ফেডারেশন আমাদের শক্তি, পরিচালকদের ‘তুঘলকি শাসনের’ বিরোধিতায় বিবৃতি হেয়ার স্টাইলিস্ট গিল্ডের

0
3

বাংলা বিনোদন জগতে (Bengali Entertainment Industry) থ্রেট কালচারের অভিযোগ আর ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া এবং ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার যুদ্ধের মাঝেই পরিচালকদের কাঠগড়ায় তুলল সিনে অ্যান্ড ভিডিও হেয়ার স্টাইলিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (Cine & Video Hair Stylist Association )। কাজ না পাওয়ার দাবি তুলে শিল্পী তনুশ্রীর আত্মহত্যার চেষ্টাকে নিয়ে যে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভ উগরে দেওয়ার চেষ্টা করছেন পরিচালকরা তার বিরুদ্ধেই এবার সরব ভিডিও হেয়ার স্টাইলিস্টদের সংগঠন। ডিরেক্টরস গিল্ড বারবার ফেডারেশনের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেও কেশসজ্জা শিল্পীরা স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিলেন যে তাঁরা ফেডারেশনের সঙ্গে আছেন। অফিসিয়াল বিবৃতিতে তাঁরা লেখেন,’আপনারা প্রশ্ন তুলেছেন যে ফেডারেশন কী? ফেডারেশন তো শুধুমাত্র একটি ট্রেড ইউনিয়ন। আমরা বলছি ফেডারেশন আমাদের কাছে আমাদের শক্তি। আমাদের কাছে ইন্ডাস্ট্রিতে মাথা উঁচু করে কাজ করার চাবিকাঠি। দিনের পর দিন যে অমানবিক খাটুনি আমাদের দিয়ে করানো হয়েছে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর স্তম্ভ। আমাদের আবেগ। কারণ আমরা জানি ফেডারেশন ছাড়া কেউ নেই যারা আমাদের কথা বলবে। তা এতদিনে প্রমাণিত। আপনারাই প্রশ্ন তুলেছিলেন যে আমরা এতজন কলাকুশলী কেন ফেডারেশনকে মেনে চলি? তার একটাই উত্তর আমরাই ফেডারেশন। আমরা কোনও ব্যক্তি নই, আমরা সমষ্টি। আর আমাদের বর্তমান সভাপতি আমাদের পথপ্রদর্শক।’ অর্থাৎ কার্যত ফেডারেশনের পাশে দাঁড়িয়েই নিন্দুক এবং সমালোচকদের একহাত নিল হেয়ার স্টাইলিস্ট গিল্ড।

দিন কয়েক আগে টলিপাড়ায় কেশসজ্জা শিল্পীর আত্মহননের প্রচেষ্টাকে শিখণ্ডী করে পরিচালক মহলের ব্যক্তিগত আক্রোশ নেমে এসেছে ফেডারেশনের উপর। মাসখানেক আগে রাহুল মুখোপাধ্যায়ের সাসপেনশনের সময়ও কার্যত একই ছবি দেখা গেছিল। কিন্তু এবার রুখে দাঁড়ালেন সিনে অ্যান্ড ভিডিও হেয়ার স্টাইলিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে দীর্ঘ বিবৃতি দিয়ে তাঁরা লেখেন, ‘ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত ২৬টি গিল্ড এতদিন একসঙ্গে সঙঘবদ্ধভাবে কাজ করেছেন কিন্তু তার মধ্যে একটি গিল্ড সব সময় চেষ্টা করছে একপেশেভাবে তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার।কয়েকদিন আগে আমাদেরই এক সহকর্মী এক কেশসজ্জা শিল্পী গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করার প্রচেষ্টা করেন। যা অত্যন্ত অনভিপ্রেত এবং দুঃখজনক। কিন্তু তাঁকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করা সংক্রান্ত যে দাবি করা হচ্ছে তা ঠিক নয়। এছাড়াও অভিযোগ করা হয় যে ওই শিল্পীকে নাকি কোন কাজ করতে দেওয়া হচ্ছিল না। কিন্তু আমরা প্রমানসহ বলতে পারি কী কী কাজ বর্তমানে তিনি করছিলেন। আমাদের কোনও সহকর্মী যদি নিজের প্রচেষ্টায় কোন কাজ যোগাড় করেন তা কেড়ে নেওয়া আমাদের কাজ নয় বা এরকম আমরা করি না। আমরা সব সময় বলি যে আপনারা যেখানে কাজ করতে যাচ্ছেন সেটা গিল্ড এবং ফেডারেশনের জানা অত্যন্ত জরুরী। সেক্ষেত্রে পরবর্তীকালে আপনাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত অথবা পারিশ্রমিক সংক্রান্ত যেকোনও সমস্যায় আমরা যাতে এক হয়ে সেই সহকর্মীর হয়ে লড়তে পারি।’ অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে ফেডারেশনকে কালিমা লিপ্ত করার জন্য এবং সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসকে টার্গেট করে মিথ্যে খবর মিডিয়া এবং টলিপাড়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। হেয়ার স্টাইলিস্ট আর্টিস্টটা প্রশ্ন পেলেন, যখন দিনের পর দিন তাঁদের উপর অত্যাচার হয় তখন আজকের এই প্রতিবাদী মুখরা কোথায় থাকেন? যখন দিনের মধ্যে ২০ ঘণ্টা , ২২ ঘণ্টা কখনও আবার একটানা ২৬ ঘণ্টা কাজ করানো হয় তখন কেন তাঁদের পাত্তা পাওয়া যায় না? আর আজ একটা প্ররোচনামূলক ঘটনাকে সামনে দাঁড় করিয়ে নিজেদের প্রতি হিংসা চরিতার্থ করার চেষ্টা চলছে।

