লোকসভা ভোটের ফল উপভোগ করার, কিন্তু আত্মতুষ্টি নয়: ‘জাগো বাংলা’য় বার্তা অভিষেকের

0
1

লোকসভা ভোটে বিপুল জয়ের পরে প্রথম একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) কী বার্তা দেন সেদিকে তাকিয়ে কর্মী-সমর্থকরা। তার আগে রবিবার সকালে, দলীয় মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র জন্য কলম ধরে অভিষেক লিখলেন, “ভোটের ফলে উপভোগ করার, কিন্তু আত্মতুষ্টি নয়।“

আর কী লিখলেন, অভিষেক-

‘ইতিহাস সর্বদা আমাদের শিক্ষক। ইতিহাস স্মৃতি-মেদুরতায় যেমন আমাদের জর্জরিত করে, তেমন কোনও কোনও স্মৃতি উসকে দিয়ে, আমাদের অশ্রুজলে সিক্তও করে। একুশে জুলাই দিনটি আবেগকম্পিত স্মৃতির আলেখ্যে লেখা এক আকাশ ভাস্বর প্রভার নাম। এই দিন শহিদ তর্পণের দিন। প্রতি বছর একুশে জুলাই আমাদের কাছে নবরূপে ধরা দেয়। আমরা প্রতি বছর আজকের দিনে অদম্য লড়াইয়ের চেতনায় পুনরায় উদ্বুদ্ধ হই। শপথ গ্রহণ করি এগিয়ে চলার। দিনটির মাহাত্ম্য আমাদের কাছে অপরিসীম। যে তেরো জন বীর শহিদকে আমরা আজকের দিনে চিরতরে হারিয়েছিলাম, তাঁদের সকলকে বিনম্র চিত্তে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি।

এবারের একুশে জুলাই বরাবরের মতন নতুন বার্তা বহন করে এনেছে আমাদের কাছে। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে গণদেবতাই শেষ কথা বলেছেন, ক্ষয় পেয়েছে স্বৈরতন্ত্রের বিষ দাঁত, ধর্মের নামে অধর্মের নেশায় বুঁদ করে রাখতে চাওয়া বিজেপিই অযোধ্যায় দেখেছে সংবিধান এবং সততার জোর। আমরা এক নতুন সূর্যোদয় দেখেছি, যেখানে অরাজকতার প্রভাববিস্তারী বিজেপি- আজ কিছুটা হলেও পিছপা হতে বাধ্য হয়েছে। নিশ্চিতভাবে এই জয় মা-মাটি-মানুষের। এই জয়ের আনন্দ যতটা মধুর, ঠিক ততটাই উপভোগ্য। কারণ, বিগত দশ বছরে ভারতের পবিত্র মাটিতে গণতন্ত্র ও সংবিধানকে বারংবার বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে যারা, তারা আজ উল্লাসের মঞ্চ থেকে সরে গিয়ে দূরে কোথাও হিসেবনিকেশ করছে— কোনও ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত কাজে এল না তাদের। তবুও এখনও অনেকটা পথচলা বাকি। নির্মূলভাবে এই ঘাতক শক্তির পরাজয় নিশ্চিত করতে হবে।

তাই আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। উপনির্বাচনেও, বাংলা-সহ দেশের অধিকাংশ মানুষ ভরসা রেখেছেন আমাদের উপর। একুশে জুলাইয়ের বিশেষ দিনে আমাদের সকলকে শপথ নিতে হবে, এইভাবেই যেন মানুষের পাশে সারাক্ষণ থাকতে পারি এবং মানুষের ভরসাযোগ্য হয়ে তাঁদের পরিষেবা দিতে পারি।

একুশের মঞ্চে আসছেন অখিলেশ, বিমানবন্দরে সপা সমর্থকের উচ্ছ্বাস

তৃতীয়বারের জন্য এনডিএ সরকার গঠিত হওয়ার পরপরই দেশ সাক্ষী থেকেছে, স্বাধীনতার পরবর্তী সবথেকে বড় শিক্ষা দুর্নীতির মধ্যে একটি, নিট পরীক্ষার দুর্নীতি। এর ফলে উচ্চশিক্ষার প্রতি উচ্চমেধা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা যদি বীতরাগ পোষণ করেন, তবে তার দায় এই দুর্নীতিগ্রস্ত এনডিএ সরকারের। এই বিশাল দুর্নীতির জন্য শিক্ষানুরাগী সমাজ প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। এর সঙ্গে, দৈনিক মূল্যবৃদ্ধি যেন এই সকল দুর্নীতির দোসর। ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী দেশজুড়ে গরিবদের পাশে থাকার মিথ্যা বুলি আওড়েছিলেন। এখন মুদ্রাস্ফীতি নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে যাচ্ছে তাঁদের। তাই, এই বাংলা-বিরোধী, দেশ-বিরোধী, বিজেপির সঙ্গে কোনওরকম আপস নয়। এই সকল অপশক্তির পূর্ণ পতন না হওয়া পর্যন্ত, আমাদের লড়াই থামবে না। আমাদের দায়িত্ব আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন বাংলার মানুষ। তাঁরা আমাদের দু’হাত তুলে আশীর্বাদ দিয়েছেন। তাঁদের ভালবাসা, দোয়া এবং সমর্থনে আজ তৃণমূল কংগ্রেস এই বাংলা-বিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় আমাদের প্রার্থীগণ দুর্দান্ত লড়াই করেও, বাংলা-বিরোধীদের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের ফলে পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের লড়াই থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। কোথাও কোনও খামতি থাকলে সেইখানে সংবেদনশীলতার সঙ্গে তা বিচার করতে হবে। অহংকারকে পদদলিত করে, কেবলমাত্র মানবিকতাকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে আমাদের। এই নির্বাচনে, আমাদের প্রত্যেক কর্মী, সহযোদ্ধা এবং সমর্থকেরা যেভাবে দিবারাত্রি নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছেন— তার জন্য তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই আমার। আপনারাই আমাদের দলের মেরুদণ্ড। আপনারাই আমাদের শক্তি। আগামীর কঠিন লড়াইয়ের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। ১৯৯৩ সালে আজকের দিনে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যেভাবে গর্জে উঠেছিল সারা বাংলা, সেইভাবেই নেত্রীর আদর্শায়িত পথে আগামীর পথেও এগোতে হবে— একসঙ্গে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। জয় বাংলা! জয় তৃণমূল!’