হিন্ডেনবার্গের নয়া রিপোর্টকে ঘিরে তোলপাড় দেশের রাজনীতি। সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে বিরোধীপক্ষ। একই সঙ্গে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত এবং সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত দাবি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেছেন, অতীতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুপ্রিম কোর্টের বৃহৎ বেঞ্চের নজরদারিতে তদন্তই আমরা বেশি পছন্দ করেছি। কিন্তু এবারে এই বিষয়টির গুরুত্বই আলাদা। সেই কারণেই একই সঙ্গে এই বৃহৎ দুর্নীতির পর্দা ফাঁস করতে আমরা দু ধরণের তদন্ত চাইছি। পাশাপাশি সিট গঠনেরও দাবি জানান হয়েছে।
লক্ষণীয়, আদানি এবং সেবির যোগসাজশ-রহস্য ভেদ করতে সুপ্রিম কোর্টের কোনও বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত করানোর দাবি তুলে সরাসরি নরেন্দ্র মোদি সরকারকে নিশানা করেছেন বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ, অবসরপ্রাপ্ত আইএএস জহর সরকার৷ রবিবার প্রবীণ তৃণমূল সাংসদের এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, সেবি প্রধান মাধবী বুচের পদত্যাগ চান প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী৷ তারপরে গোটা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করুন সুপ্রিম কোর্টের কোনও একজন দৃঢ়চেতা বিচারপতি৷ খতিয়ে দেখা হোক আদানি গোষ্ঠীতে সেবি প্রধান এবং তাঁর স্বামীর বিনিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় যোগসাজস৷ একইরকমভাবে তোপ দেগেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও৷ টুইটে তাঁর প্রশ্ন, আদানির স্টাইলে গোটা ঘটনা ঘটানো হয়েছে৷ পুঁজিপতিদের আস্ফালন৷ এর পরেকি ইডি, সিবিআই মামলা করবে?
হিন্ডেনবার্গের নতুন রিপোর্টে আদানি এবং সেবি যোগাযোগ সামনে আসার পরে গোটা দেশে বিতর্কের ঝড় উঠেছে৷ আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া বা সেবির যোগসাজস নিয়ে মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সেই রিপোর্টে সরাসরি অভিযোগের তীরের মুখে পড়েছেন সেবি প্রধান মাধবী পুরী বুচ৷ অভিযোগ উঠেছে, সেবির চেয়ারপার্সন এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা আদানি গোষ্ঠীতে অন্যতম বিনিয়োগকারী৷ হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের এই রিপোর্টকে হাতিয়ার করেই সুর চড়াতে শুরু করেছে ইন্ডিয়া জোট৷ সবার আগে সরব হয়েছে ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক দল তৃণমূল কংগ্রেস৷
উল্লেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেসের দেখানো পথে হেঁটেই গোটা বিষয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস শিবির৷ স্বার্থের সংঘাত না রেখে অবিলম্বে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করে তদন্ত শুরু করার দাবি তুলেছে কংগ্রেস৷ এই প্রসঙ্গেই প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের প্রশ্ন, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ নিয়েই তদন্তে গড়িমসি করেছে সেবি, এটা নতুন ঘটনা নয়৷ শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রণ যে সংস্থার হাতে সেই সংস্থার বিরুদ্ধেই যখন অভিযোগ উঠছে, তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করবে কে? এই মর্মেই জয়রাম রমেশের সংযোজন, কেন সংসদের বাজেট অধিবেশন ১২ আগস্টের পরিবর্তে তড়িঘড়ি ৯ আগস্ট মুলতুবি করে দেওয়া হল, তা এবার স্পষ্ট হচ্ছে৷
তাৎপ৷র্যপূর্ণ হল, আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে সেবি প্রধানের যোগাযোগ বোঝানোর জন্য নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে একটি ঘটনাক্রম তুলে ধরেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র৷ তাঁর অভিযোগ, ২০১৫ সালে আদনি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ করেছিলেন বর্তমান সেবি প্রধান৷ ২০১৭ সালে সেবিতে যোগদান করার আগে যৌথ সম্পত্তি স্বামীর নামে করে দেন সেবি প্রধান৷ এর পরেই সাংসদ মহুয়া মৈত্রর অভিযোগ, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট৷ এই কমিটি জানায় বিস্তারিত তথ্য না মেলায় বিদেশে আদানি গোষ্ঠীর অর্থ বিনিয়োগ সংক্রান্ত তদন্ত করা যাচ্ছে না৷ এই ক্লিন চিটকে কাঠগড়ায় তুলে মহুয়ার প্রশ্ন, এবার কি ইডি-সিবিআই আদানি-সেবি যোগাযোগ নিয়ে তদন্ত করবে? তাঁর কথার সূত্র ধরে একই দাবি তুলেছেন শিবসেনা(উদ্ধব গোষ্ঠী) সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী৷ নয়াদিল্লিতে রাজনৈতিক সূত্রের দাবি, আদানি-সেবি যোগসাজসের অভিযোগে বৃহত্তর আন্দোলনে নামা যায় কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন ইন্ডিয়া জোটের প্রথম সারির দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন- বাংলার চটশিল্পকে ধ্বংস করছে কেন্দ্র! প্রতিবাদে সোমবার অবস্থান বিক্ষোভ INTTUC-র