সন্দেশখালি ভুয়ো অভিযোগ তুলে ভোট বৈতরণী পারের চেষ্টা করেছিল বিজেপি (BJP)। সেই ষড়যন্ত্রের পর্দাফাঁস হয়ে গিয়েছে। এবার বাংলায় ধর্মীয় অশান্তির চক্রান্ত করছে গেরুয়া শিবির। শনিবার, গোঘাটে আরামবাগের দলীয় প্রার্থী মিতালি বাগের (Mitali Bag) নির্বাচনী প্রচার সভা থেকে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন তৃণমূল (TMC) সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁর কথায়, সন্দেশখালি ব্যর্থ হওয়ার পরে মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে দেবতার মূর্তি সরিয়ে হিন্দু-মুসলমানে গন্ডোগোল লাগিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে BJP। সকলকে এই বিষয়ে প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে ও তৎপর হয়ে পদক্ষেপ করতেও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনের সভা থেকে বাম আমলে আরামবাগের কালোদিনের কথা স্মরণ করান মমতা। বলেন, গোঘাটে সিপিএম আমলে কেউ যেতে পারত না। আরামবাগ থেকে একটি সুড়ঙ্গ করেছিল চমকাইতলা পর্যন্ত। তাঁর অভিযোগ, খুন সুড়ঙ্গ দিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হত। “আমি চমকাইতলায় পার্টির মিটিং করতে এসেছিলাম। আমার সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজিত পাঁজা ছিলেন। আমি তখন রেলমন্ত্রী। আমাদের প্যান্ডেল, বাস ভেঙে দেওয়া হল। অজিত পাঁজাকে আমি ছুটে এসে উদ্ধার করে নিয়ে যাই। শুধু গুলি চলছিল। আমার সেদিন থাকার জায়গা ছিল না। জয়রামবাটি-কামারপুকুর থেকে বলে দিয়েছিল কোথায় থাকতে হবে। আমি সেদিনের জন্য কৃতজ্ঞ।“
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই গোঘাটের পাশে বাঁকুড়া। এখানে আমরা এসেছিলাম। সিপিআইএম গ্রাম দখল করে নিয়েছিল। মেরে লাশ ভাসিয়ে দিয়েছিল। রাত ১টার সময় বেরিয়েছিলাম। গা ছম ছম করছিল। দেখলাম মানুষ জন সব গলা পর্যন্ত ডুবে রয়েছে। আমাকে বলছে, দিদি আমরা এখানে লুকিয়ে আছি। না হলে মেরে দেবে। আমি যখন কিছু বলি তার প্রমাণ থাকে। আমার সঙ্গে সেদিন ছিলেন সুদীপদা। আমাদের বলেছিলেন, এত ঝুঁকি নিচ্ছ! কিন্তু আমি বলেছিলাম মানুষ বিপদে পড়লে কী করব। সেদিন যারা সিপিএমের হার্মাদ ছিল, আজ তারাই বিজেপির হার্মাদ। ওই সাংবাদিক, এখান থেকে ফিরে একটি লেখা লিখেছিলেন। আমার আজও মনে আছে। প্রমাণ আছে। এসব অনেকেরই আজ আর মনে নেই। তাই মনে করিয়ে দিলাম।“
এদিন স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, “তৃণমূল দোষ করলে দু’টো থাপ্পড় মারবেন, সেই অধিকার আছে আপনাদের“। এদিনের সভা থেকে নরেন্দ্র মোদিকে তোপ দেগে তৃণমূল সভানেত্রী বলেন, “বাঙালিরা তোমাদের পছন্দ করে না। ওরা বিজ্ঞাপনে প্রচুর টাকা খরচ করে। অথচ গরিবদের দেওয়ার টাকা নেই। টাকা খরচ করে মন পাওয়া যায় না। এটা হৃদয় দিয়ে হয়।“ তৃণমূল সভানেত্রী বলেন, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে সিএএ, এনআরসি, ইউসিসি তুলে দেব। মমতা সাফ বলেন, মোদি এবার জিতবে না।
সন্দেশখালি নিয়ে মমতার মত, “মা বোনেদের দিয়ে কী লিখিয়ে নিয়েছে কেউ জানেনও না। সন্দেশখালির কলঙ্ক আজীবন মানুষ মনে রাখবে। এরা চক্রান্ত করেছে। এরপরেই বিস্ফোরক অভিযোগ দিয়ে তিনি বলেন, “দেখবেন মাঝে মধ্যেই এরা মন্দির থেকে একটা পুতুল সরিয়ে দেয়। পুতুল মানে ওদের পুতুল, আমাদের ঠাকুর দেবতা। আমরা সেসব সরাই না। আমরা সম্মান করি। সে যে দেবতাই হোক। ওরা সরাতে পারে।“ তাঁর কথায়, সন্দেশখালি ব্যর্থ হওয়ার পরে মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে দেবতার মূর্তি সরিয়ে হিন্দু-মুসলমানে গন্ডোগোল লাগিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে BJP। সকলকে এই বিষয়ে প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে ও তৎপর হয়ে পদক্ষেপ করতেও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
বাংলায় কোনও জোট নেই। এখানে শুধু কংগ্রেস-সিপিএমের মহাঘোঁট আছে। দিল্লিতে আমরা ‘ইন্ডিয়া’র সঙ্গে আছি। ইসবার ‘ইন্ডিয়া’ সরকার আমরা গড়ব। কিন্তু এখানে একটা ভোটও সিপিএম-কংগ্রেসকে দেবেন না। কেন্দ্রে ‘ইন্ডিয়া’ সরকার গড়তে আমরা একাই একশো- অবস্থান স্পষ্ট করলেন মমতা। তৃণমূল সুপ্রিমোর কথায়, “এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। বাংলা দেশ স্বাধীন করেছিল। এ বারও বাংলা দেশকে পথ দেখাবে। মোদিকে সরাতে হবে। মনে রাখবেন, এই নির্বাচনে যদি ওরা যেতে আর সংবিধান থাকবে না। ভোট হবে না। আপনাদের অধিকার থাকবে না। তাই বুঝে শুনে নিজের ভোট দেবেন।“