বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের দুবারের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ প্রাক্তন স্ত্রীর কাছে মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার ভোটে জিতে ফের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। রাজনীতিকদের কাছে এটা একরকম নৈতিক পরাজয়। এলাকায় জনসমর্থন যে চলে গিয়েছে তা বুঝতে পেরেই কী এবার সুর বদল সৌমিত্র খাঁয়ের। ফল প্রকাশের পরদিনই বিজেপি সাংসদের মুখে বিজেপি নেতাদের অদক্ষতা নিয়ে সুর চড়ল। সেই সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তৃণমূলের এই কামব্যাকের জন্য সৌমিত্র মুখে অভিষেকের ভূয়সী প্রশংসা।
গত পাঁচ বছর ধরে তৃণমূল তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে কুকথা ছাড়া কিছুই শোনা যায়নি বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদের মুখে। ২০২৪ নির্বাচনে যে ভরাডুবি হতে চলেছে তা বুঝতে পেরেই মাটি কাঁমড়ে পড়েছিলেন সৌমিত্র। তবে শেষ পর্যন্ত ৭৮ হাজারের ব্যবধানে জেতা সৌমিত্রকে মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজারের ব্যবধানে জিতে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। আর এর জন্য় বিজেপির দুর্বলতাকে যতটা না দায়ী করেছেন তিনি, তার থেকেও বেশি দায়ী করেছেন তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচন পরিচালনাকে।
সৌমিত্রর দাবি, “অভিষেক ভাল কাজ করেছেন বলেই তৃণমূল ভাল ফল করেছে।” প্রত্যেক লোকসভার নির্দিষ্ট বিধানসভা টার্গেট করে তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের জয়ের পথ মসৃণ করেছেন বলে দাবি সৌমিত্রর। সেই সঙ্গে তৃণমূলের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার যে মহিলা ভোটের উপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে, তা স্বীকার করতেও দ্বিধা করেননি সৌমিত্র। তৃণমূল যে এই কেন্দ্রে বেছে বেছে মহিলা প্রার্থী ও তাঁরই প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মণ্ডলকে প্রার্থী করেছে, তা নিয়ে বিস্তর কটাক্ষ নির্বাচনী প্রচার পর্বে করেছিলেন সৌমিত্র। তবে ফলা প্রকাশের পরে সেই সুজাতারই প্রশংসা সৌমিত্রর মুখে। “সুজাতাও ভাল ফল করেছে। ও ভাল খেটেছে”, এমনটাও বলতে শোনা যায় বিজেপি সাংসদকে।
তবে নামমাত্র ভোটে জিতে বিজেপিকে যেভাবে তিনি আক্রমণ করেছেন তা বিজেপি শীর্ষনেতার পক্ষে নজিরবিহীন। কার্যত তাঁকে দলের মধ্যে বিদ্রোহী শোনায় যখন তিনি দাবি করেন তিনি যেটুকু ভোট পেয়েছেন তা আরএসএস কর্মীদের জন্য পেয়েছেন। অন্যদিকে বিজেপির শীর্ষনেতারা তৃণমূলের সঙ্গে মিলে রাজ্যে বিজেপির আসন সংখ্যা কমাতে কলকাঠি নেড়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। গোটা বিষয় শোনার পরে অনেক রাজনীতিকই বিষ্ণুপুরে ফের রাজনৈতিক পালাবদলের আশঙ্কা করছে।