গত কয়েক বছরে “বৃদ্ধতন্ত্র” থেকে দলকে মুক্তি দিতে মরিয়া সিপিএমের (CPIM) বৃদ্ধরাই! একুশের লোকসভা ভোটের(Loksabha Election)আগে থেকেই সেই প্রসেস শুরু হয়েছে। যা এখনও চলমান। নতুন প্রজন্ম টানতে ট্র্যাডিশনের বাইরে গিয়ে প্রথমে “টুম্পা সোনা” প্যারোডি হল। সেই সময় যা নিয়ে লাল পার্টির অন্দরে তুমুল বিতর্ক হলেও সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তীর মতো বর্ষীয়ান নেতারাও এই “টুম্পা সোনা”-কে আপন করে নিয়েছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়! এরপর শূন্য হল বামেরা। তৈরি হল মৌলিক গান। আবার একটা ভোট। এ রাজ্যের সিপিএমের অস্তিত্বরক্ষার শেষ লড়াই, ঠিক সেই পরিসরে দাঁড়িয়ে এবার এল র্যাপ। ভোটের প্রচারে সিপিএম (CPIM) সে র্যাপ গান ব্যবহার করছে।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে র্যাপ গান নিয়ে কারও বিশেষ আপত্তি হওয়ার কথা নয়, কিন্তু সেই গানে ভাষার প্রয়োগ নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। দলের অন্দরেই অনেকে যা মেনে নিতে পারছেন না। কমরেডদের একাংশের বক্তব্য, “উচ্চারণের অযোগ্য শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে গানে। বামেদের সংস্কৃতির সঙ্গে এ গানের কথা খাপ খায় না। বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিসরে এই ধরনের রুচিহীন শব্দের আমদানিও এর আগে দেখা যায়নি।”
বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। লোকসভা ভোট প্রচারের র্যাপটি বঙ্গ সিপিএমের সোশ্যাল মিডিয়ায় অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে হইহই করে প্রকাশিতও হয়েছে। তবে বিতর্ক তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গানটি নিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলতে উঠেপড়ে লেগেছে সিপিএম। সিপিএম নেতৃত্ব এখন উল্টে গাইছেন। বলছেন, “শিল্পীদের জিজ্ঞেস করুন।” আর পার্টির নিচুতলার কর্মীদের প্রশ্ন, “রাজনৈতিক বক্তব্য তুলে ধরতে গেলে অশালীন শব্দ প্রয়োগ করতে হয়? নেতৃত্বরা কি দেখছেন এগুলো?”
গত কয়েকদিন সিপিএমের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হচ্ছিল, “চল ফোট” আসছে। এই র্যাপটির নামও হল “চল ফোট”। গানটি প্রকাশিত হওয়ার পর অনেকেই অবাক! আরও অনেক শব্দ রয়েছে গানটির মধ্যে যেগুলি সাধারণত শিক্ষিত, ভদ্র সমাজে উচ্চারণ করে না বাঙালি। ফলে বিতর্ক তৈরি হতে সময় লাগল না। আর বিতর্ক তৈরি হতেই দায় এড়ানোর পথে হাঁটলেন নেতারা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ি বলেছেন, “গানটা সিপিএমের পক্ষ থেকে হয়নি। গান লিখেছেন অর্ক মুখোপাধ্যায় আর লিখেছেন জয়রাজ ভট্টাচার্য।” ‘কিন্তু গানের ভিডিও তো বঙ্গ সিপিএমের অফিসিয়াল পেজ থেকেই প্রকাশিত?” এই প্রশ্নের উত্তরে শমীকবাবুর বক্তব্য, “আমাদের পেজে আছে। অনেকের পেজেই আছে। এটা ওরা ব্যবহার করেছেন। জিজ্ঞেস করলে ওঁরাই বলতে পারবেন। আমাদের অনেক গণনাট্যের গান আছে। তার দায়বদ্ধতা আমাদের। এটার দায়বদ্ধতা আমাদের নয়।” অর্থাৎ দলের পেজ থেকে আপলোড হলেও র্যাপটির দায় নিচ্ছেন না সিপিএম নেতারা।
অন্যদিকে এই র্যাপ যে “বিপ্লবী” লিখেছেন সেই জয়রাজ ভট্টাচার্য বলছেন, “আমি এই প্রথম এরকম একটা মতামত শুনলাম। এটা একটা র্যাপ। র্যাপ মূলত ফ্রেঞ্চ ব্ল্যাক মুভমেন্টের সময় তৈরি হয়। র্যাপের প্রাথমিক বৈশিষ্ট অশালীন শব্দের ব্যবহার। আমার মনে হয়, এই শব্দটা বহুল প্রচলিত। হ্যাঁ অশালীন শব্দ কিন্তু অত্যন্ত গুরুতরভাবে কাউকে নিচু করা হচ্ছে এরকম কোনও উদ্দেশ্য এটার নেই।” অর্থাৎ, গানের স্রষ্টা ফ্রেঞ্চ ব্ল্যাক মুভমেন্ট আর ভারতের লোকসভা ভোটকে একই আসনে বসাতে চাইছেন!
কিন্তু রাস্তাঘাটে চল ফোট বাজানোর রুচি দেখাবেন সিপিএমের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা? আর যদি তা হয়, তাহলে বলতেই হচ্ছে, সিপিএমের নতুন প্রজন্ম আসলে অপসংস্কৃতিতে ভরপুর রোদ্দুর রায় কালচারকে রপ্ত করতে মরিয়া!