? কীভাবে তার মাথায় এই ভাবনা এলো ? কিসের টানে সে পাড়ি দিতে চায় মঙ্গলে ? তার বাবা-মা , তার পরিবারের অন্যান্য সকলে কীভাবে দেখছেন এই ব্যাপারটা ?

আশ্চর্য সিদ্ধান্ত ! নাম তার অ্যালিসা । ছোট্ট অ্যালিসার স্বপ্ন ছিল একটাই। একদিন সে যাবে লালগ্রহে । ছোটবেলায় একটা অ্যানিমেটেড কার্টুন সিরিজে সে দেখেছিল পাঁচ বন্ধু মিলে লালগ্রহে বেড়াতে গিয়েছে । তখনই মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে কৌতুহল জাগে তার। তারপর থেকে অসংখ্যবার সে কল্পনায় ঘুরে বেড়াতে থাকে লালগ্রহে । এরপর একদিন সে তার ইচ্ছে জানায় তার বাবাকে । বাবা বার্ট কার্সন সানন্দে সম্মতি জানান তৎক্ষণাৎ । তারপর ৭ বছরের অ্যালিসাকে নিয়ে আলাবামার হান্টসভিলেতে একটা স্পেস ক্যাম্পে আসেন মিস্টার বার্ট ।

সেই থেকে শুরু । ২০১৩ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সেই নাসা-র ( NASA ) সব ভিজিটর ক্যাম্পে প্রবেশের জন্য পাসপোর্ট পেয়ে ইতিহাস গড়ে ফেলে অ্যালিসা কার্টসন। নভোচারী ক্রিস হ্যাডফিল্ড ১৯৬৯ সালে জানিয়েছিলেন , মানুষ চাইলে পা রাখতেই পারে মঙ্গলে । এখন তো প্রযুক্তি অনেক উন্নত । তবে মঙ্গলে কিন্তু বিপদের আশঙ্কা রয়েছে যথেষ্ট । মঙ্গলগ্রহ থেকে ফিরে আসার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা রয়েছে । তবে এসব নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন অ্যালিসা । এসব বিপদ তাঁর তুমুল উৎসাহের কাছে তুচ্ছ । অ্যালিসা মঙ্গলে থাকবেন দুই থেকে তিন বছর। এক্সপ্লোরেশন , ট্রি-প্ল্যানটেশন , মাটি পরীক্ষা , জল ও প্রাণের খোঁজ ইত্যাদি সবই তাঁকে করতে হবে একা , সম্পূর্ণ একা । এতোবড় একটা চ্যালেঞ্জকেও ধর্তব্যের মধ্যে ধরছেন না অ্যালিসা । তাঁর শৈশবের স্বপ্ন যে শেষপর্যন্ত সত্যি হতে চলেছে সেই আনন্দেই মশগুল হয়ে রয়েছেন তিনি । ২০৩৩ সালে তাঁর মঙ্গলে পাড়ি দেবার কথা। পৃথিবী থেকে মঙ্গলের গড় দূরত্ব প্রায় ১৪০ মিলিয়ন মাইল । প্রতি ১৫ বছরে পৃথিবী ও মঙ্গল ঘুরতে ঘুরতে পরস্পরের কাছাকাছি চলে আসে । তখন দূরত্ব কমে আসে । ২০৩৩ সালে সেই দূরত্ব কমে গিয়ে মঙ্গল ও পৃথিবী ফের কাছাকাছি আসবে । সেই সময়েই অ্যালিসাকে মঙ্গলে পাঠাতে চায় নাসা ।

মঙ্গলে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে একের পর এক প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে অ্যালিসাকে । মাইক্রোগ্র্যাভিটি , অক্সিজেনের অভাবে দেহে বিভিন্ন পরিবর্তন হয় । সেসব সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে তাঁকে । তাছাড়া দিনের পর দিন শূন্যে ভেসে থাকাটাও একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ । পৃথিবী থেকে অনেক দূরে একেবারে নতুন একটা পরিবেশে সম্পূর্ণ একা থাকতে হবে তাঁকে । যে কাজ কোনোদিন কোনো মানুষ করতে পারে নি , সেই বিরল কাজ করতে হবে তাঁকে । অবশ্যই এই বিরলতর সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছেন মার্কিন মুলুকের লুইজিয়ানার হ্যামন্ডে জন্ম নেওয়া অ্যালিসা । তিনি আনন্দ প্রকাশ করেছেন এইভাবে : স্বপ্ন তাহলে সত্যি হয় !

তবে , পৃথিবীতে আর ফিরবেন না অ্যালিসা , এমন কথা কিন্তু বলছে না নাসা । নাসা জানিয়েছে , এই অভিযানে যারা যাবেন সকলেই ফিরে আসবেন পৃথিবীতে । তাহলে কি অ্যালিসা একা যাচ্ছেন না মঙ্গলে ? নাসা ব্লুবেরি ওয়েবসাইট প্রতিবেদন অনুযায়ী , অ্যালিসা আমেরিকার বাসিন্দা । মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই তার নভশ্চর হবার এবং মঙ্গলগ্রহে যাবার সখ প্রবল । আবার এমন কথাও শোনা যাচ্ছে যে , অ্যালিসার বাবা নাকি রয়টার্সকে একটি ই-মেইল করে জানিয়েছেন , তাঁর মেয়ের জীবনের মূল লক্ষ্য মঙ্গল অভিযানে যাওয়া। সেই জন্য তাঁর মেয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা ও পরিশ্রম করছেন । তবে আদৌ তাঁর মেয়েকে নাসার তরফে মঙ্গলে পাঠানো হবে কিনা তা তিনি জানেন না এখনও । তবে অ্যালিসা যে মঙ্গলে পাড়ি দেবার জন্য পা বাড়িয়ে রয়েছেন এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই ।

আরও পড়ুন- চাল উৎপাদন মূল্য‌ কুইন্টাল পিছু ১০ টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত রাজ্যের