জয়িতা মৌলিক
Flash Back: ১০ মার্চ, ২০২৪। ব্রিগেডে তৃণমূলের সভায় একের পর এক লোকসভার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। বেনজির ভাবে প্রার্থীদের নিয়ে বিশালাকার ব়্যাম্পে হাত ধরে হাঁটছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ৪২টি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করে তৃণমূল। তার মধ্যে ২৬টি নতুন মুখ। একের পর এক প্রার্থীর নামে চমক। গেম শো-র ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী দলের দুই সদস্য কীর্তি আজাদ আর ইউসুফ পাঠান! এছাড়াও জুন মালিয়া, মিতালি বাগ, শর্মিলা সরকার, সায়নী ঘোষ- লোকসভা নির্বাচনে একেবারে আনকোরা।
Cut 2: ৪ জুন, ২০২৪। লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ। ৪২-এর মধ্যে ২৯টি আসন জোড়াফুলের দখলে। তার মধ্যে জয়ী ১১ জন আনকোরা প্রার্থী! চমক। বিষ্ময়। অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রাজনৈতিক মহল। কী ভাবে সম্ভব হল? সব বুথ ফেরৎ সমীক্ষাকে ডাহা ফেল করিয়ে জিতলেন তৃণমূল প্রার্থীরা, জিতল মমতা-অভিষেকের ফর্মুলা। বাংলা গ্রিন, তৃণমূল এভারগ্রিন। কিন্তু কী ফর্মুলায় এটা সম্ভব হল? সেটা জানতে আবার যেতে হবে Flash Back-এ। চোখ রাখতে হবে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায়। সেখানে শুধু চমকই নয়, রয়েছেন সমাজের প্রত্যেক স্তরের, প্রত্যেক শ্রেণির, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা।
সেখানে যেমন রয়েছেন লন্ডন থেকে ডাক্তারি পড়ে আসা প্রথিতযশা চিকিৎসক কাকলি ঘোষদস্তিদার, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ শর্মিলা সরকার, এমবিএ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন প্রোফেসর সৌগত রায়, বর্ষীয়ান আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসের কলেজ থেকে স্নাতক মহুয়া মৈত্র, তেমনই আছেন আশাকর্মী মিতালি বাগ, সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার ও পদশ্রী সম্মান প্রাপ্ত সাহিত্যিক কালীপদ সোরেন। একঝাঁক অভিনেতা-অভিনেত্রী- শত্রুঘ্ন সিনহা, শতাব্দী রায়, দীপক অধিকারী ওরফে দেব, সায়নী ঘোষ, জুন মালিয়া, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারা দেশের মধ্যে এই প্রথম একই রাজনৈতিক দল থেকে লোকসভা ভোটে জয়ী ২ বিশ্বকাপ দলে খেলা প্রাক্তন ক্রিকেটর- কীর্তি আজাদ ও ইউসুফ পাঠান। আছেন বিখ্যাত ফুটবলার অর্জুন পুরস্কার প্রাপ্ত প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার আছেন পার্থ ভৌমিক, হাজি নুরুল ইসলাম, অরূপ চক্রবর্তী, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মালা রায়, প্রতিমা মণ্ডল, সাজদা আহমেদ, জগদীশ বর্মা বাসুনিয়া, বাপি হালদার, অসিত মাল, খলিলুর রহমন, আবু তাহের খানের মতো পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদরা।
অর্থাৎ সমাজের সব শ্রেণি মানুষের রয়েছেন জনপ্রতিনিধি হিসেবে। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, তৃণমূলে উচ্চবর্ণের নেতৃত্ব নির্বাচনে টিকিট পান। সেই অভিযোগের মুখে ঝামা ঘষে বাগদি সম্প্রদায়ে মিতালি বাগের উপর বাজি ধরেছিলেন মমতা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা তো টিকিট পেয়েই ছিলেন, প্রার্থী হন তফলিশি জাতি-উপজাতি, আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষও। আর এই কারণেই তৃণমূল কংগ্রেসকে বলা হয় মানুষের মহাজোট। যেখানে সবস্তরের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
প্রথম যখন তৃণমূল (TMC) প্রার্থী হিসেবে বহরমপুর কেন্দ্রে ইউসুফ পাঠানের নাম ঘোষণা হয়- সবাই হতচকিত। ব্রিগেডে জনসমুদ্র তাকিয়ে আছে মঞ্চের দিক। কিন্তু সেদিন দলনেত্রীর সিদ্ধান্ত যে একেবারেই ঠিক- তা আবার প্রমাণ হল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতাকে ভালো ব্যবধানে পাঠান হারিয়ে দেওয়ার পর।
অনেকে প্রশ্ন তোলেন, কেন এত তারকা সমাবেশ? কারণ, রুপোলি জগতের মানুষদের কাছে থেকে দেখতে, ছুঁতে চান সাধারণ মানুষ। আর তাঁরাও চান মানুষের জন্য কাজ করতে। বিনোদন জগতেও তাঁরা দর্শকদের জন্য কাজ করেন। কিন্তু সেই কাজ প্রত্যক্ষভাবে করতেই তাঁরা সরাসরি ময়দানে নামতে প্রস্তুত। এই দুই ক্ষেত্রকে মিলিয়ে দিয়েছেন মমতা-অভিষেক। মানুষও তাঁদের উপর আস্থা রেখেছেন। দেব, সায়নী, জুন, শতাব্দী, শত্রুঘ্ন, রচনা-সবাইকে দুহাত ভরে আশীর্বাদ করেছেন বাংলার জনগণ। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা- এটাই তৃণমূল সভানেত্রী ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের মূল মন্ত্র। আর সেই ফর্মুলাতেই সব ভুয়ো এক্সিট পোল রিপোর্ট ঢেকে গেল সবুজ আবিরে।










































































































































