বাংলার প্রতি বঞ্চনা: ‘BUDGET’ বর্ণের ব্যাখ্যা করে সংসদে প্রতিবাদের ঝড় তুললেন অভিষেক

0
1

কেন্দ্রীয় বাজেটে বাংলার প্রতি বঞ্চনা। ‘BUDGET’ বর্ণের ব্যাখ্যা করে বুধবার লোকসভায় প্রতিবাদের ঝড় তুললেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। এদিন ভাষণের প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন অভিষেক। মঙ্গলবার, পেশ হওয়া তৃতীয় মোদি সরকারের পূর্ণাঙ্গ বাজেটকে তীব্র আক্রমণ করে তিনি বলেন, শরিক দলগুলিকে তুষ্ট করতেই এই বাজেট পেশ করা হয়েছে। তাঁর কথায়, এই বাজেট আসলে দেশবাসীর সঙ্গে প্রতারণা।

এর পরেই বাংলার প্রতি একের পর এক বঞ্চনার খতিয়ান দেন অভিষেক।

B- BETRAY (প্রতারণা)
দিশাহীন বাজেটে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে। মোদি সরকার দলের প্রচারে আর সাম্প্রদায়িক কুৎসায় সময় ব্যয় করেছে। নাগরিক, বধূ, দিনমজুর, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি

আলু, পিয়াজ, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছে। নড়বড়ে সরকার বাঁচাতে তোষণের রাজনীতি করা আর চলবে না। বাংলাকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে বিজেপি।

U- UNEMPLOYMENT (বেকারত্ব)
দুকোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশে সর্বকালীন বেকারত্ব বৃদ্ধি। বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও কিন্তু বেটিদের চাকরি দেয়নি মোদি সরকার। কন্যাশ্রী বিশ্বের কাছে পুরস্কৃত। দেশ এটাকে মডেল করুক।

D-DEPRIVE (বঞ্চনা)
বাংলায় একের পর এক নির্বাচনে হেরে সমানে বঞ্চনা করছে বিজেপি সরকার। ২০২১-এ বাংলায় চূড়ান্ত পরাজয়ে পর বাংলাকে কী দিয়েছে, শ্বেতপত্র প্রকাশ করে দেখাক-চ্যালেঞ্জ ছোড়েন অভিষেক। বলেন, আবাসের টাকা জোর করে আটকে রেখেছে। ১০০দিনের কাজ করিয়ে টাকা দেয়নি। যখন আমরা দাবি জানাতে দিল্লি যাই, পুলিশ দিয়ে তৃণমূলের মহিলা সাংসদদের নিগ্রহ করা হয়। বন্যার বরাদ্দ নিয়েও বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে। আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িকে উদ্দেশ্য করে অভিষেক বলেন, এই দুই জায়গার মানুষ দেখছে। এই দুটি আসনেই জিতেছে বিজেপি। সড়ক যোজনার টাকা দেয়নি মোদি সরকার। পথশ্রী প্রকল্প করে রাস্তা করেছে রাজ্য সরকার।

দেশে বিজেপি-র কোনও মুসলিম সাংসদ নেই। বিজেপি-র মহিলা সাংসদ ১৩শতাংশ। আর তৃণমূলের ৩৮ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি শিক্ষকের পদ খালি বিজেপি শাসিত রাজ্যে। ভারতের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির নাম নিট।

G- GUARANTEE WITH ZERO WARRANTY (ওয়ারেন্টি ছাড়া গ্যারেন্টি)
কালোটাকা ফিরিয়ে আনবেন বলে নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন। তিনি নোটবন্দি করেন। কিন্তু পারেনি। কোনও টাকা ফেরেনি। পর পর ট্রেন দুর্ঘটনা সত্ত্বও রেল বাজেটে কবজ নিয়ে কোনও ঘোষণা হয়নি। সন্ত্রাসবাদ মুক্ত করার প্রতিশ্রুতিও মুখ থুবড়ে পড়েছে। ৬ মাসে ২৬টি জঙ্গি হামলা তার প্রমাণ। সবার মাথায় ছাদের প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু বাংলাকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকাই দেয়নি মোদি সরকার। সবার বাড়িতে জল-আলো পৌঁছনোর প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। শুধু বাড়ছে বিজেপি-র ভুয়ো প্রতিশ্রুতির তালিকা।

E-ECCENTRIC (খ্যাপামি)
এই বিষয়ে কোভিডকালের লকটাউনের প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন অভিষেক। বলেন, পরিকল্পনাহীন লকডাউন ঘোষণা করেন মোদ। ফলে ঝুঁকি নিয়ে ফিরতে গিয়ে জীবনহানি হয়েছে। কৃষি বিল নিয়ে আলোচনা হয়নি। অথচ কৃষক আনন্দোলে ৭০০ কৃষক প্রাণ হারিয়েছেন। নোটবন্দির সময় চূড়ান্ত সমস্যা হয়েছে।

T-TRAGEDY (দুঃখজনক ঘটনা)
যখন কলকাতায় সেতু ভেঙেছে তখন, মোদি বলেছিলেন, “ভগবানের মার নয়, প্রতারকের কাজ”। কিন্তু তার পরে গুজরাট, বিহারে একের পর এক সেতু বিপর্যয় হয়েছে। পর পর রেল দুর্টনা ঘটনা। শয়ে শয়ে মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। তীব্র কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, এগুলিকে কী বলবেন, “ভগবানের মার নয়, প্রতারকের কাজ”। তৃণমূল সাংসদের অভিযোগ, রেলমন্ত্রীর হাতে রক্ত লেগে আছে। গত দেড়বছর ধরে মণিপুর জ্বলছে।

বাজেটে দেশের অবিজেপি রাজ্যগুলির প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলে অভিষেক বলেন, ‘এই বাজেটে বেছে বেছে ৩টি রাজ্যকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তা হল তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ ও কর্নাটক।’ অভিষেকের কথায় এটা কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়, “এই তিন রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে অবিজেপি দল। তাই এই বঞ্চনা।” বাজেটে বাংলার বঞ্চনা তুলে ধরার পাশাপাশি রাজ্য সরকারের প্রকল্পের খতিয়েও তুলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।