মানুষ উন্নয়ন না পেলে পুরসভা-পঞ্চায়েত রাখার দরকার কী! তীব্র ভর্ৎসনা মুখ্যমন্ত্রীর

0
3

সরকারি জমি বেদখল, রাস্তা অপরিষ্কার, পথবাতির দেখভালের অবহেলা- নাগরিক পরিষেবার অবহেলা নিয়ে জনপ্রতিনিধি থেকে আমলা সবাইকে তীব্র ভর্ৎসনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)। সোমবার নবান্ন (Nabanna) সভাঘরের বৈঠকে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও উচ্চ পদস্থ সরকারি আমলার নাম করে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।প্রথমেই হাওড়া পুরসভাকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। গাজোয়ারি করে সরকারি জমি দখল থেকে পরিষেবা না দেওয়া- সব বিষয় নিয়েই উষ্মা প্রকাশ করেন মমতা। দলবদলু বিজেপির লোকসভা প্রার্থীকে নিশানা করে তিনি বলেন, “রথীন যখন চেয়ারম্যান ছিল, তখন হাওড়ার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। হাওড়ার অনেক রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্স ঢোকার জায়গা পর্যন্ত নেই।“ এরপরেই নাগরিক পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “জঞ্জাল পরিষ্কার হয় না। যিনি দায়িত্বে আছেন তাঁকে বলছি অমৃতা রায় বর্মণ, এসডিও।“ জমি বেদখল নিয়ে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেউ টাকা খেয়ে এ সব করছেন। নিশ্চয়ই দিয়ে-টিয়ে খাচ্ছেন। আই অ্যাম সরি। কিন্তু এ সব বলতে হচ্ছে। একটা গ্রুপ তৈরি হয়েছে, বলতেই হচ্ছে।“ তাঁর কথায়, ‘‘কোথাও আলো জ্বলছে তো জ্বলছেই। এ সবের টাকা দেবে রাজ্য সরকার! কোথাও কল থেকে জল পড়ছে তো পড়ছেই।’’ মুখ্যমন্ত্রী নিশানা করে বলেন, “হাওড়া পুরসভার প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী সব দায়িত্ব নিজের কাছে রেখেছেন। কারও সঙ্গে আলোচনা করছেন না।“রাস্তায় জঞ্জাল পরিষ্কার হয় না। তীব্র ভর্ৎসনা করে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “এ বার কি আমাকে রাস্তা ঝাঁট দিতে বেরোতে হবে? শুধু উপর দেখলে হবে? নীচে দেখতে হবে না? রাস্তা দেখে না, আলো দেখে না! শুধু ট্যাক্স বাড়ানো আর লোক বসাচ্ছে! এ ছাড়া প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না!“সরকারি জমি বেদখল নিয়েই এই বৈঠকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। “কোথাও জবরদখল হলে কেন পদক্ষেপ হচ্ছে না?“ প্রশ্ন তোলেন মমতা। তাঁর কথায়, “অনেকে আছেন এর মধ্যে। নাম বলে কাউকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাই না। তবে একটা গ্রুপ তৈরি হয়েছে। খালি জায়গা দেখলেই তাঁরা লোক বসাচ্ছেন। বাংলার আইডেন্টিটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ সবে রাজ্যের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।“

মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) বলেন, “দেখেন না, লজ্জাও লাগে না? জনগণ পরিষেবা না পেলে পুরসভা-পঞ্চায়েত রেখে লাভ কী?“ মমতা জানান, কোথাও ম্যানহোলের ঢাকনা থাকলে সেটাও খুলে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। কেন সেই সব রুখতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে না! কেন জল অপচয় হচ্ছে? স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন?

হাওড়ার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেউ টাকা খেয়ে, কেউ টাকা খাইয়ে এ সব করাচ্ছেন। রাজ্য সরকারের জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন। হাওড়া পুলিশকে বলব একটা তদন্ত করার জন্য। চিফ সেক্রেটারিকেও অর্ডার দিচ্ছি।“ তাঁর স্পষ্ট বার্তা, “রাম-শ্যাম, যদু-মধু যে-ই হোন, আমিও যদি হই, ছাড়বেন না। লোভ বেড়ে যাচ্ছে। লোভটাকে কমাতে হবে। সরকারি জমি দখল করে একটার পর একটা বড় বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। রাজ্য সরকার নতুন রাস্তা তৈরি করেছে। তার রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। কেন এ সব হবে? দেখার দায়িত্ব কেবল আমার?“

মুখ্যমন্ত্রী জানান, এ বার থেকে জমি বণ্টন থেকে সৌরশক্তি, যে কোনও কাজের টেন্ডার আর স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে পরিচালনা করা হবে না। “এগুলি উপর থেকে দেখতে হবে। এর জন্য কমিটি গড়ে দেব। কিন্তু লোকালি কাকে দিয়ে করব এগুলো? এসডিওকে দিলেও যা, ডিএমকে দিলেও তাই।“

মন্ত্রী-সহ জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন করেন, “হাতিবাগানে কখনও তাকিয়ে দেখিয়েছেন? কী অবস্থা ওখানে। গড়িয়াহাটে হকার বসিয়েছেন। সে দিন ওয়েবেলের সামনের রাস্তা দিয়ে আসছিলাম। দেখলাম একের পর এক দোকান বসিয়ে দিয়েছে। দেখতে ভাল লাগছে?“ সরাসরি মন্ত্রী সুজিত বসুর না করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাজারহাটে সুজিত লোক বসাচ্ছে কম্পিটিশন করে।“

পুলিশকেও ভর্ৎসনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “সবাই চোখে ঠুলি পরে আছে! কারও চোখে কিচ্ছু পড়ছে না। অবৈধ ভাবে তালার পর তালা উঠছে। দু’- এক জনকে অ্যারেস্ট তো করুন! বেআইনি যদি হয়, ‘স্টার্ট ফ্রম মাই হাউস।’ কেন বাইরের লোক বসবেন এখানে? একটা করে ত্রিপল লাগাচ্ছে, এক জন করে বসে পড়ছে।“ তীক্ষ্ণ স্বরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “হোয়াই? হোয়াই? হোয়াই?“

দিঘা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি ও হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটি থাকার প্রয়োজনীয়তা কী? প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “সেখানে তো পুরসভা আছে। লাভটা কী? এ রকম ভাবে তো চলতে পারে না।“ তিনি জানান, এ বার থেকে কেউ কোনও কাজ করলে তার রিভিউ হবে। তদন্তও হবে।