জাতীয় নির্বাচন কমিশনের (Election Commission of India) কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়ে রাজধানীতে হেনস্থার শিকার তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC ) প্রতিনিধি দল। সোমবারের ঘটনার জের মঙ্গলেও অব্যাহত। গতকাল সন্ধ্যায় রাজভবনে গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক সহ মোট ১০ জনের প্রতিনিধি দল রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। বাইরে বেরিয়ে অভিষেক জানান গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (CV Anand Bose) নিজেকে “গণতন্ত্রে রক্ষাকর্তা”করতে বলে দাবি করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ পুলিশের বর্বরোচিত আচরণের পর নির্বাচন কমিশনের (EC) ভূমিকা নিয়ে কী পদক্ষেপ করবেন রাজ্যপাল তা জানতে মঙ্গলবার ফের রাজভবন (Rajbhawan) যাবেন অভিষেক।
সোমবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সামনে তৃণমূল সাংসদদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে অমিত শাহের পুলিশের নির্লজ্জ আক্রমণের পরেই এই বিষয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের হস্তক্ষেপ চান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল হেনস্থার বিষয়টির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।রাজ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন বিজেপি নেতাদের প্ররোচনায় কেন্দ্রীয় এজেন্সির অতি সক্রিয়তা নিয়ে অভিযোগ জানাতে সোমবার নির্বাচন সদনে যান তৃণমূলের দশ সদস্যের প্রতিনিধিদল। তৃণমূলের পক্ষ থেকে সমান মাঠে খেলার সুযোগের দাবি জানানো হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এরপর নির্বাচন কমিশনের ভবনের বাইরে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বসেন তৃণমূলের পাঁচ সাংসদ-সহ প্রতিনিধিরা। আচমকাই সেখানে দিল্লি পুলিশ এসে তৃণমূলের প্রতিবাদের পথ বন্ধ করার চেষ্টা করে। জোর করে সাংসদ ও তৃণমল নেতৃত্বদের পাঁজাকোলা করে তোলা হয় প্রিজন ভ্যানে। পায়ে আঘাত লাগা সাংসদ দোলা সেনকেও রেয়াত করেনি অমিত শাহের পুলিশ। এর আগেও কেন্দ্রের থেকে প্রাপ্য টাকা আদায়ের দাবিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যখন দিল্লিতে রাজ্যের দাবি পেশ করতে গিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব, তখনও একই ভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পুলিশের হাতে হেনস্তা হতে হয়েছিল। সোমবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে গর্জে ওঠেন অভিষেক। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে অভিষেক লেখেন, ‘২০২৩ সালের অক্টোবরে, কৃষি ভবনের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়েছিল। আজ প্রকাশ্য দিবালোকে বাইরে হামলা হল!যত দিন যাচ্ছে, বাংলা বিরোধী জমিদাররা তাদের ক্ষমতার জন্য হিংস্র ও মরিয়া হয়ে উঠছে। উপযুক্ত জবাব দেবে বাংলা।বিজেপি তোমার কোমর বেঁধে নাও!’
সোমবার রাতে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলার পর রাজভবনের বাইরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে, দিল্লিতে প্রতিনিধি দলের উপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিষেক। তাঁর কথায়, NIA-এর ডিরেক্টর, এসপি-কে বদলের দাবি জানানো হয়েছিল ঠিকই কিন্তু তার থেকেও বেশি ছিল জলপাইগুড়িতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি করার অনুমতির দাবি। গরিব মানুষ বাড়ি পাক- এই দাবি করেছিলেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। এটাই কি তাদের অপরাধ? সেই কারণেই তাঁদের ওইভাবে টেনে হিঁচড়ে প্রিজেন ভ্যানে তোলা হলো!এরপরে বিস্ফোরক অভিযোগ করে অভিষেক বলেন, বিজেপির তল্পিবাহক হিসেবে কাজ করছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি। কেন তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে না? তৃণমূলে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সাফ জানান, আমাদের অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে নয়। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। কারণ এখন আইনশৃঙ্খলা দেখার দায়িত্ব তাদের। অভিষেকের কথায়, ২০২১-এ যে পরিণতি হয়েছিল, এবারের লোকসভা ভোটে তার থেকেও খারাপ পরিণতি বিজেপির হবে। যেভাবে গণতন্ত্র বিপন্ন হচ্ছে এই ঘটনায় ধিক্কার জানিয়ে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ দাবি করেন অভিষেক। তৃণমূলের তরফে জানানো হয় যে সি ভি আনন্দ বোস গুরুত্ব দিয়ে গোটা বিষয়টি শুনেছেন। এরপর তিনি কি পদক্ষেপ করছেন তা জানতে মঙ্গলের সন্ধ্যায় রাজভবনে যাবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে দিল্লিতে চব্বিশ ঘণ্টা ধর্না অবস্থানে থাকছেন তৃণমূল সাংসদরা।