কুয়েতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের জের: মেয়ের জন্মদিনে বাড়ি ফেরা হল না মেদিনীপুরের দ্বারিকেশের

0
1

প্রতিদিনই সকালে নিয়ম মেনেই আসত ফোন। কিন্তু গত বুধবার অপেক্ষা করলেও আসেনি ফোন। মনে সন্দেহ দানা বাঁধতেই স্বামীকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু যে মানুষ একবার কল করলেই উত্তর দেন কিন্তু বুধবার একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন তোলেননি। এরপর স্বামীর সাড়া না মেলায় মনে তখনই সন্দেহ হয়েছিল দ্বারিকেশ পট্টনায়কের (Dwarikesh Pattanaik) স্ত্রী অন্তরার। কিন্তু তাঁর পরিণতি যে এমন হবে, দুঃস্বপ্নেও তা ভাবেননি তিনি। কুয়েতের (Kuwait) বহুতলের অগ্নিকাণ্ডে মৃত ভারতীয়দের মধ্যে রয়েছেন বাংলার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দ্বারিকেশ পট্টনায়ক (৫২)। এবার সংবাদমাধ্যমকে এমনটাই জানালেন মৃতের স্ত্রী।

শুক্রবার দিল্লি-কলকাতা হয়ে দ্বারিকেশের দেহ তাঁর বাড়িতে ফেরানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্বারিকেশের আদি বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরেরই দাঁতন-২ ব্লকের তুরকা অঞ্চলের খণ্ডরুই গ্রামে। বাড়িতে স্ত্রী অন্তরা ছাড়াও রয়েছে একমাত্র মেয়ে। আপাতত তাঁরা থাকেন মেদিনীপুর শহরের শরৎপল্লি এলাকায়। সম্প্রতি জায়গা কিনে বাড়িটি তৈরি করেছিলেন দ্বারিকেশ। নবান্ন ও দিল্লির রেসিডেন্ট কমিশনারের অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্বারিকেশ যে সংস্থায় চাকরি করতেন, বুধবারই প্রতিনিধিরা তাঁর দেহ শনাক্ত করেন। অগ্নিকাণ্ডে মৃত ওই সংস্থার আরও বেশ কয়েকজন ভারতীয় কর্মীর দেহ যেমন ঝলসে গিয়েছিল, দ্বারিকেশের ক্ষেত্রে তা হয়নি। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, আগুনের বিষ ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ফলে তাঁর দেহ সহজেই শনাক্ত করা গিয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন হয়নি। এদিকে বাড়ি ফিরতেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দ্বারিকার অবর্তমানে কীভাবে এখন সব নিজের হাতে সামাল দেবেন তা ভাবতে পারছেন না স্ত্রী অন্তরা। কুয়েতে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের দ্বারিকা ছাড়াও কেরলের ২৩ জন, তামিলনাড়ুর ৭ জন, উত্তরপ্রদেশের ৩ জন, অন্ধ্রপ্রদেশের ৩ জন, ওড়িশার ২ জন এবং ঝাড়খণ্ড, বিহার, মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, হরিয়ানা ও কর্নাটকের এক জন করে রয়েছেন। এখনও পর্যন্ত এই অগ্নিকাণ্ডে ৪৯ জনের ঐমৃত্যুর খবর জানাচ্ছে কুয়েত প্রশাসন। অন্তত ৫০ জন আহতের মধ্যেও কয়েক জন ভারতীয় রয়েছেন।


পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্বারিকেশ ঝাড়গ্রাম আইটিআই থেকে ওয়েল্ডারের ডিপ্লোমা কোর্স করে প্রথমে মুম্বইতে একটি সংস্থায় চাকরি পান। কিছুদিনের মধ্যে কুয়েতের এনবিটিসি সংস্থায় কাজের সুযোগ পান। গত ৩০ বছর ধরে তিনি কুয়েতেই ছিলেন। রোজ সকালে অফিস যাওয়ার আগে মেদিনীপুরের বাড়িতে ফোন করতেন। কিন্তু বুধবার সেই ফোন আসেনি। বুধবার কুয়েতের যে বহুতলে আগুন লাগে, সেখানেই থাকতেন তিনি। ঘটনার খবর পেয়ে ফোনে ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন স্ত্রী অন্তরা। কিন্তু বিশেষ কিছু জানতে পারেননি। পরে ওই বিল্ডিংয়ে আগুন লাগতেই মনে কালো অন্ধকার গ্ৰাস করে অন্তরার।শেষ পর্যন্ত বাড়িতে খবর আসে, কুয়েতের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ গিয়েছে অন্তরার স্বামী দ্বারিকেশ পট্টনায়কের। বুধবার একাধিকবার ফোন করার পরেও স্বামীকে না পাওয়ায় দ্বারিকেশের সহকর্মী, কেরালার এক বাসিন্দাকে ফোন করেন অন্তরা। ওই ব্যক্তি অবশ্য সেই সময়ে কেরালায় ছিলেন। তিনি কুয়েতে ফোন করে দ্বারিকেশের স্ত্রীকে দুর্ঘটনার খবর জানান। পরে দ্বারিকেশের সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়, অগ্নিকাণ্ডে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩-এর মার্চে মাসে শেষ বার বাড়িতে এসেছিলেন দ্বারিকেশ। মাসখানেক ছিলেন। আগামী অক্টোবরে মেয়ের জন্মদিনে ফের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। তাঁর মেয়ে এবার উচ্চমাধ্যমিক দেবে। সেই জন্যই আরও বেশি করে ওই সময়ে বাড়িতে ফিরবেন বলেছিলেন। কিন্তু তার আগে তিনি ফিরলেন বটে তবে মৃত অবস্থায়।