জয়নগরে শিশুর দেহ উদ্ধার: পাঁচ ঘণ্টায় গ্রেফতার খুনি, ফাঁসি চাইবে পুলিশ

0
3

নয় বছরের শিশুর দেহ উদ্ধারের মর্মান্তিক ঘটনায় অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তির পক্ষে সওয়াল বারুইপুর জেলা পুলিশের (Baruipur police district)। পরিবারকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাসের পাশাপাশি দ্রুত চার্জশিট পেশের মাধ্যমে যাতে অপরাধীকে দ্রুত শাস্তির বিধান দেওয়া যায়, তার প্রতিশ্রুতিও দিলেন বারুইপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার (SP) পলাশচন্দ্র ঢালি। সেই সঙ্গে অপপ্রচার চালিয়ে কারা মহিষমারি ফাঁড়িতে (Mahishmari police outpost) অগ্নি সংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়েছিল, তার তদন্তও শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে দেহ উদ্ধারে খুনের মামলা রুজু হলেও ময়নাতদন্তের (postmortem) রিপোর্টের আগে ধর্ষণের মামলা রুজু হয়নি এই ঘটনায়।

শনিবার সন্ধ্যায় তথ্য প্রমাণ সহ পুলিশের পদক্ষেপের খতিয়ান তুলে ধরেন পুলিশ সুপার (SP) পলাশচন্দ্র ঢালি। তিনি জানান, বিকাল ৫টা নাগাদ বাবার দোকান থেকে পড়ার জন্য বেরোয় নাবালিকা। আটটা নাগাদ বাড়ি ফেরেনি দেখে মহিষমারি ক্যাম্পে নাবালিকার বাবা জানায় রাত ৮.৩০ নাগাদ। সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) নির্দেশ অনুযায়ী মিসিং ডায়েরি হয় না, এফআইআর করতে হয়। সেই অনুযায়ী জয়নগর থানায় পাঠানো হয়। যদিও এই গোটা সময়টায় ফাঁসির এএসআই তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করে দেন। জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হয় শেষ যাঁরা নাবালিকাকে দেখে ছিলেন তাঁদের। সেই সূত্র অনুযায়ী নাবালিকার এক বন্ধুকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর তাঁদের বর্ণনা ও স্থানীয় সিসিটিভির (CCTV) ফুটেজ থেকে রাত দুটোর সময় আটক এক ব্যক্তি। সেই ব্যক্তি স্বীকার করে সে মেয়েটিকে মেরে ফেলে দিয়েছে।

গোটা প্রক্রিয়ার সময় পুলিশ নিয়মিত নাবালিকার বাবার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখে বলেও জানান পুলিশ সুপার। ২.৪০ নাগাদ ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়েটির দেহ উদ্ধার করা হয়। ২.৪৫ বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। দেহ পাঠানো হয় স্থানীয় হাসপাতালে। এবং এই গোটা সময়ের রেকর্ড পুলিশের কাছে রয়েছে বলেও জানান তিনি। রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ এফআইআর দায়ের হলেও পুলিশ আগেই তদন্ত শুরু করার দাবিও জানান তিনি। গোটা প্রক্রিয়ায় পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে কুণাল জানান, “জেলার পুলিশ সুপার-সহ বাকিরা দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ করেছেন। ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়।” সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “পুলিশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাল কাজ করছে। কিন্তু কখনও কখনও নিচুতলার দু’একজনের জন্য সরকারের ঘাড়ে দায় চাপছে।”

অন্যদিকে শিশুর দেহ উদ্ধারের ঘটনায় সকাল থেকে উত্তপ্ত জয়নগরে ঘোলা জলে মাছ ধরার মরিয়ে চেষ্টা বাম-বিজেপির। দেহ উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টার মধ্য়েই মূল অভিযুক্ত তরুণকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপরেও স্থানীয় বাসিন্দাদের খেপিয়ে পরিস্থিতি সারাদিন ধরে উত্তপ্ত করে রাখতে ইন্ধন দিলের বাম নেত্রী মীনাক্ষি মুখার্জি ও বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল। হাসপাতাল থেকে থানা, গ্রামে পুলিশের কাজে বাধা থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের উত্তপ্ত করে যেভাবে পরিস্থিতি খারাপ করে বিরোধীরা তার কড়া নিন্দা করে শাসকদল। প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষের কথায়, “সিপিএম-বিজেপি ওখানে শকুনের রাজনীতি করতে গিয়েছে। বাম জমানায় এরকম খুন-ধর্ষণের ঘটনা একাধিক ঘটেছে। ডিসি (পোর্ট) বিনোদ মেহেতাকে কুপিয়ে মারা হয়েছে। আর বিজেপি রাজ্যগুলিতে তো পরপর ধর্ষণ-হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। ফলে গ্রামবাসীদের অনুরোধ করব, ওদের কথায় কান দেবেন না। পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। শনিবার এলাকায় যান সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল এবং স্থানীয় বিধায়ক গণেশ মণ্ডল।”

শনিবার ধৃত তরুণকে আদালতে তোলা হলে তার পক্ষে কোনও আইনজীবী সওয়াল করেনি। পুলিশের দাবি জেরায় খুনের কথা সে স্বীকার করেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী ধর্ষণের ধারা যুক্ত করার কথাও জানায় পুলিশ। পুলিশ ধৃতের সাতদিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন করলে বারুইপুর আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে।