৪০০-৩০০ বছরের প্রাচীন বিষ্ণুপুরের রাসমঞ্চ, শ্যামরাই, জোড়বাংলো থেকে কালনার ২৫ রত্ন বিশিষ্ট টেরাকোটা মন্দির। কোথাও মল্ল রাজা কোথাও বর্ধমানের রাজাদের উৎসাহ, উদ্যোগে নির্মিত হয়েছিল মন্দিরগুলো। বাংলা মৃত্তিকাপ্রধান অঞ্চল হওয়ায় এখানে মন্দির স্থাপত্যে মাটিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আবহাওয়া পরিবর্তনের জেরে দ্রুত ক্ষতির মুখে পড়েছে বাংলার প্রাচীন এই স্থাপত্য শিল্প। ক্রমাগত ক্ষয়ে যাচ্ছে মন্দিরের দেওয়ালে নির্মাণ করা বিভিন্ন টেরাকোটার শিল্পকলা। দ্রুত সংস্কার তথা সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করা হলে এই প্রাচীন স্থাপত্য একদিন হারিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, গোটা বিশ্বের মতো ক্লাইমেট চেঞ্জ থাবা বসিয়েছে বাংলার দুয়ারেও। সেই ক্লাইমেট চেঞ্জে ক্ষতির মুখে পড়ছে বাংলার মন্দিরগাত্রের বিখ্যাত টেরাকোটার কাজ। পুরাণ থেকে মহাকাব্যের বিভিন্ন ঘটনা মাটিতে ফুটিয়ে তারপর আগুনে পুড়িয়ে প্লেট তৈরি করা হতো। সেই প্লেট মন্দিরের দেওয়ালে বসিয়ে তৈরি হতো টেরাকোটার সাজ। কিন্তু, সংরক্ষণের কথা তাঁদের মাথায় ছিল না। তাঁরা তখন ভাবেননি ধারাবাহিক বৃষ্টিতে একদিন ক্ষয়রোগ বাসা বাঁধবে। এখন কিন্তু এই মন্দিরগুলোর সংরক্ষণের দরকার হয়ে পড়েছে। না হলে একদিন হাড়-কঙ্কালে পরিণত হবে প্রাচীন এই শিল্পকর্ম।
তাই প্রকৃতির হাত থেকে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে দরকার সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ। দেখতে হবে মন্দিরের দেওয়ালে যেন জল না বসে যায়। তাহলে ফাটল তৈরি হয়ে গাছ গজিয়ে যাবে। জল জমলে তা চ্যানেল করে বার করে দেওয়া দরকার। নোনা ধরার সমস্যার সমাধানও করতে হবে একই সঙ্গে। পাশাপাশি মন্দিরের তৎসংলগ্ন এলাকায় গাছ লাগিয়ে যতটা সম্ভব দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে এই কাজ কেবলমাত্র সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব না। এগিয়ে আসতে হবে সচেতন মানুষদেরও। তাহলেই হয়তো বাঁচানো যাবে বাংলার এই পূরানো ঐতিহ্যের।
আরও পড়ুন- জয়নগর কাণ্ডে কড়া হাইকোর্ট: বিচারের ‘জাদুকাঠি’র ভুল ভাঙলেন বিচারপতি