কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইয়ের সঙ্গে মিলে বাংলায় বিজেপির জঘন্য ষড়যন্ত্রের পর্দা ফাঁস করল তৃণমূল (TMC)। রাজনৈতিকভাবে লড়তে না পেরে মাঠ ফাঁকা করতে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে কাজে লাগাচ্ছে গেরুয়া শিবির। এনআইএ-কে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলের নেতা শুধু নয়, বুথ কর্মী- এজেন্টদেরও গ্রেফতারের ছক সামনে ফাঁস করল তৃণমূল। অভিযোগ, NIA-র SP ধনরাম সিংয়ের কলকাতার বাড়িতে গোপনে বৈঠক করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের তালিকা তুলে দিয়েছেন বিজেপি (BJP) নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি (Jitendra Tiwari)। রবিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Chandrima Bhattacharya) ও তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)।
রীতিমতো তারিখ সময় এবং ভিজিটরস বুকের তথ্য প্রমাণ সহযোগে তথ্য সামনে এনেছে তৃণমূল। তৃণমূলের দাবি অবিলম্বে এনআইয়ের SP-কে হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করতে হবে। দেখতে হবে সরকারি পদের অপব্যবহার করে অর্থ ও অন্যান্য রাজনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে তিনি দেশবিরোধী বা রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তে জড়িয়েছেন কি না। রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে অবিলম্বে পুলিশ যাতে ধনরাম সিং-এর বিরুদ্ধে এফআইআর করে তদন্ত শুরু করে।
তৃণমূলের অভিযোগ, এই ঘটনার সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও জড়িত। তারাই বলে দিচ্ছে, বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব তৃণমূলের যে নেতাকর্মীদের তালিকা দিচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে গ্রেফতার করতে হবে। সেই অনুযায়ী কাজ করছে NIA। বহু পুরনো মামলা হলেও আচমকা এই লোকসভা নির্বাচনের মুখে যখন আদর্শ আচরণ বিধি জারি হয়ে গিয়েছে তখন জিতেন্দ্র তিওয়ারি গিয়েছেন NIA অফিসারের বাড়িতে। লক্ষ্য রাখতে হবে অফিসে নয় কিন্তু। এই বেলা নির্বাচন কমিশন দেখতে পায় না! অথচ ৪৮ ঘণ্টায় তিনবার ডিজি বদল হয়ে যায়।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে ভিজিটর্সবুকের নথি ও অন্য হাতে ধনরাম সিং-এর নিউটনের ফ্ল্যাটের লিজ এগ্রিমেন্টের কপি তুলে ধরে কুণাল বলেন, ২৬ মার্চ ২০২৪ নিউটাউনে NIA- এসিপ-র ফ্ল্যাটে যান বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র। ওইদিন সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ গিয়ে ৭ টা ২২ পর্যন্ত ছিলেন তিনি। ফ্ল্যাট নম্বর NRG-066, চতুর্থ তল, টাওয়ার – 1। ওই ফ্ল্যাটে সাদা খামে কিসের লেনদেন হয়েছে? কত আর্থিক লেনদেন হয়েছে? তার তদন্ত করুক পুলিশ। অফিসারের অফিসে না গিয়ে সন্ধেয় গোপনে কেন তাঁর ফ্ল্যাটে যেতে হল? ওই ৫২ মিনিটের মধ্যে জিতেন্দ্র তিওয়ারি ও ধনরাম সিং-এর মোবাইল ফোন থেকে কাদের ফোন করা হয়েছে তা তদন্ত করে বের করুক পুলিশ- দাবি তৃণমূলের।
একইসঙ্গে বাংলার কোনও মামলাতে এই ধনরাম সিং-কে রাখা যাবে না। অবিলম্বে তাঁকে বাংলা থেকে বহিষ্কার করতে হবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে হবে। এরপর যদি কেউ এই ঘটনা অস্বীকার বা ভুল বলে দাবি করেন, তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জিতেন্দ্র ওই হাউজিংয়ে ঢোকার ভিডিও ফুটেজ রিলিজ করে দেওয়া হবে।
মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, NIA কোনও ঘটনা তদন্ত করছে না। ২০২২ এর ডিসেম্বরের একটি ঘটনা। এতদিন তারা কিছু করল না। এখন ২০১৪-এ ভোটের আগে তাদের মনে পড়ল তদন্ত করতে হবে? তৃণমূলের বুথকর্মী ও এজেন্টের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, ডাকলেও এঁরা দেখা করেননি? এতদিন তবে চুপ করে বসেছিল কেন? প্রশ্ন চন্দ্রিমার। তাঁর সংযোজন ভোররাতে পুলিশকে না জানিয়ে বাড়িতে চলে গেল NIA-এর টিম। তাদের সঙ্গে কি মহিলা অফিসাররা ছিলেন? মহিলাদের যেভাবে অসম্মান করা হয়েছে তার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করেছেন মহিলারাই। ভবিষ্যতেও এই অসম্মানের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ তারাই করবেন। এখন তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে কথা বলা হচ্ছে, মিথ্যে প্রচার করা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশনও অভিযোগ জানাবে তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের সময় চওয়া হয়েছে। কমিশন সময় দিলে তৃণমূলের দশজনের একটি প্রতিনিধি দল যাবে। ভূপতিনগরের পথে চন্দ্রিমা ও কুণাল।
দলের বক্তব্য চৈত্রে শুধু এনআইয়ের পর্দা ফাঁস হল। এরপর বৈশাখে আরও দুটি সংস্থার অফিসারদের কীর্তিকলাপ সামনে আনা হবে। প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথাও ভাবছে রাজ্যের শাসকদল।