সিনে অ্যান্ড ভিডিও হেয়ার স্টাইলিস্ট অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে যে যাঁরা এখন এত বড় বড় কথা বলছেন তাঁরা কোনদিনই কলাকুশলীরা সময়মতো পারিশ্রমিক পাচ্ছেন কিনা বা কোন অমানবিক ঘটনার শিকার হচ্ছেন কিনা এসব নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না। স্বার্থপরের মতো প্রতিমুহূর্তে নিজেদেরকে প্রাধান্য দিয়ে আজ ঘোলা জলে মাছ ধরতে ব্যস্ত তাঁরা। যদিও কলা কৌশলীদের তরফে কোন পরিচালকের নাম বা সংগঠনকে প্রত্যক্ষভাবে উদ্দেশ্য করে কিছু না বলা হলেও ফেডারেশনের ভূমিকা নিয়ে যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে তার প্রতিবাদের সরব হয়েছেন কেশসজ্জা শিল্পীরা। তাঁরা বলেন, সুপিরিয়োরিটি কমপ্লেক্সকে স্যাটিসফাই করার জন্য পরিচালকরা যখন দিনের পর দিন তুঘলকি শাসন চালিয়ে গেছেন তখন পাশে ছিল এই ফেডারেশন, যে গণতান্ত্রিক এবং আইনসম্মতভাবে লড়াই করার, মাথা উঁচু করে প্রতিবাদ করার ভরসা যুগিয়েছে। প্রত্যেকের কাজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেছে। মহিলা সহকর্মীদের সুরক্ষার কথা না ভেবে মধ্যরাতে প্যাকআপের পর যখন প্রতিবাদী মুখেরা গাড়ি দিতে চাননি। তখন ফেডারেশন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আর এই কারণেই ফেডারেশনকে কলুষিত আপনার প্রচেষ্টা চলছে বলে দাবি করেছেন কেশসজ্জা শিল্পীরা। অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে, ‘তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে!’

সবশেষে , সিনে অ্যান্ড ভিডিও হেয়ার স্টাইলিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের তরফে বিবৃতিতে লেখা হয়, ‘একটা কথা মনে করিয়ে দিই আমরা সমস্ত কলাকুশলীরা এক ছিলাম এক আছি এবং এক থাকব। আমাদের প্ররোচনা দিয়ে লাভ হবে না। আপনাদের অভিসন্ধি আমরা ধরে ফেলেছি।স্বার্থ সিদ্ধির জন্য নিজেদের গিল্ডের সন্মান নষ্ট করেছেন আর সাথে সাথে ফেডারেশন ভাঙার কাজে লিপ্ত রয়েছেন । ফেডারেশনের প্রায় সাড়ে আট হাজার সদস্যদের আবেগ ও ভালোবাসা আর বিশ্বাসে আঘাত করার চেষ্টা করেছেন। আমরা চাই আমাদের কর্মক্ষেত্র সত্যি সত্যি ভয়হীন হোক। সত্যি সত্যি পক্ষপাতমুক্ত হোক এবং এই দুর্গোৎসবে আপনাদের শক্তির অপব্যবহারের এবং আপনাদের এই তুঘলকি শাসনের এবার সম্পূর্ণ বিনাশ হোক।’ শেষে শ্রমিক ঐক্য এবং ফেডারেশনের জয়ধ্বনিও দিয়েছে, হেয়ার স্টাইলিস্ট গিল্ড।