বিদেশে যাওয়া এখন আর খুব একটা কষ্টসাধ্য নয়। তবে বাঙালি তথা ভারতীয়দের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে বাকি বিশ্বের অনেক জায়গায়ই মিল হয় না। ফলে সমস্যায় পড়তে হয়। এই সমস্যা শুধু আমজনতার নয়, সমস্যা হয় রাজনৈতিক নেতা থেকে বিশিষ্টদেরও। তবে, এ ব্যাপারে সহজ উপায় বাতলে দিয়েছেন তৃণমূল (TMC) সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandopadhyay)। নিজের বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন ‘মাই আনফরগেটেবেল মেমারিজ’ বইয়ে। আর সেখানেই মমতার পরামর্শ, বিদেশ ভ্রমণে সব সময় সঙ্গে রাখতে হবে চিড়ে-মুড়ি, যাতে খাবার নিয়ে সমস্যায় না পড়তে হয়।
বিদেশ ভ্রমণের সময় খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে প্রায়ই নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় ভারতীয়দের। আসলে ভারতীয়দের মধ্যে খাদ্যাভ্যাসের ভিন্নতা বিদেশে অস্বস্তি ডেকে আনার পক্ষে যথেষ্ট। স্বামী বিবেকানন্দ থেকে শুরু করে মহাত্মা গান্ধী-সকলেই উপলব্ধি করেছিলেন সেটা। সমাধানের পথও দেখিয়েছিলেন। গান্ধীজি ছিলেন নিরামিষাশী। ফলে বিদেশ ভ্রমণের সময় তিনি সঙ্গে রাখতেন ফল আর মিষ্টি। নোনতা খেতে ইচ্ছে করলে তাঁর পছন্দ ছিল গাঠিয়া। স্বামী বিবেকানন্দ আবার ছিলেন ঘোর আমিশাষী। বিদেশে বিশেষ করে ঠান্ডার জায়গায় মাংস খেতে পছন্দ করতেন তিনি। সেই সময় থেকে বর্তমান কাল- বিদেশে গেলে খাওয়া নিয়ে চাপে পড়তে হয় বাঙালি তথা ভারতীয়দের। বাদ যান না রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও।
এই বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর স্মৃতিকথা ‘মাই আনফরগেটেবেল মেমারিজ’-এ লিখছেন, ১৯৮৩ -তে কুয়ালালামপুরে একটি আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তিনি। সেটাই ছিল তাঁর প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। কিন্তু সেখানে গিয়ে ভারী সমস্যায় পড়েছিলেন মমতা। পামতেলের গন্ধ জননেত্রীর একেবারেই সহ্য হত না। মুখে রুচত না পামতেলের রান্না। ফলে শুধুমাত্র পাঁউরুটি খেয়েই তিনি কাটিয়ে দিয়েছিলেন ক’টা দিন। অন্য কিছুই মুখে তোলেননি। ভবিষ্যতের বিদেশভ্রমণে এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি যাতে না হতে হয়, তার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বিদেশভ্রমণের সময় সবসময়ই সঙ্গে রাখতেন অতিপছন্দের মুড়ি। বিকল্প হিসেবে চিঁড়েও। তবে ডিম যেহেতু তাঁর অত্যন্ত পছন্দের, তাই ডিমের বিভিন্ন আইটেমেও বিশেষ আস্থা ছিল তৎকালীন কংগ্রেসের যুবনেত্রীর।
একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮৭ সালে। সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসাবে সেবার ভিয়েতনাম সফরে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন রাজনৈতিক সহকর্মী গণেশ শঙ্কর পাণ্ডে। তিনি ছিলেন কঠোরভাবে নিরামিষাশী। স্বাভাবিকভাবেই ভিয়েৎনামের বাসিন্দাদের রুটির সঙ্গে মাংসপ্রীতি দেখে রীতিমতো অস্বস্তি হচ্ছিল তাঁর। মেনুতে ডিম থাকায় যুবনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য কোনও অসুবিধে হচ্ছিল না। কিন্তু বিপত্তি দেখা দিল গণেশ শঙ্কর পাণ্ডের পছন্দ-অপছন্দ নিয়েই। পাণ্ডের অনুরোধে দোভাষীর সাহায্যে রাঁধুনিদের আলুর আইটেম তৈরি করে দিতে বলেন নেত্রী। সেইমতো পাণ্ডের জন্য আসে আলুর ঝোল। খিদের মুখে বেশ তৃপ্তি করেই তা খেতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বোঝা গেল মুরগির মাংস মিশে রয়েছে তাতে। নেত্রী প্রথমে ভেবেছিলেন, বিষয়টি নজরে আসবে না সফরসঙ্গীর। কিন্তু একটা বড় হাড় দেখেই সন্দেহ হয় তাঁর। নেত্রীকে উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, মমতাজি এটা কী? শান্ত গলায় নেত্রীর উত্তর, ভেজিটেবিল। পাণ্ডে বেশ কিছুটা উদ্বেগের সঙ্গে নেত্রীকে বললেন, আপনি কেন আগেই আমাকে সাবধান করলেন না? নেত্রীর উত্তর, তাহলে আপনার খিদে পেত। এটাতো বাড়ি নয় যে আমি আপনার জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারি। আপনি যদি অন্যের উপর নির্ভর করতে না চান তবে আপনি কিছু শুকনো খাবার সঙ্গে রাখতে পারেন।
আরও পড়ুন- এবার চাঁদে তৈরি হবে বাড়ি! কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?