বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যদি অপরাধ করে থাকেন, তবে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। বুধবার আমেরিকার নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। জানুয়ারি মাসের ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন শেখ হাসিনা। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়ে আওয়ামি লিগ। কিন্তু ছয়মাসের মধ্যেই ছন্দপতন। শুরু হয় সরকারি চাকরিতে কোটা বিরোধী আন্দোলন।সেই আন্দোলনই রূপ নেয় ‘হাসিনা হঠাও’ অভিযানে। গণঅভ্যুত্থানের জেরে গদি হারান হাসিনা।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে কবে নির্বাচন হবে, তার কোনো সময়সীমা তাঁর কাছে নেই। যে কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছে, তারা সামনের মাসগুলোতে সংস্কার সুপারিশ দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তারপর নির্বাচনের জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হবে।শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে আছেন। তাঁকে ফেরানো (প্রত্যর্পণ) হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘কেন হবে না?’
এর পরই প্রশ্ন ওঠে মুজিবকন্যার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পিছনে বড় কোনও ষড়যন্ত্র ছিল? কারও অঙ্গুলিহেলনেই কি বড় আকার নেয় ছাত্র আন্দোলন? এবার নিউ ইয়র্কে দাঁড়িয়ে হাসিনার গদি হারানোর পিছনে ষড়যন্ত্রের কথা মেনে নিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মহম্মদ ইউনুস। এমনকী অন্যতম ষড়যন্ত্রকারীর নামও প্রকাশ্যে বললেন তিনি।
হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন বাংলাদেশে ক্ষমতায় অন্তর্বর্তী সরকার। ছাত্র-জনতার দাবি মেনে এই সরকারের প্রধান করা হয়েছে ইউনুসকে। দিন তিনেক আগে রাষ্ট্রসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে গিয়েছিলেন তিনি। অধিবেশনের পাশাপাশি প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস স্টেজ’ অনুষ্ঠানেও যোগ দেন ইউনুস। বিশ্বমঞ্চে তিনি পরিচয় করিয়ে দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা তিন জনের সঙ্গে। এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় ইউনুস কথা বলেন হাসিনা সরকারের পতন নিয়ে। ষড়যন্ত্রের কথা মেনে নিয়ে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়া কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। এর পিছনে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল। এই প্রতিবাদের পিছনে কে ছিল সেটা কেউ বলতে পারবে না।” এর পরই ইউনুস মেহফুজ আবদুল্লা নামে একজনের কথা উল্লেখ করেন এবং বুঝিয়ে দেন যে, এই ব্যক্তিই হাসিনার গদিচ্যুত হওয়ার ষড়যন্ত্রে জড়িত। যদিও মেহফুজ আবদুল্লার সম্পর্কে এর থেকে বেশি কিছু আর বলেননি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ।
ইউনুসের এই বক্তব্যের পরেই জল্পনা শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। প্রশ্ন উঠছে, কে এই মেহফুজ আবদুল্লা? কার নির্দেশে ছক কষা হয়েছিল হাসিনার বিরুদ্ধে? বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের দেড় মাস পেরিয়ে গিয়েছে।এবার আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরলেন ইউনুস।বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বহুবার অভিযোগ জানিয়েছিলেন যে, তাকে গদিচ্যুত করতে চায় আমেরিকা। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের সময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ঢাকাকে তোপ দেগেছিল ওয়াশিংটন। এছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে সেনাঘাঁটি তৈরির আবেদন জানিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। যা ফিরিয়ে দেন হাসিনা। তার পর থেকেই দুদেশের সম্পর্কের ফাটল বাড়ে। হাসিনার প্রস্থানের পর এখন ইউনুস সরকারের সঙ্গে বন্ধুত্ব মজবুত করতে চায় আমেরিকা।
ড. ইউনূস বলেন, নির্বাচনে দাঁড়ানোর কোনও পরিকল্পনা তার নেই। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আমাকে দেখে কি মনে হয়, আমি নির্বাচনে লড়ব?’ গতকাল নিউইয়র্কে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস আয়োজিত ‘ক্লাইমেট ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক সম্মেলনে অংশ নেন ড. ইউনূস।