হস্টেল থেকে ছুটি পেতে জুনিয়র পড়ুয়াকে খুন স্কুল পড়ুয়ার!

0
1

২০১৭ সাল – গুরুগ্রাম, হরিয়ানা। ২০১৮ সাল – ভদোদরা, গুজরাট। ২০২৪ সাল – মানবাজার, পশ্চিমবঙ্গ
স্কুল পড়ুয়াদের নৃশংসতার একই রকম সাক্ষী এই তিন জায়গা। গুরুগ্রামে স্কুলের মধ্যে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়ার হাতে খুন হয় দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। ভদোদরাতেও একাদশ শ্রেণির ছাত্রের হাতে স্কুলেই খুন নবম শ্রেণির পড়ুয়া। আর এবার বাংলায়। পুরুলিয়ার মানবাজারে হস্টেলের মধ্যে এক প্রথম শ্রেণির পড়ুয়াকে খুনে এক অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াকে আটক করল পুলিশ।

গুরুগ্রামে দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়ার নৃশংস খুনের পর আঁৎকে উঠেছিল গোটা দেশ। কীভাবে এক অভিজাত স্কুলের পড়ুয়া খুন করার মতো মানসিকতা পায়, এই প্রশ্ন যখন সবাই নাড়া দিয়েছিল, তখনই প্রকাশ্যে আসে এক অদ্ভুত উত্তর। স্কুল পড়ুয়ার মৃত্যু হলে স্কুল ছুটি হবে, পরীক্ষা বন্ধ হবে। এমনকি প্যারেন্টস-টিচার্স মিটিং বাতিল হবে। তাই দ্বিতীয় শ্রেণির এক পড়ুয়াকে খুনই করে ফেলেছিল একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। একইভাবে ছুটি পেতে গুজরাটের ভদোদরায় সিনিয়রের হাতে খুন হতে হয় এক জুনিয়রকে। পুরুলিয়ায় প্রথম শ্রেণির পড়ুয়ার দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যকরভাবে একই কারণ উঠে এলো।

৩০ জানুয়ারি মানবাজার থানার ঘাসতোড়িয়া সারদা শিশু মন্দির শান্তিবন আবাসিক স্কুলের এক প্রথম শ্রেণির পড়ুয়ার দেহ উদ্ধার হয় স্কুলের পাশের পুকুর থেকে। ময়নাতদন্তে বেরিয়ে আসে জল ডুবে না, মাথায় চোট পেয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই খুদের। এরপরই তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে আসে পুরুলিয়া পুলিশের। অষ্টম শ্রেণির এক পড়ুয়া স্বীকার করে হস্টেলে ছুটি পাওয়ার জন্য খুদে পডুয়াকে লজেন্সের লোভ দেখিয়ে বের করে আনে সে। তারপর মাথা থেঁৎলে খুন করে জলে ফেলে দেয় দেহ। মঙ্গলবার চতুর্থ পিরিয়ডের পর থেকে মৃত ও অভিযুক্ত – দুই পড়ুয়াকেই আর দেখা যায়নি স্কুলে। সেই থেকেই অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ার ওপর সন্দেহ তৈরি হয় পুলিশের।

ঘটনার জেরে স্বাভাবিকভাবে আতঙ্কে অন্যান্য পডু়য়াদের পরিবার। মাত্র দুসপ্তাহ আগে হস্টেলে থাকতে আসে ওই অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া। কিন্তু বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছিল না সে। হস্টেলে কারো মৃত্যু হলে সে ছুটি পাবে, এমন ভেবেই এই কাণ্ড সে ঘটিয়েছে, পুলিশি তদন্তে এমনটাই উঠে এসেছে। ক্রমাগত বাড়তে থাকা পড়ার চাপ আর বাড়ি থেকে দূরে থাকার কষ্ট শিশুদের মধ্যে ঠিক কীভাবে প্রকাশ পায়, তার আরও একটা মর্মান্তিক উদাহরণ নিজের প্রাণ দিয়ে দিল ছয় বছরের এক পড়ুয়া। পুলিশ অভিযুক্ত ছাত্রকে পুরুলিয়ার শিমুলিয়া আনন্দ মঠ জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের কাছে হাজির করা হয়। সেখান থেকে ওই কিশোরকে হুগলির কল‌্যাণ ভারতী হোমে পাঠানো হয়েছে।