সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গল এফসি। এদিন কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ফাইনালে ওড়িশা এফসিকে হারালো ৩-২ গোলে। লাল-হলুদের হয়ে গোল গুলি করেন নন্দ কুমার, ক্রেসপো এবং অধিনায়ক ক্লেটন সিলভা। এই জয়ের ফলে এক যুগ পর ঢুকলো কোনও সর্বভারতীয় ট্রফি। শেষ ২০১২ সালে ট্রেভর মর্গ্যানের কোচিংয়ে ফেডারেশন কাপ জয় করেছিলো লাল-হলুদ।
ম্যাচের প্রথমার্ধের থেকেই চলে আক্রমণ প্রতি আক্রমণের লড়াই। ম্যাচের ৪ মিনিটের মাথায় ওড়িশা মাঝমাঠে ফাউল করে বসে। পার্দো ফ্রি-কিক নেন, সেটি প্রথমে ক্লিয়ার করে দেওয়া হয়। সেই বল পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে নন্দকুমার শট নেওয়ার চেষ্টা করলে, মাউইয়া সেটি বাঁচিয়ে দেন। পাল্টা আক্রমণে ঝাপায় ওড়িশা। ম্যাচের ১২ মিনিটের মাথায় রয় কৃষ্ণা ডানদিক থেকে বল নিয়ে উঠে আসে, তার পর বাঁ-দিকে সরে এসে বক্সের বাইরে থেকে শট নেয়। অল্পের জন্য শট গোলপোস্টের পাশ ঘেষে বেরিয়ে যায় । লাল-হলুদের রক্ষণে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে ওড়িশা।ম্যাচের ২৩ মিনিটের মাথায় ইশাক ডান দিক থেকে বাঁ-দিকের ফ্ল্যাঙ্কে একটি ক্রস পায়, পাশে রাকিপকে পায়, কিন্তু কেন্দ্রে তাঁর ক্রস শেষ পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গল সাফ করে দেয়। তবে পাল্টা আক্রমণে ঝাপাতে ভোলেনি কার্লোস কুয়াদ্রাতের দল। ম্যাচের ৩২ মিনিটের মাথায় ইস্টবেঙ্গল ফ্রি-কিক পায়। পারদো একটি সেট-পিস থেকে ফ্রি-কিক নেন এবং তাঁর জোরালো একটি শট সেভ করেন ওড়িশার গোলকিপার। তবে এরই মধ্যে গোল পেয়ে যায় ওড়িশা এফসি। ম্যাচের ৩৯ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে আহমেদ জহৌয়ের থেকে বল পান রয় কৃষ্ণা । কৃষ্ণা বুদ্ধি করে ডিফেন্ডারদেরকে তাঁর দিকে টেনে নিয়ে এসে, মরিসিও-কে বল বাড়ান। সেই বল ধরেই ডান পায়ে জালে বল জড়ান তিনি। প্রথমার্ধে ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকে কুয়াদ্রাতের দল।
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে চলে আক্রমণ প্রতি আক্রমণের লড়াই। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই জোড়া পরিবর্তন করেন ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লোস কুয়াদ্রাত। সিভেরিও এবং মান্দারের পরিবর্তে নামান মহেশ এবং লালচুংনুঙ্গাকে। আর এরপরই ম্যাচে ফেরে লাল-হলুদ। ম্যাচের ৫২ মিনিটে সমতা ফেরায় ইস্টবেঙ্গল। দুরন্ত গোল করেন নন্দকুমার। মহেশ উইথ দ্য বল দারুণ দৌড়ে এসে মাপা শটে বল বাড়ান নন্দকে। নন্দ বল পেয়ে একক দক্ষতায় ওড়িশার ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে এবং তারপর গোলরক্ষককে বিট করে জালে বল জড়ান। এরপর ম্যাচের ৬০ মিনিটে পেনাল্টি পায় লাল-হলুদ। নন্দকুমারকে ফাউল করেছিলেন দেলগাডো। তারপরও পেনাল্টি দিলেন না রেফারি ভেঙ্কটেশ। যা নিয়ে মাঠে উত্তেজনাও দেখা যায়। পরের মিনিটেই বোরহাকে ফাউল করা হলে, পেনাল্টি পায় ইস্টবেঙ্গল। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে এতটুকু ভুল করেননি ক্রেসপো। ম্যাচের ৬২ মিনিটে পেনাল্টিতে গোল করে লাল-হলুদকে ২-১ গোলে এগিয়ে দেন ক্রেসপো। এরপর ম্যাচের৬৯ মিনিটে বোরহার সঙ্গে ফের দ্বন্ধ মোর্তাদা ফলের। বল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা বোরহাকে কনুই মারেন ফল। রেফারি হলুদকার্ড দেখান। এই ম্যাচে দ্বিতীয় হলুদকার্ড দেখলেন মোর্তাদা ফল। স্বাভাবিক ভাবেই সেটি লালকার্ড হয়ে যাওয়ায় মাঠ ছাড়তে হল মোর্তাদাকে । যদিও এরপর পাল্টা আক্রমণে ঝাপায় ওড়িশা এফসি। পাল্টা আক্রমণ চালায় লাল-হলুদ। ম্যাচের ৭৯ মিনিটে দূরন্ত শট নেন বিষ্ণু। তবে অল্পের জন্য তা লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়। ম্যাচের ৯৭ মিনিটে পেনাল্টি পায় ওড়িশা এফসি। যেই সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেনি ওড়িশা। ওড়িশাকে পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরান আহমেদ জাহৌ। মরিসিও বল নিয়ে বক্সের মধ্যে দৌড়ে ঢুকছিলেন। প্রভসুখন গিল এগিয়ে এসে তাঁকে ফাউল করেন। ওড়িশা এফসিকে পেনাল্টি দেয় রেফারি।নির্ধারিত সময়ে ম্যাচের ফলাফল না আসায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ম্যাচের ৯৫ মিনিটে দূরন্ত শট নেন শৌভিক চক্রবর্তী। তবে তা বাড়ে লেগে যায়। তবে এরপরই বড় ধাক্কা খায় লাল-হলুদ। শৌভিক চক্রবর্তী ভালো খেলছিলেন। কিন্তু তিনি দ্বিতীয় হলুদকার্ড দেখেন। এবং তাঁকে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়। ১০ জন হয়ে যায় ইস্টবেঙ্গলও। ১১১ মিনিটে লাল-হলুদকে এগিয়ে দেন অধিনায়ক ক্লেটন সিলভা। ওড়িশা এফসি গোলকিপার পাস করেছিলেন নরেন্দ্রকে। বল ধরে রাখতে পারেননি নরেন্দ্র। তাঁর থেকে বল কেড়ে নিয়ে অনবদ্য গোল করলেন ক্লেটন।
আরও পড়ুন- অস্ট্রেলিয়ান ওপেন চ্যাম্পিয়ন হলেন ইয়ানিক সিনার