লোকসভা নির্বাচনের আগে সন্দেশখালি নিয়ে হাওয়া গরম করার চেষ্টা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। রাজ্য পুলিশের কড়া পদক্ষেপে মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারি, এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার পর কেন্দ্র সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর এক্ষেত্রে আর কিছুই করার বাকি নেই। সেই পরিস্থিতিতে নির্বাচন পর্যন্ত এই ইস্যুকে বাঁচিয়ে রাখতে বারাসাতের সভা থেকে ফের সন্দেশখালি নিয়ে হাওয়া গরম করলেন নরেন্দ্র মোদি। যদিও যেভাবে সন্দেশখালির সাজানো ঘটনা নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে সরব হতে দেখা গেল তাঁর ছিঁটেফোঁটাও দেখা গেল না মণিপুর, হাথরস, উন্নাও বা উত্তরপ্রদেশের কোনও নির্যাতিতাদের জন্য দেখা গেল না।
ভোট বড় বালাই। বাংলায় রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের নারীদের যে উন্নয়নে রত, মানুষের দাবি শুনে সেই মতো পূরণের যে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভাগুলি থেকে পাওয়া যায়, তাতে এরাজ্যে বিজেপির ভোটে খেলার মতো তাসই নেই। শেষপর্যন্ত সন্দেশখালির ঘটনাকে নির্বাচনের ইস্যু করেই এগোতে চাইছে বিজেপি। এবার সেই ইস্যুতে ইন্ধন দিয়ে শান্ত সন্দেশখালিকে ফের অশান্ত করার চেষ্টা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। এই সভা দেশের প্রতি মণ্ডলে সম্প্রচার করার ব্যবস্থা করেছিল বিজেপি। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সন্দেশখালি দেখিয়েছে দেশের মহিলারা আক্রোশে আছে। নারীশক্তির এই আক্রোশ সন্দেশখালিতে সীমিত থাকবে না। সারা বাংলায় সন্দেশখালির ঝড় উঠবে।” এভাবেই রাজ্যের শান্ত পরিস্থিতিকে নির্বাচনের আগে ইন্ধন দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
সেই সঙ্গে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ পর্যন্ত একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি মণিপুরের মহিলাদের ওপর নির্মম নির্যাতন নিয়ে, তাঁর মুখেই শোনা গেল মহিলাদের সংকটে হেল্পলাইন চালু করার কথা। সেপ্টেম্বরে মণিপুরে দুই মহিলার প্রকাশ্যে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরও নীরব থাকতে পেরেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। বিজেপির সাংসদের বিরুদ্ধে দেশের মহিলা খেলোয়াড়দের তোলা নারীনিগ্রহের পরও মহিলাদের জন্য কোনও আশ্বাস শোনা যায়নি নরেন্দ্র মোদির মুখে। সেই নরেন্দ্র মোদি লোকসভা ভোটের আগে বারাসাতে এসে শোনালেন, “সংকটের সময় বোনেরা সহজে অভিযোগ জানাতে পারে। তার জন্য মহিলা হেল্পলাইন চালু করেছে বিজেপি সরকার।”
বুধবার বারাসাতে নারী শক্তি বন্দন মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী মহিলাদের ওপর অত্যাচারের উদাহরণ হিসাবে একমাত্র বাংলার নামই মনে করতে পারলেন। যদিও মহিলাদের উন্নয়নে নতুন কোনও আশ্বাস তাঁর মুখে শোনা গেল না। মাসের শুরুতে রান্নার গ্যাসের দাম বেড়ে আগুন লেগেছে গৃহস্থ মহিলাদের ঘরে। তারপরেও মোদির দাবি, “বিজেপি সরকার উজ্জ্বলা যোজনায় সস্তা সিলিন্ডার দিচ্ছি।” সেই সঙ্গে বারবার আবাস যোজনায় বঞ্চনার অভিযোগ তোলা বাংলার মহিলাদের জন্যও নতুন কোনও আশার কথা শোনাতে পারলেন না মোদি। তিনি বললেন, “আবাস যোজনায় বাংলায় ২৪ লক্ষ ঘর মহিলাদের নামে আছে।” অথচ ১১ লক্ষ বাড়ি যা প্রাপ্য রয়েছে বাংলার মানুষের তা নিয়ে কিছুই শোনা গেল না প্রধানমন্ত্রীর মুখে।