একবিংশ শতকে ছবিই অনেক কথা বলে। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের পরে দলের সংসদীয় অধিবেশনে সংবিধান মাথায় নিয়ে প্রণাম করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সেই ছবিকেই কেরালা থেকে নিশানা করলেন রাহুল গান্ধী। তাঁর দাবি, “বিজেপি নেতারা নির্বাচনের আগে গোটা দেশে সংবিধানকে ছিঁড়ে ফেলার, ফেলে দেওয়ার বা বদলে ফেলার দাবি করেছিলেন। শক্তির দম্ভ এটা। নির্বাচনের পরে আমরা দেখলাম প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের কাছে মাথা নত করছেন।”
৭ জুন পুরোনো সংসদ ভবনে এনডিএ জোট শরিকদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে বক্তৃতা দেওয়ার আগে সংবিধান হাতে তুলে নিয়ে মাথায় ঠেকান নরেন্দ্র মোদি। এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরই বিরোধীরা সরব হয়। তাঁরা দাবি করেন, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো মোদি বাধ্য হয়েছেন সংবিধানের কাছে মাথা নত করতে। কেরালার মলপ্পুরম থেকে সেই একই বার্তায় বিজেপি তথা মোদিকে নিশানা করেন রাহুল গান্ধী।
এর আগে মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার পরই তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার তালিকা তুলে ধরে মোদির সরকারের পরিবারতন্ত্রের ছবি তুলে ধরেছিলেন। বারবার তৃণমূল ও কংগ্রেসের দিকে পরিবারবাদের অভিযোগ তুলে প্রচার চালানো মোদি নিজে যেভাবে দেশের একাধিক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ছেলেদের মন্ত্রিসভায় রেখেছেন, তার তালিকা তুলে ধরেন তৃণমূল সাংসদ। সেই ধারাতেই মোদির পরিবারবাদের প্রতিবাদে সরব হন রাহুল গান্ধীও।
কংগ্রেসকে বরাবর গান্ধী পরিবারের পরিবারবাদের শিকার বলে কটাক্ষ করে এসেছে বিজেপি। সেই বিজেপি শরিক দলগুলিকে, তথা আঞ্চলিক নেতাদের তুষ্ট করতে যেভাবে পরিবারবাদে মোড়া মন্ত্রিসভা গঠন করেছে, তা তুলে ধরেন রাহুল গান্ধী। তাঁর নিশানায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়া-পুত্র এইচ ডি কুমারস্বামী যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কর্পুরি ঠাকুরের পুত্র রামনাথ ঠাকুর থেকে বিহারের প্রাক্তন বিধায়ক রমেশ প্রসাদ যাদবের কন্যা অন্নপূর্ণা দেবীও।
তবে ওয়েনাড়, না রায়বেরেলি। কোন লোকসভা ক্ষেত্রের সাংসদ হিসাবে থাকার সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন তা এখনও স্থির করে উঠতে পারেননি রাহুল, এমনটাও কেরালার জনসভা থেকে জানান। সেই না পারার কারণ বলতে গিয়েও মোদিকে চরম কটাক্ষ করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “আমার একটা সংশয় রয়েছে – ওয়েনাড়ের না রায়বেরেলি, কোথাকার সাংসদ থাকবো? দুর্ভাগ্যবশত প্রধানমন্ত্রীর মতো আমাকে কোনও ঈশ্বর পথ দেখান না। আমি একজন রক্ত মাংসের মানুষ। আমরা দেখেছি প্রধানমন্ত্রীকে ‘৪০০ পার’ বলতে। হঠাৎ সেটা উঠে গিয়ে এলো ‘৩০০ পার’। তারপরে আবার তিনি বললেন আমার জৈবিক জন্ম হয়নি। আমি কোনও সিদ্ধান্ত নিই না। পরমাত্মা আমাকে এখানে বসিয়েছেন এবং তিনিই সিদ্ধান্ত নেন।” পাশাপাশি তিনি যোগ করেন, “আমার ঈশ্বর দেশের দরিদ্র মানুষ, ওয়েনাড়ের মানুষ। আমি তাঁদের কাছে যাই এবং কথা বলি। আমার ঈশ্বর আমায় বলেন আমাকে কী করতে হবে।”