সম্প্রতি একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল সমুদ্র দানব একটি নীল তিমি (blue whale) সদ্যোজাত সন্তানের মৃত্যুর শোকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার পথ সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছিল। যে নীল তিমিকে সামুদ্রিক আতঙ্কের আর এক নাম হিসাবে ভাবা হয়, সেই তিমির মাতৃত্বের ছবি দেখে সন্তানের সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কর্ণাটকের (Karnataka) সাবিত্রী বোধহয় সন্তান লাভের ছয় বছর পরেও অনুভব করতে পারেননি সেই মাতৃত্ব। তাই স্বামীর সঙ্গে বিবাদে নিজের মূক-বধির সন্তানকে কুমির ভরা খালে ফেলে দিতে একবারও ভাবেননি। মৃত্যু যন্ত্রণার কোনও প্রকাশ করতে না পেরেই কুমিরের মুখে প্রাণ গিয়েছে ছয় বছরের বিনোদের।
কর্ণাটকের উত্তর কন্নড় (Uttara Kannada) এলাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন রবি কুমার। স্ত্রী সাবিত্রী বাড়িতে সহায়িকার কাজ করেন। তাঁদের বড় ছেলে বিনোদ মূক ও বধির। তাঁদের আরও একটি আড়াই বছরের পুত্র সন্তান রয়েছে। কিন্তু ছয় বছরের বিনোদের কথা বলতে না পারা ও শুনতে না পারার জন্য প্রতিদিনই সংসারে অশান্তি লেগে থাকত। শনিবার অশান্তি চরমে উঠলে সাবিত্রী সামনের খালে বিনোদকে ছুঁড়ে ফেল দেন। এই খালটি স্থানীয় কুমির ভর্তি কালি নদীর সঙ্গে যুক্ত । ফলে খালও কুমিরে ভরাই থাকে। প্রতিবেশীরা বিনোদকে সেই খালে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার খবর শুনেই আঁৎকে ওঠেন। তারাই শুরু করেন শিশুটির খোঁজ, কারণ মূক-বধির বিনোদের পক্ষে বিপদে পড়লে চিৎকার করাও সম্ভব ছিল না।
দমকল বিভাগে খবর দেওয়া হলে তাঁরাও রাতে অনুসন্ধান শুরু করেন। কিন্তু কুমির ও অন্ধকারের কারণে খোঁজ বন্ধ রাখতে হয়। রবিবার সকালে ফের তল্লাশি শুরু হতেই প্রায় কুমিরের গ্রাস থেকে উদ্ধার হয় বিনোদের ক্ষতবিক্ষত দেহ। বাঁহাতটি তখন কুমিরের পেটে। গোটা শরীরে অজস্র ক্ষত। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান কুমির কারণেই মৃত্যু হয়েছে ছয় বছরের বিনোদের। তবে প্রকৃত কারণ জানতে দেহাংশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে সাবিত্রীকে। স্ত্রীকে গোটা ঘটনায় দায়ী করেছে রবি। যদিও সাবিত্রীর দাবি রবি প্রতিদিন বিনোদের মৃত্যু কামনা করত। বাড়িতে বসে অন্ন ধ্বংস করছে বলে মানসিক নির্যাতন করত সাবিত্রী ও বিনোদকে। সেই অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে বিনোদকে খালে ছুঁড়ে ফেলে দেয় বলে দাবি সাবিত্রীর। আদালত সাবিত্রীকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।