দুর্ঘটনা হওয়ারই ছিল: কাঞ্চনজঙ্ঘাকাণ্ডে রেলের অব্যবস্থাকে তুলোধনা রিপোর্টে

0
3

রেলের চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণই নেই। জরুরি পরিস্থিতিতে স্টেশন মাস্টারদের কী কর্তব্য তাও শেখানো হয়নি। যেভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘার পিছনে ধাক্কা মেরেছে মালগাড়ি তাতে এতটুকুও আশ্চর্য কিছুই নেই। এই দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবীই ছিল, এমনটাই দাবি করা হল কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি রিপোর্টে। এককথায় যে গা ছাড়া মনোভাব নিয়ে ভারতীয় রেল প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যাত্রীর জীবন নিয়ে গোটা ব্যবস্থা চালাচ্ছে, তার তীব্র সমালোচনা করা হয় এই রিপোর্টে।

১৬ জুন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে পিছন থেকে একটি মালগাড়ি ধাক্কা মারলে দুর্ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়। কাঞ্চনজঙ্ঘার পিছনের দিকে একাধিক লাগেজ কামরা থাকায় মৃত্যুর বিভীষিকা দেখতে হয়নি। তবে এই দুর্ঘটনা রেলের অন্তঃসারশূন্য পরিকাঠামোকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে, যা ফের প্রমাণিত সিআরএস-এর রিপোর্টে। এই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, যেভাবে টিএ/৯১২ মেমো দিয়ে মালগাড়িকে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তা ভুল, কারণ তাতে গতির ও গতি নিয়ন্ত্রণের উল্লেখ ছিল না। এক্ষেত্রে স্টেশন মাস্টার ও চালক দুজনেই এই বিষয়ে সতর্ক থাকলে ভুল মেমো নিয়ে মালগাড়ি এগোতে পারত না। কিন্তু তারা কেউ এই ভুল ধরতে পারেননি। কারণ তাঁদের এই বিষয়ে প্রশিক্ষণই ছিল না।

সেই দিন শুধুমাত্র ওই মালগাড়ি নয়, বিকল হওয়া সিগনাল জোনের মধ্যে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও মালগাড়ি ছাড়াও আরও ৫টি ট্রেনকে ভুল মেমো দিয়ে ছাড়া হয়েছিল। একমাত্র কাঞ্চনজঙ্ঘার চালকের সঠিক প্রশিক্ষণ থাকায় তিনি গতি নিয়ন্ত্রণ করে ও বিকল সিগনাল এলাকায় ট্রেন দাঁড় করিয়েছিলেন। বাকি কোনও চালক তা মেনে চলেননি। সেখানেই রিপোর্টে দাবি, যে দুর্ঘটনা হয়েছে তা অবশ্যম্ভাবী ছিল।

সেই সঙ্গে রিপোর্টে অটোমেটিক সিগনালিং ব্যবস্থা নিয়েও সমালোচনা করা হয়। সেফটি কমিশনের দাবি, অটোমেটিক সিগনালিং ব্যবস্থা যে হারে খারাপ হচ্ছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের। পরিষেবার জন্য যে ব্যবস্থা হয়েছে তা এত দ্রুত ও এতবার খারাপ হলে এই ব্যবস্থার উপরই ভরসা উঠে যাবে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ। রেলকে এই ধরনের সিগনাল বিভ্রাটের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে অটোমেটিক ব্লক সিস্টেম ব্যবহার করে গোটা রেল চলাচল বন্ধ করারও সুপারিশ করা হয়েছে। কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্ঘটনায় কাটিহার ডিভিশনের সিগনালিং বিভাগের তরফেও গাফিলতির অভিযোগ করা হয়েছে রিপোর্টে।

দুর্ঘটনা এড়াতে সুপারিশ হিসাবে কবচ ব্যবস্থা আবশ্যক করার সুপারিশ করেছে সেফটি কমিশন। এমনকি নূন্যতম যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়েও অভিযোগ করা হয়েছে সিআরএস রিপোর্টে। দাবি করা হয়েছে যোগাযোগের জন্য ওয়াকিটকির সংখ্যাও পর্যাপ্ত ছিল না।