প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পালাচ্ছেন কেন, ‘বিশৃঙ্খলার পথে’ যাওয়া চিকিৎসকদের প্রশ্ন কুণালের

0
3

সরকারের দিকে এক নাগাড়ে প্রশ্ন করে চলা চিকিৎসকদের প্রশ্ন করেছিলেন প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। সাধারণ মানুষের একেবার মৌলিক ১৩ দফা দাবি নিয়ে প্রশ্ন তোলা তৃণমূল নেতার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কার্যত পালালেন জুনিয়র চিকিৎসকরা (junior doctors)। প্রশ্নের জবাব দেওয়ার যুক্তি না থাকা আন্দোলনকারীদের রবিবারের ‘মহাসমাবেশ’ নিয়েও প্রশ্ন তোলে শাসকদল। ধর্ষণের মতো যে সামাজিক ব্যাধি নিয়ে গোটা বিশ্ব সামাজিক সংশোধনের পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে, সেই সামাজিক ব্যাধিকে হাতিয়ার করে রাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিবেশ তৈরি করা চিকিৎসকদের নিয়েও প্রশ্ন তোলে শাসকদল।

প্রত্যেক সপ্তাহে জিবি (GB meeting) নামক আন্তর্জাতিক বৈঠক আয়োজন করছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সেই বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) প্রশ্নের জবাব তাঁরা দেবেন না। রবিবার বৈঠক শেষে সেই ঘোষণা করেন তাঁরা। ফলে সাধারণ মানুষের স্বার্থে যে ১৩ দফা প্রশ্ন তুলেছিলেন কুণাল ঘোষ তার থেকে ভয় পেয়ে পিঠটান দিলেন চিকিৎসকরা। সেই প্রশ্নের মধ্যে অন্যতম ছিল সরকারি হাসপাতালে যেমন নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে, তেমনই সেই নিরাপদ পরিকাঠামোয় ডিউটির সময় অনুযায়ী উপস্থিতি, রোগী দেখাটাও সুনিশ্চিত করবেন এক শ্রেণির চিকিৎসকরা। সরকারি হাসপাতালের কাজ ফেলে, সুবিধেমত ডিউটি বদলে বাকি সময় প্রাইভেট হাসপাতালে (private hospital) কাজ করা বন্ধ হবে না কেন। সাধারণ মানুষের করের টাকার (tax payers money) ভর্তুকিতে যাঁরা সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়বেন, তাঁদের সরকারি কাজেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। আন্দোলনের নামে কেন তাঁরা সাধারণ মানুষকেই পরিষেবা দেবেন না, প্রশ্ন তুলেছিলেন কুণাল।

কুণাল ঘোষের প্রশ্নের জবাব না দিতে পেরে রবিবার জুনিয়র চিকিৎসকরা রীতিমত গালাগালি প্রয়োগ করেন, ঠিক যেমন কুণালের প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে করতেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে তাতেও অধরা বাস্তব প্রশ্নগুলি, যেখানে কুণাল উল্লেখ করেছিলেন, কোম্পানির ব্র্যান্ডের বদলে জেনেরিক টার্মে (generic term) ওষুধের নাম লিখবেন না কেন চিকিৎসকরা। ওষুধ ও বিভিন্ন সরঞ্জাম (পেসমেকারসহ) কোম্পানির স্পনসরশিপে অনুষ্ঠান, দেশবিদেশে ভ্রমণের পরিবর্তে সাধারণ মানুষের হয়রানি বন্ধ করতে হবে এক শ্রেণির চিকিৎসকদের। পরীক্ষার নামে নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার (diagnostic center) থেকে কেউ যেন কমিশন বা যথেচ্ছ ডাক্তারদের ফি নেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। শূন্যপদ পূরণ, পরিকাঠামো বাড়ার পাশাপাশি নিজেদের কর্মক্ষেত্রকে রোগীবন্ধু রাখার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি ডাক্তারদেরও নিতে হবে, বলে উল্লেখ করেছিলেন কুণাল। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তিতে বিপুল টাকা, পড়তে টাকা, সেমিস্টারে ফেল করিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে পাশ সংক্রান্ত অভিযোগও তোলেন তিনি।

বারবার জুনিয়র চিকিৎসকরা আর জি করের নির্যাতিতার মত ঘটনা আর যেন না ঘটে তার দাবি জানিয়েছে। সেখানেই প্রশ্ন, ধর্ষণের মতো যে সামাজিক ব্যাধি নিয়ে লড়াই করছে গোটা বিশ্ব, সেখানে শুধুমাত্র বাংলার পুলিশ প্রশাসন দিয়ে কীভাবে কিছু মানুষের মনের ভিতরের সুপ্ত রাক্ষসকে বের করে আনা সম্ভব হবে। একসময় ধনঞ্জয়ের ফাঁসির ঘোষণার পরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, এই পথে শাস্তি দিয়ে ধর্ষণের মতো ব্যাধি সমাজ থেকে দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সর্বোচ্চ শাস্তি প্রয়োগের পরেও এই সামাজিক সমস্যার সুরাহা হয়নি।

তা সত্ত্বেও বারবার দাবি বদলে শহরের প্রাণকেন্দ্রে আন্দোলন করে চলেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। রবিবার সেখানেই মহাসমাবেশ প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ বলেন, দিল্লিতে বেআইনিভাবে নিজেদের দাবি তুলে ধরতে চাওয়ায় লাদাখের পরিবেশ আন্দোলনকর্মী সোনম ওয়াংচুকে (Sonam Wangchuk) গ্রেফতার করেছিল দিল্লির পুলিশ। কিন্তু কলকাতাতেও বেআইনিভাবে অনশন আন্দোলন চালানো চিকিৎসকদের সঙ্গে শুধুই আলোচনার পথে গিয়েছে রাজ্যের সরকার। কোনও ধরনের চাপ আজও প্রয়োগ করা হয়নি। সেখানেই শাসকদলের প্রশ্ন, যদি একটি নির্দিষ্ট মিডিয়ার আনুকূল্য না থাকত তবে কী এই আন্দোলন এতদিন চলত? রবিবার যে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়, কম জনসংখ্যার সেই ছবিও ড্রোন ক্যামেরায় সেই নির্দিষ্ট মিডিয়াও দেখাতে সাহস করেনি। যা থেকে স্পষ্ট, জন সমর্থন হারাচ্ছে চিকিৎসকদের “নেতিবাচক বিশৃঙ্খল পথে যাওয়া” আন্দোলন।