“কোথাও জবরদখল হলে, সঙ্গে সঙ্গে কেন পদক্ষেপ নয়? কেউ টাকা খেয়ে, কেউ খাইয়ে এসব করছে।“ টাকার বিনিময়ে এসব কাজের জন্য রাজ্যের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে। সোমবার নবান্ন সভাঘরে বৈঠকে সরকারি জমি বেদখল নিয়ে আক্রমণাত্মক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এদিন রাজ্যের সমস্ত পুরসভার মেয়র, চেয়ারম্যান এবং রাজ্যের পুরো ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে (Firhad Hakim) নিয়ে একটি বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তোপ দেগে তিনি বলেন, “একটা গ্রুপ তৈরি হয়ে গিয়েছে। খালি জায়গা দেখলেই লোক বসিয়ে দিচ্ছে। একে তো কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। বাংলার আইডেন্টটিটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কেন বুঝতে পারছেন না? আপনার এবং আপনাদের টাকা খাওয়ার জন্য বাংলার পরিচয় নষ্ট হচ্ছে। রাজ্য সরকারের জমি পাচ্ছেন, বেচে দিচ্ছেন।“কোন থানা এলাকায়, কোন বোরোর, কোন ওয়ার্ডে, কোন রাস্তার ধারে জমি জবরদখল হয়েছে, একেবারে কাগজ দেখে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য দেন মুখ্যমন্ত্রী। ভর্ৎসনা করে বলেন, “টাকার বিনিময়ে পুরসভার জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। টাকা খাওয়ার জন্য রাজ্যের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে।“ মমতার অভিযোগ, বাইরে থেকে এসে এখানে সব জমি দখল করে নিচ্ছে, টাকার বিনিময়ে। সরকারের অনুমতি ছাড়া সরকারি জমিতে বড় বড় মাস্টিস্টোর কমপ্লেক্স হয়ে যাচ্ছে। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এর পর বাংলায় কথা বলার লোক খুঁজে পাবেন না”। তাঁর কথায়, “হিন্দি ভাষা ইংরেজি ভাষারও কদর রয়েছে। আমি সবাইকে বড় করেই দেখছি। কিন্তু এও মনে রাখতে হবে, সব রাজ্যের একটা সংস্কৃতি আছে। বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। অন্যদেরও সংস্কৃতি রয়েছে। আমাদের দেখতে হবে, অর্থের বিনিময়ে বাংলার আইডেনটিটি যেন নষ্ট না হয়। এটা কোনও ভাবেই মেনে নেব না”।
শিলিগুড়ি ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি নিয়েও তীব্র আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। জমি মাফিয়া-রাজের অভিযোগ তুল তিনি বলেন, ”শিলিগুড়িতে ল্যান্ড মাফিয়া তৈরি হয়েছে। সিপিএম জমানার প্রোমোটিং সিন্ডিকেট এখনও চলছে।”
সরকারি জমি জবরদখলের বিরুদ্ধে এদিন রণংদেহি মেজাজে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। যাদবপুর থানার অধীনে ১০ নম্বর বোরোর, ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৫৫ প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে লর্ড বেকারি মোড়ে তথ্য সংস্কৃতি দফতরের জমি দখলের অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “২৯ কাঠা মূল্যবান জমি তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের। ২০১৮ সালে এলাকার তৎকালীন সাংসদ সৌগত রায় জমিটি একবার জবরদখল মুক্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এটা তদন্ত হবে। খুঁজে দেখো কে করেছে।” এই বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকারি সম্পত্তি কারও ব্যক্তিগত নয়। লোভ বেড়ে যাচ্ছে। লোভ কমাতে হবে।“ মন্ত্রী সুজিত বসুর নাম নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বলেন, প্রতিযোগিতা করে লোক বসানো হচ্ছে। বিএলআরও-দের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। জবরদখল হওয়া জায়গা পুনরুদ্ধার করতে হবে, স্পষ্ট বার্তা দেন তিনি। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”নবান্নের আশেপাশে এক কিলোমিটার এলাকায় জি প্লাস ফোর বিল্ডিং করা নিষিদ্ধ। তারপরেও হচ্ছে। অনুমতি দিচ্ছে, কারণ টাকা পাবে।” কড়া বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী, ”কোনও অবহেলা শুনব না। অনেক ভদ্রতা দেখিয়েছি। গায়ের জোরে জমি দখল করবে এটা হবে না।”