সাল ২০২৪- ঘরে ঘরে পোষ্যদের নিয়ে আলোচনা, আড্ডা এমনকি নিত্যদিনের যাপনে মানুষের সঙ্গে সমান অংশীদার তারা। এই তালিকায় সবার প্রথমে আসে কুকুর আর বিড়ালের (Cat Lovers) নাম। প্রথমজন ভীষণ প্রভুভক্ত আর দ্বিতীয়জন একেবারে অলস স্বার্থপর। তবুই এই প্রাণীদের যারা ভালবাসেন তাঁরা কিন্তু দোষ গুণ সব ভুলে শুধুই অকৃত্রিম স্নেহের পরশে ভরিয়ে রাখেন এদের। কিন্তু জানেন কী বিড়াল এমন এক প্রাণী যার কারণে পারস্যের সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয় মিশর (Egypt)? একেবারে গল্পের মতো মনে হলেও এটাই সত্যি। ঠিক কী ঘটেছিল সেটা জানতে গেলে অবশ্য ফিরতে হবে ফ্ল্যাশব্যাকের পাতায়।
সময়টা ছিল ৫২৫ খ্রীষ্টাব্দ – সে সময় মিশরের রাজা অর্থাৎ ফারাও (Pharaoh)ছিলেন তৃতীয় সামেটিক (Sametik III) । আচমকা আমাসিসের মৃত্যু হাওয়ায় বংশ পরম্পরায় সিংহাসনে বসতে হয়েছিল সামেটিকে। এই সময় মিশরের বেশ টালমাটাল অবস্থা চলছিল। আচেমেনিড সাম্রাজ্যের (পারসিয়ানদের) সঙ্গে বড় রকমের কূটনৈতিক ফাটল ধরে মিশরের। ফারাও তৃতীয় সামেটিক সেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছিলেন না। তাঁর বাবার মিত্রপক্ষরা মুখ ফিরিয়ে নিতেই বেশ বিপাকে পড়েন তৎকালীন রাজা। গ্রিক বন্ধুরাও আর সাহায্যের হাত বাড়াতে চাইছিলেন না। কোনও উপায় না দেখে অগত্যা পারস্যের রাজার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান তিনি। কিন্তু উলটো দিক থেকে মিত্রতা নয় বরং পিঠে ছুরি মারার পরিকল্পনা চলছিল। তাই মিশরের উপর হামলার ঘোষণা করে দিয়েছিল পারস্য সৈন্যরা।এই যুদ্ধের বিষয়ে আগে থেকেই অবগত ছিল সামেটিক। তাই তিনি বিচলিত না হয়ে সৈন্যদের বাহিনী তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এবং যুদ্ধ চলাকালীন এমন পরিস্থিতি আসে যে সেখানে মিশরীয়দের জয় ছিল শুধুই সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু এখানেই ‘ কাহানি মে টুইস্ট’ । পারস্যের রাজা জানতেন যে মিশরীয়রা কি হারে ধর্ম ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। তাই সেই দুর্বলতাকেই কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করে সামেটিকের প্রতিপক্ষরা।
আসলে যে সময় যুদ্ধ শুরু হয়েছিল সেসময় মিশরীয়রা বিড়াল দেবীর পূজা করতেন। কারণ এই ছোট্ট প্রাণী বিড়ালটির উপর মিশরবাসী এতটাই ভরসা করে ও ভালবেসে ফেলেছিলেন যে তারা বিড়ালকে শুধুমাত্র নিজের বন্ধু নয়, রীতিমতো দেবতার আসনে বসিয়েছিলেন। মিশরের বাসিন্দারা বিড়ালের প্রশংসা করার পাশাপাশি বিড়ালের মমি পর্যন্ত তৈরি করত। ব্যাস এরপরই ফন্দি আঁটেন পারস্যের রাজা। তিনি সৈন্যদের নির্দেশ দেন প্রত্যেকের ঢালে বিড়ালের ছবি আঁকতে। সেই ঢাল নিয়ে প্রতিপক্ষের সৈনিকরা যখন যুদ্ধে নেমেছিললেন তখন মিশরীয় সৈন্যরা তাদের শত্রুকে আঘাত করতে পারেননি। যুদ্ধের ময়দান থেকেই পালিয়ে গিয়েছিল মিশরীয় সৈন্যরা। এখানেই শেষ নয় নিজেদের কূটনৈতিক বুদ্ধির জোরে মিশরীয় সৈন্যদের সামনে কুকুর, ভেড়া সহ বেশ কয়েকটি প্রাণী হত্যা করে পারস্য।মিশরীয়দের সংস্কার বা বলা কুসংস্কার অনুযায়ী, এই সকল প্রাণী হত্যা দেখাও ছিল পাপ। তাই কার্যত জিতে যাওয়া যুদ্ধ হেরে রণে ভঙ্গ দেয় মিশরের সেনাবাহিনী।