নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে দুর্নীতিকে সরকারি পোশাক পরিয়েছে বিজেপি, বিস্ফোরক প্রশান্ত ভূষণ

0
1

মোদি সরকারের নির্বাচনী বন্ড দেশ তথা বিশ্বের সবথেকে বড় কেলেঙ্কারি (electoral bond is a biggest scam in the world)। ‘দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ’ বারবার এই দাবি তুলে বিজেপি সরকারের দুর্নীতির খতিয়ান প্রকাশ্যে এনেছে। এবার ইলেক্টরাল বন্ডের বিস্তারিত তথ্য ফাঁস করলেন সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ (Prashant Bhushan)। বললেন, শুধু যে টাকা নিয়ে কেলেঙ্কারি তা নয় মানুষের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করা হয়েছে। যখন এই বন্ড আনা হয় তখন বলা হয়েছিল যে এতে একটা বিশেষ নম্বর লেখা থাকবে যা একমাত্র আলট্রা ভায়োলেট আলোতে ধরা পড়বে। কিন্তু এটা গুপ্ত বন্ড তাই কেউ যদি বন্ডের মাধ্যমে বিরোধীদের টাকা দিতে চায় তা অন্য কেউ জানতে পারবে না। কিন্তু SBI যেহেতু কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রানাধীন সংস্থা তাই স্বাভাবিকভাবেই সব তথ্যই পৌঁছে যায় মোদি সরকারের হাতে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে SBI তথ্য প্রকাশ করতেই জানা যায় যে এই বন্ডে সবথেকে বেশি লাভবান বিজেপি। শীর্ষ আদালতের আইনজীবী রীতিমতো তথ্য তুলে ধরে বলেন, এই বন্ডের মাধ্যমে ঘুষ বা টাকার খেলাপি করা হয়েছিল। যেসব সংস্থা বন্ড কিনেছে তাদের সরকারি সুবিধার পরিমাণ এক লাফে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আদিত্য বিড়লা গ্রুপের সুবিধার্থে ইমপোর্ট এক্সপোর্ট পলিসি বদলে দেওয়া হয়। ভারতীয় টেলিকম ১৫০ কোটি দিয়েছিল বিজেপিকে, এই বন্ডের মাধ্যমে। আইনজীবী জানান এর ফল হিসেবে নিলাম ছাড়াই তাদের স্যাটেলাইট স্পেকট্রাম আলোটমেন্ট দেওয়া হয়। ওষুধ কোম্পানি গুলো হাজার হাজার টাকার বন্ড কিনেছে। এরা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে প্রাণঘাতী ওষুধ তৈরি করছিল। কিন্তু ড্রাগ রেগুলেটর থেকে বাঁচার জন্য এরা বন্ড কেনে অর্থাৎ প্রকারান্তরে ঘুষ দেয় এবং এদের ওষুধ রমরমিয়ে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। মানে মানুষের জীবনের কোনও দাম নেই এই গেরুয়া সরকারের পাশে। প্রায় ৫ লক্ষ কোটির কন্ট্রাক্ট প্রভাবিত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এদিন প্রেস ক্লাবে বিশিষ্ট সমাজকর্মী অঞ্জলি ভরদ্বাজ (Anjali Bharadwaj) বলেন, দেশের সবথেকে বড় স্ক্যাম এই নির্বাচনী বন্ড। একদিকে যেসব সংস্থার নামে আর্থিক তছরুপের কেস চলছিল তারা বন্ড কেনা মাত্রই সেই কেস বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে যে ওষুধ মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করবে মনে করে ড্রাগ রেগুলেটরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সেই কোম্পানি কোটি কোটি টাকার বন্ড কিনে মানুষের জীবন নিয়ে বাজারে ব্যবসা করে চলেছে। অঞ্জলি বলেন,সুপ্রিম কোর্ট একদিকে বলেছে এই বন্ড অসাংবিধানিক। এছাড়া বলা হয়েছে যে কে বা কারা টাকা দিয়ে বন্ড কিনেছে তাঁর সঠিক তথ্য নির্বাচন কমিশনারকে দেওয়া হোক যাতে সাধারণ মানুষ সেই সম্পর্কে অবগত হতে পারেন। তবে নির্বাচনী বন্ড যখন আনা হয় তখন অরুণ জেটলি জানিয়েছিলেন যে এর মাধ্যমে কালো টাকা উদ্ধার হবে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা গেল ক্যাশ বিনিময় তো আটকালোই না উপরন্ত দুর্নীতিকে সরকারি পোশাক পরিয়ে দিল এই সরকার। তিনি বলেন ২০১৮ সালের আগের এক বছরের বন্ড সংক্রান্ত তথ্য এখনও মেলেনি। তা সামনে এলে আরও ৪০০০ কোটি টাকার স্ক্যাম সামনে উঠে আসবে। মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং ১৪০ কোটি টাকার বন্ড কেনায় তাদের মহারাষ্ট্র সরকারের মাধ্যমে বড় ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেট দেওয়া হয়। জাইকাস্টের ওষুধ নিম্ন মানের, এই কথা জানিয়েছিল বিহারের রেগুলেটরি। গুজরাটে এই কোম্পানির ফ্যাক্টরি। বিজেপিকে টাকা দিয়ে দিব্যি নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

এদিনের প্রেস কনফারেন্সে প্রশান্ত ভূষণ এবং অঞ্জলি ভরদ্বাজ দুজনেই বলেন যে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করে স্ক্যামকে প্রশ্রয় দিচ্ছে এই সরকার। আগামী নির্বাচনে ২০০ পার হবে কীনা তা সন্দেহ আছে বলে জানান আইনজীবী। পৃথিবীর ইতিহাসের সবথেকে বড় দুর্নীতি, দেশকে দেউলিয়া করার সঙ্গে মানুষের জীবনকে শেষ করতে চেয়েছিল এই সরকার। এখন ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছেন। ইলেক্টোরাল বন্ড বুঝিয়ে দিল নোট বন্দি ফ্লপ আর মানুষের দুর্ভোগ চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছেছে। তাই মোদি দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চান, এই দাবিও তোলে ‘দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ’ (Desh Banchao Ganamancha)।