কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে বাতিল ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। মঙ্গলবার মামলার শুনানি শেষে আপাতত কলকাতা হাই কোর্টের চাকরি বাতিলের রায়ে স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৬ জুলাই ধার্য করা হয়েছে। তবে এদিন সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সুপ্রিম রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। এদিকে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণা করতেই তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে দলের অবস্থান স্পষ্ট করল দল। দলের তরফে সাফ জানানো হয় কলকাতা হাই কোর্টের এই রায়ের পিছনে গোপন চক্রান্ত রয়েছে রাম-বাম আঁতাতের। কলকাতা হাই কোর্ট যে কোনও রায় ঘোষণার আগেই বিজেপি নেতারা তা জানতে পারছেন এবং নির্বাচনী প্রচারে লাগাতার চাকরি যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। সে বিরোধী দলনেতা তথা গদ্দার শুভেন্দু অধিকারীই হন বা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। হাই কোর্টের রায় ঘোষণার আগেই সেই রায় বিজেপি নেতাদের মুখে মুখে ঘুরছে এটা কীভাবে সম্ভব? এদিন তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এসএসসি মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে একধাক্কায় বিপুল সংখ্যক চাকরি বাতিলের জন্য গেরুয়া শিবিরের ঘৃণ্য রাজনীতি এবং তাঁদের হাত ধরে সিপিএমও নোংরা খেলায় মেতে রাজ্যের সর্বনাশ করতে চাইছে বলে তোপ দাগল তৃণমূল।
এদিনের রায়ে সুপ্রিম কোর্টকে শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, শীর্ষ আদালতের রায়েই পরিষ্কার কলকাতা হাই কোর্টের রায় কতখানি জনবিরোধী ছিল। নির্বাচনের মুখে বিজেপি তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হাই কোর্টের রায় ঘোষণার আগেই নিজের মুখে কত মানুষের চাকরি যেতে পারে তা বলে দিচ্ছেন কীভাবে? এদিন চন্দ্রিমা বলেন, আগে জানতাম ইডি, সিবিআইকে দিয়ে বিরোধীদের শুধুমাত্র হেনস্থার জন্য কাজে লাগায় কেন্দ্রের মোদি সরকার। কিন্তু এদিন সুপ্রিম কোর্টের রায় স্পষ্ট করে দিল রাজ্যবাসীর প্রতি বিজেপির ‘ইমোশনের’ আসল জায়গা। এরপরই রাজ্যবাসীর প্রতি বিজেপির মনোভাবের ছবি তুলে ধরে চন্দ্রিমার দাবি, মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট বিজেপির ছোড়া বোমা নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে। সত্যের জয় হয়েছে। তিনি আর জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্ত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে মানুষের পাশে থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অন্যদিকে, এদিন তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী জানান, ভোটের ফায়দা তোলার জন্য রাম-বাম জোট রাজ্যের বিরুদ্ধে একহয়ে মিথ্যা অপ্রপ্রচার চালাচ্ছিল। কিন্তু এদিন সুপ্রিম কোর্টের রায় বিরোধীদের সেই আশায় জল ঢেলে দিল। নির্বাচনের আগে কোনও ইস্যু না পেয়েই বাংলার বাতিল ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করে রাজ্য সরকারকে কোণঠাসা করতে চেয়েছিল রাম-বাম জোট। কিন্তু সুপ্রিম নির্দেশে সেই বিরোধীদের সেই আশা বিশ বাঁও জলে বলে মনে করছেন অরূপ। এদিন অরূপ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর দিকে সরাসরি প্রশ্নের আঙুল তুলে মনে করিয়ে দেন, শুভেন্দু অধিকারী কীভাবে হাই কোর্টের রায় ঘোষণার আগেই বলে দিতে পারেন ঠিক কত তারিখে কতজনের চাকরি যাবে? পাশাপাশি এদিন বিজেপির বাঁকুড়ার বিধায়ক নিলাদ্রী শেখর দানাকেও একহাত নেন তৃণমূলের মুখপাত্র। তবে এদিন রাম-বাম জোটের কুৎসার রাজনীতি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যে মাঠে মারা গেল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও পড়ুন- সত্যজিৎ রায়ের ১০৩ তম জন্মবার্ষিকীতে বিশেষ পুরস্কার অনুষ্ঠান