ফিরল বৈদিক রীতি! সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের মেয়ের পৈতের আয়োজন চিকিৎসক দম্পতির

0
1

এগোচ্ছে সমাজ, বদলাচ্ছে দুনিয়া। প্রতিদিনই আমাদের আশেপাশে এমন কিছু ঘটনা আমাদের সামনে আসে যা অন্য ঘটনার থেকে একটু হলেও আলাদা। সে ঘটনা বলুন বা দুর্ঘটনা। যা আলাদা সেটাই সংবাদ শিরোনামে জায়গা করে নেয়। তবে আজ এমন একটা ঘটনার কথা আপনাদের শোনাব যা শুনলে আপনি যেমন অবাক হবেন আবার কেউ কেউ নাক উঁচিয়ে বর্তমান সমাজের বাপবাপান্তও করতে পারেন। তবে এমন ঘটনা আর যাই হোক সমাজে মহিলাদের জন্য যে এক নয়া দিগন্ত খুলে দেবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনই এক ঘটনার ‘কারিগর’ কর্মসূত্রে কলকাতায় (Kolkata) বসবাসকারী সিউড়ির বাসিন্দা এক চিকিৎসক দম্পতির। আদি অনন্তকাল ধরে চলে আসছে ব্রাহ্মণ সমাজে ছেলেদের একটা বয়সের মধ্যে উপনয়ন করাতে হয়। এই খবরে নতুন কিছু নেই। তবে সিউড়ির ওই চিকিৎসক দম্পতি এবার তাঁদের মেয়ের উপনয়নের আয়োজন করলেন। কার্ড ছাপিয়ে, নিমন্ত্রণ সেরে, প্যান্ডেল খাঁটিয়ে সে যেন এক যুগান্তকারী পদক্ষেপের পথে বসন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ও কৌশানী চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের মেয়ে কৈরভীর পৈতের (Thread Ceremony) আয়োজন করেছেন তাঁরা। পাশাপাশি কেন তাঁরা এমন পদক্ষেপ নিলেন এর পিছনে আসল কারণ কী তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ নিমন্ত্রণপত্রে লিখে দিয়েছেন চিকিৎসক দম্পতি।

নিমন্ত্রণ পত্রে তাঁদের দাবি, বৈদিক যুগে মেয়েদের ‘দ্বিজা’ হওয়ার রেওয়াজ ছিল। সেই প্রথা ফিরিয়ে আনতেই এই মহান উদ্যোগ। রবিবারই সিউড়ির রামকৃষ্ণপল্লির বাসভবনে মেয়ে কৈরভীর উপনয়নের আয়োজন করছেন তাঁরা। কিন্তু আচমকা কেন এই সিদ্ধান্ত মাথায় এল? উত্তরে দম্পতি জানিয়েছেন, এটা আচমকা ইচ্ছে থেকে নয়, তথ্য-প্রমাণের উপরে ভিত্তি করেই তাঁদের কন্যার জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে তাঁরা। চিকিৎসক দম্পতি সাফ জানিয়েছেন, মেয়েদের ছিনিয়ে নেওয়া অধিকার ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যেই এই বিশেষ উদ্যোগ। তাঁরা আরও জানান, ছেলে মেয়ের সবসময় সমানাধিকার। আর সেকারণেই নিজের মেয়ের পৈতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। তবে বর্তমানে বদলেছে সময়। এখন পুরুষ ব্রাহ্মণের আধিক্য কমেছে। একাধিক বিয়ের অনুষ্ঠানে সমস্ত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সঠিক মন্ত্র পড়ে নিখুঁতভাবে পালন করছেন সমস্ত নিয়মকানুন। বসন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি কলকাতার এনআরএস হাসপাতাল থেকে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে শল্য চিকিৎসক পদে বদলি হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী কৌশানী চট্টোপাধ্যায় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। কলকাতায় বি সি রায় চাইল্ড হাসপাতালে কর্মরত তিনি। থাকেন কলকাতার যাদবপুরে। তাঁদের মেয়ে কৈরভী কলকাতার একটি সিবিএসই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।

বসন্ত জানান বেশ কয়েকবছর আগের কথা। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে কৈরভীর অন্নপ্রাশনের সময় পুরোহিত যজ্ঞ করতে রাজি ছিলেন না। তাঁর মত ছিল, যজ্ঞ কেবল পুত্রের অন্নপ্রাশনের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। মেয়েদের বিয়ের সময় শুধু যজ্ঞ করা যায়। অন্য সময় না। যদিও এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেন বসন্তের বাবা বাবা বাঁশরীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। বসন্তের কথায়, বাবার যুক্তি ছিল, ধর্মে এমন বিধিনিষেধ থাকার কথা নয়। শেষ পর্যন্ত পঞ্জিকা ঘেঁটে দেখা যায় এমন কোনও কথা সেখানে উল্লেখ নেই। তারপরই এমন চিন্তা মাথায় আসে।