মোহনবাগান দিবসের দিনে উত্তরপাড়ায় আনন্দের বাতাবরণ। একদিকে বর্ষ সেরা সমর্থকের পুরস্কার পাচ্ছেন উত্তরপাড়ার টোটো চালক অজয় পাসোয়ান অন্যদিকে মোহনবাগানের মরণোত্তর লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেতে চলেছেন উত্তরপাড়ার প্রয়াত ফুটবলার বিমল মুখোপাধ্যায়। একদিকে বিমল মুখোপাধ্যায়ের বাবা মনমোহন মুখোপাধ্যায় ছিলেন অমর একাদশের একজন অন্যতম যোদ্ধা। অন্যদিকে মোহনবাগান দলের অধিনায়ক হিসেবে প্রথম আইএফএ লিগ জয় করেন তার ছেলে বিমল মুখোপাধ্যায়। ২৯ শে জুলাই মোহনবাগান দিবস উপলক্ষে মোহনবাগান ক্লাবে সংবর্ধনা জানানো হবে বিমল মুখোপাধ্যায়কে।
এই দিন ১৯১১ সালে ব্রিটিশদের বিপক্ষে ১১ জন বাঙালি ছেলে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল ব্রিটিশদেরকে হারানোর। বুট পরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে খালি পায়ে মাঠে খেলতে নামেন ১১ জন তরুণ। লক্ষ্য তাদের তখন একটাই, হেস্টিংস-এর মাথায় ইংরেজদের পতাকা উড়ছে তাকে নামিয়ে দেশের পতাকা তোলা। সেই ঐতিহাসিক মোহনবাগান একাদশের অন্যতম ছিলেন হুগলির উত্তরপাড়ার মনমোহন মুখোপাধ্যায়। ইংরেজদের বিরুদ্ধে যে গোলটি অভিলাশ ঘোষ করেছিলেন তার পাস বাড়িয়েছিলেন মনোমোহন মুখোপাধ্যায়। সেই সময় গোটা দেশের লোক তাকিয়েছিল শুধু ওই ১১ জনের দিকে । সেদিন রক্তাত পায়ে গোটা মাঠে ইংরেজদের পা থেকে চুম্বকের মতন বল কেড়ে নিচ্ছিলেন তিনি। ১৯১১ সেই ঐতিহাসিক জয় আজও প্রতিটি বাঙালির মনে জ্বলজ্বল করছে। স্বর্ণাক্ষরে ভারতের ও ফুটবলের ইতিহাসে লেখা রয়েছে হাবুল, সুকুল, শিবদাস, মনমোহন দের নাম।
সেদিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে জানা যায়, মনমোহন মুখোপাধ্যায় চাকরি করতেন তৎকালীন রাইটার্সের পিডব্লিউডিতে। খেলার দিন সকালে তিনি উত্তরপাড়ার গঙ্গার ঘাটের স্নান সেরে রওনা দেন অফিসে। সেখানে জানান, তার সেই দিন একটি জরুরী কাজের জন্য ছুটি লাগবে। যেহেতু ইংরেজদের সময় এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধেই তিনি মাঠে খেলতে নামছেন, তাই তিনি অফিসকে জানাতে পারেননি আসল বিষয়। তবে সেখান থেকে বেরিয়ে কলকাতা মাঠে তিনি পৌঁছান পায়ে হেঁটেই। অধিনায়ক শিবদাস ভাদুড়ি মনমোহনকে ডাকতেন মনু বলে। ডানদিকের মাঝমাঠ থেকে খেলা পরিচালনা করার দায়িত্ব ছিল তার উপর। তার নাতি নিখিল মুখোপাধ্যায় বলেন, তিনি লোক মুখে শুনেছেন মানুষজন মনে করত মনমোহন বাবুর হয়তো দুটি ফুসফুস রয়েছে। তিনি একাই নিজেদের ডিফেন্স থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট অবধি ছুটে বেড়াতেন। আর চুম্বুকের মতন বিরোধীদের পা থেকে বল কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তার প্রধান কাজ। মোহনবাগানের সেই ঐতিহাসিক জয়ের আজ ১১১ বছর অতিক্রম করল।
কিন্তু আজও প্রত্যেক বাঙালির মনে মোহনবাগানের সেই জয় বারবার নাড়া দিয়ে যায়। হুগলির উত্তর পাড়ায় রয়েছে মনমোহনবাবুর বাড়ি। উত্তরপাড়ার টিপটপ বাসস্ট্যান্ডের সামনেই দেখা যাবে তার মূর্তি। তার নামে রয়েছে উত্তরপাড়ায় একটি মাঠও। মোহনবাগান দিবসের দিন প্রতি বছর তার মূর্তিতে মাল্যদান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন জেলার প্রতিটি ফুটবলপ্রেমী মানুষ।