নীরব মোদি, মেহুল চোকসি, বিজয় মালিয়াতেই জালিয়াতি শেষ হয়ে যায়নি। শিল্পপতিদের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি লাগাতার জারি রয়েছে দেশে। চাঞ্চল্যকর এমনই নির্মম সত্য প্রকাশ্যে চলে এল কেন্দ্রের রিপোর্ট। সোমবার সংসদে কেন্দ্রের মোদি সরকার স্বীকার করে নিল ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ আর্থিক বছর অর্থাৎ গত ৫ বছরে দেশের ১২ টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কে ৩ লক্ষ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতি হয়েছে।
এদিন সংসদে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায় লিখিত প্রশ্ন করেছিলেন গত পাঁচটি আর্থিক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে কত টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতি হয়েছে? এর লিখিত জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভাগবত কারাদ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, ২০১৮-১৯ সালে ৫০ হাজার ২৬৪ কোটি, ২০১৯-২০ সালে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৬৯২ কোটি, ২০২০-২১ সালে ৬৭ হাজার ৪৫৯ কোটি, ২০২১-২২ সালে ৩২ হাজার ৩৭৫ কোটি এবং ২০২২-২৩ সালে ১৯ হাজার ৭৫ কোটি টাকার জালিয়াতি হয়েছে ১২ টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। এই হিসাবের মধ্যে ধরা হয়েছে ১ লক্ষ টাকা বা তার বেশি পরিমাণ টাকার জালিয়াতির ঘটনা।
উল্লেখযোগ্যভাবে, আরবিআই তথ্য অনুযায়ী আলোচ্য পাঁচ বছরে সব থেকে বেশি ব্যাঙ্ক জালিয়াতি হয়েছে গত লোকসভা নির্বাচনের বছরে, অর্থাৎ ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে। ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা ও আর্থিক পরিমাণ সবথেকে বেশি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায়। আলোচ্য পাঁচ বছরে এসবিআই-তে জালিয়াতির আর্থিক পরিমাণ ৫৮ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানে আছে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, ৪৫ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ৩৭ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। এর পরে আছে যথাক্রমে, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা (৩২ হাজার ৮১ কোটি টাকা), কানাড়া ব্যাঙ্ক (২৭ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা), ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (২৭ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা), ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক (১৯ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা), ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক (১৮ হাজার ১০৭ কোটি টাকা), সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (১১ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা), ইউকো ব্যাঙ্ক (১১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা), ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র (৭ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা), পাঞ্জাব এন্ড সিন্দ ব্যাঙ্ক (৪ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা)।
এই জালিয়াতি সম্পর্কিত ব্যাঙ্কগুলির বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে একটি প্রশ্নের জবাবে আরবিআইকে উদ্ধৃত করে মন্ত্রী জানান, আরবিআই জানিয়েছে যে যেখানেই প্রযোজ্য আইনগুলি এবং এর অধীনে জারি করা আরবিআই নির্দেশাবলী লঙ্ঘন চিহ্নিত করা হয় সেখানেই ব্যাঙ্কগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। আরবিআই জানিয়েছে, ১ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ৩৪ কোটি ১৪ লক্ষ টাকার আর্থিক জরিমানা আরোপ করা হয়েছে।